_এক_
হঠাৎই নিঝুম রাতে সেই চিরচেনা আইডি হতে ছোট্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে ছেলেটির কাছে।
“এই যে মিঃ! কেমন আছেন? আমাকে তো ভুলেই বসেছেন এতোদিনে বোধহয়!”
টুং করে বেঁজে ওঠা আওয়াজে ছেলেটি চারকোণা বিশিষ্ট কম্পিউটার নামক জিনিসটির দিকে তাকাবে। পরক্ষণেই সে একদম স্তব্ধ হয়ে যাবে। কোনো এক অলৌকিক শক্তিতে চারপাশটা গুমোট ভাব ধারণ করবে। সব নিশ্চুপ হয়ে যাবে। সব। কিছুক্ষণ আগে জানালার বাহির হতে যেই ঝিঝি পোকাগুলো ডাকছিলো। তাদের ও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাবেনা। একটি বিড়াল বোধহয় ক্ষুধার জ্বালায় এতক্ষণ কাতরাচ্ছিলো। কিন্তু কি আজব! সেই ক্ষুধার্ত বিড়ালটিও যেনো হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে। সে যা দেখছে সেটা কি আদৌ সত্যি? নাকি নিতান্তই অবচেতন মনের কল্পনা। আনমনে হাতে চিমটি কাঁটতে গিয়ে একটু জোরেই চাপ দিয়ে ফেলবে সে। না, সে ব্যাথা পায়নি। পাবেই বা কেনো? বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝের দেয়াল যে সে একটু আগেই ভেদ করে ফেলে এসেছে। এটা যে তার নিছক কোনো কল্পনা নয়। এটা যে সত্যিই বাস্তব। চোখ হতে কিছু আনন্দ অশ্রু না জানিয়েই গাল গড়িয়ে পড়ে যাবে। হবেই না বা কেনো? তার বহুদিনের প্রতিক্ষার প্রহর যে আজ শেষ হয়েছে। যতোই হোক জীবনের প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি বলে কথা। ক্ষণিকের জন্য সে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারবেনা।
অপরপ্রান্তে মেয়েটি দেখবে তার পাঠানো ক্ষুদে বার্তাটি ওপাশ হতে দেখা হয়েছে। কিন্তু প্রতুত্তরে কিছুই বলেনি ছেলেটি। সহসাই মেয়েটির মনে এক টুকরো কালো মেঘ উঁকি দিবে। মনে মনে বলবে দোষ তো তারই ছিলো। ছেলেটির তো কোনো দোষ ছিলোনা সেদিন। একটি প্রশ্নের উত্তরই তো শুধু জানতে চেয়েছিলো। মেয়েটি কিবোর্ড নামক বস্তুটিতে পুণরায় তার হাতের স্পর্শ ছোয়ায়। নতুন উদ্যমে আবারো একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠায়। অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকে ছেলেটির উত্তরের আশায়।
“আরে আরে! আপনি আবার রাগ করতেও পারেন নাকি? এই অদ্ভুত জিনিসটা আবার কবে থেকে আপনার মাঝে উদয় হলো? শেষ যেদিন আমাদের কথা হয়েছিলো। তখন ও তো আপনার মাঝে কোনো রাগের ছিঁটেফোঁটাও দেখিনি। তবে আজ কেনো?”
অপরপ্রান্ত হতে এটা দেখে ছেলেটি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবেনা। এবার হয়তো সে একটু হেসেই ফেলবে। মনে মনে বলে উঠবে, “মেয়েটি ঠিক আগের মতোই আছে। একটুও বদলায়নি।”
কাঁপা কাঁপা হাতে উত্তর দিতে বসে বারবার ভুল জায়গায় চাপ দিয়ে বসবে সে। কিছুক্ষণ কিবোর্ডের বাটন নামক ছোটো ছোটো অংশ আর ব্যাকস্পেস বাটনের খেলা চলবে।
মেয়েটি আবারো দেখবে ছেলেটি তার দেওয়া ক্ষুদেবার্তা দেখা স্বত্বেও কোনো কিছুই বলছেনা। সে নাহয় একটা ভুল করেছিলো। তাই বলে এভাবে শাস্তি দিতে হবে তাকে? এবার সে অভিমান মাখা কিছু কথা বলে বসবে ছেলেটিকে।
“আচ্ছা, কথা বলতে হবেনা আমার সাথে। কিছু সমস্যার কারণে আপনার সাথে এতোদিন কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি হারিয়ে যাইনি। আমি সত্যি অনেক দুঃখিত। আপনি কি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছেন?”
এবার ছেলেটি কোনো ভুল করেনা। খট খট শব্দের ঝংকার তুলে টাইপ করতে থাকবে সে। এবার আর কিছুক্ষণ আগের মতো হাত কাঁপবেনা তার।
“কষ্ট? হা হা। আচ্ছা কষ্ট কি বলতে পারো? এর সঠিক ব্যাখা কি তুমি দিতে পারো?”
ওপাশ হতে মেয়েটি প্রতুত্তরে জানাবে,
“এই যে! এটা তো আমি আপনাকে আগে বলতাম। আপনি আবার বলা শুরু করলেন কবে থেকে?”
ছেলেটি তড়িৎ গতিতে প্রতুত্তরে বলবে,
“যেদিন হতে বুঝতে পারি আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। ঠিক সেদিন হতে।”
মেয়েটি একদম থ হয়ে যাবে। এমন উত্তরের জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। কিছু না বলেই অফলাইনে চলে যা সে। কিই বা এমন বলবে? বলার মতো কোনো উত্তর যে নেই তার কাছে।
ছেলেটি আবার ও দ্বিধাগ্রস্থতায় ভুগবে। সে কি আবার ও ভুল করলো? কিন্তু না বলেও তো কোনো উপায় ছিলো না।
_দুই_
ঘুম হতে হকচকিয়ে উঠে অরিন। এই ঠান্ডার মাঝেও দরদর করে ঘামছে। প্রায় সময়ই এমন হয় তার সাথে। গতো কয়েক মাস হলো মাঝে মাঝেই এই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গে অরিনের। এর শুরু হয়েছিলো যেদিন থেকে অরিন অর্ণবের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
রিমঝিম আওয়াজে জানালার পর্দাটুকু এক পাশে সরিয়ে দেখতে পায় বৃষ্টি হচ্ছে। এই শীতের মাঝে বৃষ্টি এই বছরের জন্য প্রথমবার। গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দার এক কোণে গিয়ে দাড়ায় অরিন। বৃষ্টিবিলাস করতে খুব ইচ্ছে করছে তার। কোনো একদিন কথার ছলে অর্ণব বলেছিলো দুজনে মিলে একসাথে বৃষ্টিবিলাস করবে। সেদিন অরিন খুব হেঁসেছিলো। লজ্জ্বায় একদম লাল হয়ে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস ফোনে কথা বলার সময় কেউ কাউকে দেখতে পায়না। অবশ্য ভিডিও কল হলে সেটা অন্য কথা ছিলো। তবে অরিন কখনও সেই সুযোগ দিলেই না। একবার অর্ণবের অনেক অনুরোধের পর অরিন শুধুমাত্র তার আঁখিযুগলের ছবি পাঠিয়েছিলো। এটুকুতেই সীমাবদ্ধ রেখেছে সে। বৃষ্টির ছাঁট ঠিকরে ঠিকরে এসে অরিনকে আলতো করে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অরিন দুই হাত প্রসারিত করে সম্মুখপানে বাড়িয়ে দিলো। শীতের এই হিমশীতল ঠান্ডার প্রকোপ যেনো অরিনের মাঝে কোনো প্রভাবই ফেলছে না।
_তিন_
ডিং ডং দেয়ালঘড়ির শব্দে অর্ণব কল্পনার ঘোর হতে বেরিয়ে আসে। আজকেও রাতের এই নিকশ কালো অন্ধকারে স্মৃতিচারণ করছিলো সে। সাথে ছিলো হরেক রকমের চিন্তা। এই চিন্তা আর স্মৃতিচারণ মস্তিষ্কের মাঝে জট পাকিয়ে ফেলতে ফেলতে কখন যে সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আজকেও ঘোরের মাঝে তার আর অরিনের কথোপকথনের দৃশ্যপট দেখতে পেয়েছে সে। অর্ণব যখনই মাথায় শত রকমের চিন্তা থাকা স্বত্বেও স্মৃতিচারণ করতে বসে তখনই সে অরিন আর নিজেকে নিয়ে এই কথোপকথনের দৃশ্যপট দেখতে পায়। অর্ণবের কানে আবারো বাবার সেই কন্ঠ ভেসে আসে।
“আমি আর বেশীদিন বাঁচবোনা অর্ণব। তুই আমার একমাত্র ছেলে। মারা যাওয়ার আগে অন্তত বৌমার মুখটুকু দেখে যেতে চাই।”
“কিন্তু বাবা।”
“কোনো কিন্তু নয়। এই নিয়ে অনেকবার তুই বিয়ের ব্যাপার এড়িয়ে গেছিস। কিন্তু আর নয়। এবার তোকে আমার পছন্দ করা মেয়েটিকে বিয়ে করতে হবে।”
“বাবা, আমাকে আরেকটু সময় দাও।”
“ব্যস। আর কোনো কথা নয়। এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশন।”
বাবার সেই অগ্নিদৃষ্টি দেখার পর আর কিছু বলার সাহস পায়নি অর্ণব। ছোটোবেলায় অর্ণবের মা মারা গিয়েছে। এরপর হতে বাবাই তার সব। এপর্যন্ত কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেনি অর্ণবের। শেষ বয়সে এসে তাই বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারেনি অর্ণব। রাজি হয়ে গিয়েছে সে বাবার ঠিক করা মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। কি বা আর করবে সে?
পড়ালেখা পাঠ চুকিয়ে চাকুরিজীবনে পদার্পণ করে। রাতে অবসর সময় কাটাতো ফেসবুকে। হঠাৎই একদিন পরিচয় হয়ে যায় অরিন নামের মেয়েটির সাথে। দিনের পর দিন কথা আদান-প্রদান, অনুভূতি প্রকাশ করা, দুজনের মাঝে বোঝাবোঝি। অদ্ভুতভাবে মিলে যেতে লাগলো সব। মনের গভীরে কারা যেন মায়াবী রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে। হৃদয়ের ছোট্ট তরীটিতে যেন প্রেমের পাল উড়ে গিয়ে ভালোবাসার অমৃত সাগরে তরতর করে এগিয়ে যেতে লাগলো। বাসা থেকে দিনকে দিন বিয়ের চাপ বাড়তে থাকায় সিদ্ধান্ত নেয় অরিনকে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। এরপরেই পারিবারিক ভাবে বিয়ের পাঠ ও চুকিয়ে ফেলবে। কিন্তু যেদিনই অর্ণব অরিনকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। সেদিন থেকেই অরিনের সাথে অর্ণবের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। না পায় ফেসবুকে। না পায় ফোনে। অরিন নিজের সম্বন্ধে খুব কমই জানিয়েছিলো অর্ণবকে। অর্ণব ও বেশি আগ্রহ দেখায়নি। অরিনকে হারিয়ে অর্ণব পাগলের মতো হয়ে যায়। সে শুধু জানে অরিন ও তার শহরেই থাকে। আর কোনো এক ভার্সিটিতে চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করছে। কিন্তু এটুকু তথ্যে আর কি বা হবে? তাই অপেক্ষা করতে থাকে সে। কিন্তু এই অপেক্ষার পর যেনো শেষ হওয়ার নয়।
_চার_
অরিন আজ অনেকদিন পর খুব সুন্দর করে সেজেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই গাড়িটি চলে আসে। যেটায় করে অরিন বিয়ে বাড়ি যাবে। একের পর এক গাড়ি ক্রস করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। অরিন গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার ও স্মৃতির পাতায় ডুবে যায়।
প্রতিদিনের মতো সেদিন ও পড়ালেখা শেষ করে ঘুমানোর বন্দোবস্ত করছিলো অরিন। হঠাৎই ফোনের স্ক্রিনে অর্ণবের নাম ভেসে উঠে। কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই হঠাৎ করে অর্ণব তাকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। অরিন ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। যেই ভয় করছিলো সেটাই হয়েছে। সেদিন অর্ণবের ভালোবাসো কিনা প্রশ্নের উত্তর আর তাকে দেওয়া হয়নি। সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় অরিন। তার যে কষ্ট হয়নি এমনটি কিন্তু নয়। কতো রাত যে শুধু বোবা কান্না কেঁদে গিয়েছে। তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এছাড়া আর কি বা করার ছিলো তার? অরিনকে তার অবসরপ্রাপ্ত বাবা আর অসুস্থ মায়ের কথা ভাবতে হয়েছে। ভাবতে হয়েছে তার ছোট ছোট দুই ভাই-বোনের কথাও। এতো কিছুর পর আর অরিনের পক্ষে অর্ণবের সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি।
গাড়ির ব্রেক করার শব্দে অরিন তার ভাবনার বেড়াজাল হতে বেড়িয়ে আসে।
বিয়ে বাড়িতে এসে পড়েছে অরিন। আজ অরিনের বান্ধবী লিপির বিয়ে। পুরো বিয়ে বাড়ি কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে দেখে এসে বসলো লিপির কাছে। কিছুক্ষণ খুনসুটি করার পর হঠাৎ শুনতে পায় বরপক্ষ এসেছে। কিন্তু সবার সাথে সেখানে গিয়ে সে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায়। এ যে আর কেউ নয়। স্বয়ং অর্ণব। অরিনের চোখ ছলছল করছে। যেকোনো সময়ই এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। মনে মনে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে অরিন। অর্ণব অরিনকে কখনও দেখেনি। সেই অনুযায়ী তাকে চেনার ও কথা না। তাই তাকে যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকতে হবে।
অর্ণব আসার পরেই মেয়েটিকে দেখার পর কেমন যেনো চেনা চেনা মনে হয় তার কাছে। কোথায় যেনো মেয়েটিকে দেখছে সে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মাঝেই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাবে। হঠাৎই উঠে দাড়ায় অর্ণব। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই। যদিও বা সেদিকে অর্ণবের কোনো খেয়াল নেই। অর্ণব শুধু এখন অরিনকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। হ্যাঁ, অর্ণব সেই চোখ দুটোকে আজ ও ভুলতে পারেনি। অর্ণবের ভুল হওয়ার কথা নয়। ওই মেয়েটিই অর্ণবের অরিন। অবশেষে সে খুঁজে পেয়েছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে।
_পাঁচ_
“অর্ণব! এই অর্ণব! তোর না আজ ল্যাব টেস্ট হওয়ার কথা। এখনও ঘুমিয়ে আছিস কেনো? উঠ!”
বাবার ডাকে আড়মোড় ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে অর্ণব। পুরো মাথা ভারী হয়ে আছে। মাথায় অনেক জট পাকিয়ে আছে। এর একটা সমাধান করতে হবে। তাড়াতাড়ি করে নাস্তা সেড়ে বেড়িয়ে পড়লো ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। তাড়াহুরোয় যে মোবাইলটা ফেলে রেখে গিয়েছে সেদিকে খেয়ালই নেই অর্ণবের। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গভীর ভাবে ভাবছে অর্ণব। তার সাথে এসব কি হচ্ছে? আজকে নিয়ে পর পর তিনদিন একই স্বপ্ন দেখেছে সে। প্রথম দুইদিন এমনটা হওয়ার পর ভেবেছিলো আপনা-আপনি ই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিসের কি। প্রথমে একটা অদ্ভুত কথোপকথন। তারপর অরিন আর তার নিজের কিসব আজগুবে কাহিনী। এসবের কোনো মানে হয়? এর একটি সমাধান করতেই হবে আজকে। অর্ণব সবে মাত্র তৃতীয় বর্ষে। অরিন তার বেস্টফ্রেন্ড। আর তাকেই নিয়ে কিনা এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছে। তাও আবার পরপর তিনদিন। আজকেই সব খুলে বলতে হবে অরিনকে। এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন একটা গাড়ি অর্ণবের দিকে ধেয়ে আসছে। অর্ণব খেয়ালই করেনি।
_ছয়_
অরিন সেই কখন থেকে কল দিয়ে যাচ্ছে অর্ণবকে। রিং হচ্ছে তো হচ্ছে। রিসিভ করার কোনো নাম গন্ধই নেই। অর্ণবকে যে তার খুব জরুরী কিছু কথা বলতে হবে। আজকে নিয়ে তিনদিন হলো সে একই স্বপ্ন দেখেছে অর্ণব আর তাকে নিয়ে। কেনো যেনো খুব ভয় হচ্ছে অরিনের। কিন্তু এই অর্ণব ফোনটা রিসিভ করছেনা কেনো?
কিছুটা দূর হতে একটা ট্রাককে ছুটে আসতে দেখলো অরিন। কিন্তু অরিনের থেকে আট ফুট দূরে থাকতেই হঠাৎ করে ট্রাকটি ঘুরে অরিনের দিকে তীব্র বেগে ছুটে আসতে থাকে। ঘটনার আকস্মিতায় অরিন যে সরে গিয়ে অন্যপাশে চলে যাবে সেই বোধটুকুও ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে ফেলে।
পরের দিন পত্রিকার পাতায় বিভিন্ন খবরের মাঝে দুটি লাইন প্রায় সবাইকেই আকৃষ্ট করে।
“সড়ক দূর্ঘটনায় একই ভার্সিটির দুইজন শিক্ষার্থী নিহত। জানা গিয়েছে দুজন ড্রাইভারই দূর্ঘটনা ঘটার সময় তাদের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।”
_সাত_
ঘুম ভেঙ্গে যায় অরিনের। হৃদপিন্ডটা যেনো জোরে জোরে পাম্প করছে। বেশ কিছুক্ষণ লাগলো অরিনের বুঝতে যে এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো। চিনেনা জানেনা এমন কাউকে নিয়েই বা কেনো এমন স্বপ্ন দেখলো। এরকম অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন কেনো দেখলো সে ঠাহর করতে পারলোনা। ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে আবার ও বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। অরিন জানেনা যে ঠিক একই দুঃস্বপ্ন এই শহরে আরো একজন দেখেছে ঠিক একটু আগেই। তার নাম অর্ণব!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৭