গভীর রাত। সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে চারদিকে। অন্ধকার যেনো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমাগত বেড়েই চলছে। যতো সময় যাচ্ছে ততই যেনো ঘনীভূত হচ্ছে অন্ধকারের মাত্রা। সিগারেটের প্যাকেট হতে একটা শলা বের করে জ্বালিয়ে টান মারলাম। সিগারেটের ধোঁয়া পাক খেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। পাক খাচ্ছে, বিস্তৃত হচ্ছে, ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর তারপরেই মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসের মাঝে।
মন বলছে আজ অনেক বড় একটা ডিল পাবো। সময়টুকু ভালোভাবেই কাটানো যাবে। এমনটা বুঝতে পারার কারণ আর সব সাধারণ মানুষের চেয়ে আমার ইনট্যুইশন শক্তি একটু বেশীই প্রখর। কিছু কিছু ব্যাপার আগেই বুঝে যাই। বিছানার উপর বসে ল্যাপটপটা হাতে নিলাম। ল্যাপটপ অন হতেই ডিরেক্টলি টর ওপেন করলাম। কারণ আমি জানি একটা মেইল আমার জন্য অপেক্ষা করছে এখানে। আমার সিকিউরড মেইলে ঢুকে হেসে উঠলাম। হ্যাঁ। সত্যিই নতুন একটি মেইল এসেছে। মেইলটা ওপেন করে পড়েই আর অপেক্ষা করলামনা। ব্রাউজারে নতুন আরেকটা উইন্ডো ওপেন করলাম আমি। ইমেইল আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করলাম। স্ক্রিমকিউ ব্রাউজারে “সিক্রেট এজেন্সি অফ ক্র্যাকার” ওয়েবসাইটে আমার প্রোফাইল শো করছে।
-
“সিক্রেট এজেন্সি অফ ক্র্যাকার” একটি স্যোশাল ওয়েবসাইট, সংক্ষেপে ‘এসএওসি’। অনেকটা ফেসবুকের মতো হলেও পার্থক্য আছে। এখানে স্যোশাল কোনো কাজ হয় না। হয় বিভিন্ন দেশের অনলাইনে ব্যাংক ডাকাতি বা ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড চুরি করা এসব কাজ। বিশ্বের বিখ্যাত সব ক্র্যাকাররা আর তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ডিপ ওয়েবসাইট এটা। এখানে প্রতিদিন শুধু ক্র্যাকিং এর জন্য ডিল নেয়া হয়।
মূলত এটা একটা সাইবার ক্রাইম বাজার। এই ওয়েবসাইটটা অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো। যেকোনো ব্রাউজার দিয়ে এই সাইটে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র বিশেষভাবে তৈরি ব্রাউজার দিয়েই এই সাইটে প্রবেশ করা যায়। আর তার জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ টাকা। বর্তমান বিশ্বে হ্যাকারদের কথা কম-বেশি সবাই জানে। কিন্তু ক্র্যাকাররা আমাদের সমাজে অপরিচিত। হ্যাকার ও ক্র্যাকার দুই দলই মূলতো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সিস্টেমের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। তবে দুই দলের কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে।
হ্যাকারদের কথা এলেই অধিকাংশ মানুষই ভাবে কিছু প্রতিভাবান মানুষের কথা, যারা সব সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ওয়েবে থাকা তথ্য নষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু টেকনিক্যালি এটাকে ক্র্যাকিং বলে। আসলে টেকনিক্যালি হ্যাকিং বলতে যা বোঝায় তা চুরি করা নয়, বরং চোরের হাত থেকে সিষ্টেমকে রক্ষার জন্য সিকিউরিটি তৈরী করা এবং নিয়মিত তার উন্নতি সাধন করা। অর্থাৎ হ্যাকাররা সত্যিকার অর্থে প্রোগ্রামের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকে। অন্যদিকে যেসব প্রোগ্রামার ক্র্যাকিং তথা বিভিন্ন সিস্টেমে ঢুকে সেটির অনেক কিছু পরিবর্তন করে কম্পিউটার ভাইরাস দিয়ে সব তথ্য মুছে দেয়। অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাক করে তার বিনিময়ে টাকা দাবি করে। তাদেরকে টেকনিক্যালি বলা হয় ক্র্যাকার।
-
এবার আমার পরিচয় দেওয়া যাক। আমি নীল, একজন সফটওয়্যার ইন্ঞ্জিনিয়ার। আসলে এই কাজটিকে আমি আমার কাভার হিসেবে রেখে দিয়েছি। যাতে করে বাস্তব জীবনে কেউ আমাকে নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ করতে না পারে। আসলে আমি পেশায় একজন ক্র্যাকার। বলতে গেলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্র্যাকারদের একজন। যে কেউ আমাকে হায়ার করতে পারে না। আমি শুধুমাত্র জটিলতম কাজগুলোই করি। তাছাড়া আমার নিজস্ব রেট আছে। যা সবার পক্ষে খরচ করে কুলিয়ে উঠা সম্ভব নয়।
কিছুক্ষণ আগে যেই মেইলটি এসেছিলো। সেখানে একটা হাইপ্রোফাইলের কাজের জন্য ডাকা হয়েছে আমাকে। এবারের অ্যামাউন্ট আমার এ পর্যন্ত করা কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হাইস্ট পেমেন্ট অফার। কাজটাও সেরকমই জটিল। সুইস ব্যাংক এর সিস্টেমে ঢুকে তার সব তথ্য চুরি করে বেরিয়ে আসতে হবে, আর তার সাথে পুরো সিস্টেমটি ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তার উপর বিশ্বের শীর্ষ হ্যাকিং গ্রুপ ‘বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস’ এর নিরাপত্তা দিচ্ছে। যারা কিনা বিশ্বের ১১৫০ থেকে ১২০০ হ্যাকিং টিমের মধ্যে বর্তমানে এক নম্বর স্থান দখল করে আছে। তাই কাজটাও আরো বেশি জটিল হয়ে গেছে।
কিন্তু আমি এরকম জটিল কাজই পছন্দ করি। কাজ জটিল কিংবা রিস্ক না হলে কাজ করে মজা পাওয়া যায়না। তাই ডিলারকে হ্যাঁ বলে দিলাম।
-ইয়েস, আই ক্যান।
-সো, ডিল?
-ইয়াপ, ডিল। আই উইল ডু ইট।
-ওকে, আই অ্যাম ট্রান্সফারিং দ্য অ্যামাউন্ট।
-ওকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো।
-ডান।
আবার নতুন একটা ট্যাব ওপেন করে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লগিন করলাম। অ্যাকাউন্ট চেক করেই মৃদু হেসে উঠলাম। ততক্ষণাৎ ‘এসএওসি’ এর ম্যাসেজে টাইপ করলাম।
-ওকে, গট ইট।
-বেস্ট অফ লাক এন্ড থ্যাংক্স।
-এনিটাইম।
শুভ কাজে দেরী করতে নেই। তাই এই মধ্যরাতেই ব্যাংক এর খুটিনাটি জানতে নেটে ঢুকে পড়লাম।
-
গত কয়েকদিনে সিষ্টেমের বেসিক ইনফরমেশন মোটামুটি বের করে ফেলেছি আমি। এটুকু করতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে। সিস্টেমটা পুরো এক গ্রে হ্যাট টিম মিলে তৈরি করলেও। পুরো সিষ্টেমের পাসওয়ার্ড শুধুমাত্র দুজন মেইন প্রোগ্রামারই জানে। এমন কি ব্যাঙ্কের মালিকের ও এই সিস্টেমের পাসওয়ার্ড জানা নেই। তাছাড়া পাসওয়ার্ডও বেশ জটিল। নিরানব্বই ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড। ইংরেজী বর্ণমালার ছাব্বিশটি বর্ণ আর দশটি নাম্বারের সমন্বয়ে তৈরী পাসওয়ার্ডটি ব্রেক করা নিশ্চয়ই সাধারন কোন কাজ নয়। কয়েক কোটি কম্বিনেশন হতে পারে।
তাছাড়া আরো জটিল একটা সিকিউরিটি লেয়ার তৈরী করে রেখেছে তারা। তাদের তৈরি করা নিজস্ব ব্রাউজার ছাড়া অন্য কোনো ব্রাউজার দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। অনেকটা আমাদের এসওএসি সিস্টেমের মতো। এরপরেও যদি এতো সব বাধা পেরিয়ে কোনোভাবে অন্য কোনো বাহিরের ব্রাউজার দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করা যায়। অটোমেটিকলি পুরোনো পাসওয়ার্ডটা রিমুভ হয়ে নতুন একটি পাসওয়ার্ড অ্যাড হয়ে যাবে সেখানে। যার ফলে কাজটা আরো অনেক কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। পাসওয়ার্ড এর ব্যাপারটা একটু খাটলেই পারা যাবে।
-
কিন্তু এই কাজটি পুরোপুরি সম্পূর্ণ করার জন্য দরকার সিষ্টেমের সাথে মানানসই কয়েকটা স্পেশাল সাবপ্রোগ্রাম। যেই সাবপ্রোগ্রাম দ্বারা অন্য কোনো ব্রাউজার দিয়ে সিস্টেমে প্রবেশ করলে পাসওয়ার্ড ব্রেক করবে না। এবং তার সাথে সাথে ব্রাউজার ও আইডেন্টিফাইড করবে না।আর, আরেকটা সাবপ্রোগ্রাম বানাতে হবে, যেটা হুবুহু ওদের সিস্টেমের সাবপ্রোগ্রামের মতো হবে। অর্থাৎ আমার সিস্টেম বাদে নতুন কেউ যদি ওদের সিস্টেমে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তবে ইরর দেখাবে।
আর বাকি কাজগুলো আমার মতো ক্র্যাকারের জন্য তেমন কোনো ব্যাপার নাহ। নিজ আইপি এড্রেস লুকানোর জন্য একটা প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। যা আমার তৈরিকৃত সফটওয়্যার দিয়ে সহজেই তৈরি করে ফেলা যাবে। শুধু সাবপ্রোগ্রাম নিয়েই যতো ঝামেলা। এটা মূলত কম্পিউটার ইন্ঞ্জিনিয়ারদের কাজ। তাছাড়া এর আগে আমার এরকম স্পেশাল সাবপ্রোগ্রাম কোনো কাজে দরকার ও হয়নি। যার দরুণ এই ব্যাপারে আমি খুব একটা পারদর্শী নই। আর এজন্যই আমার দরকার একজন পার্টনার।
-
পার্টনার হিসেবে কাউকে সিলেক্ট করতে হলে অনেক ভেবেচিন্তে আগাতে হবে আমাকে। কারণ যাকেই পার্টনার করবো তাকে আমার এই ক্র্যাকিং এর বিষয়ে পুরোপুরি খুলে বলতে হবে। আর এসব ফাঁস করতে গিয়ে অতি সহজেই আমার আসল রূপ সে জেনে যাবে। অনেক ভেবেচিন্তে রুদ্রকেই এই কাজের জন্য পারফেক্ট মনে করলাম। রুদ্র একজন কম্পিউটার ইন্ঞ্জিনিয়ার। প্লাস পয়েন্ট হলো ও আমার ভার্সিটি লাইফের ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলো। এখন ওর সাথে তেমন যোগাযোগ না থাকলেও। ওর স্বভাব সম্পর্কে আমার ধারণা এক বিন্দু ও নড়চর হয়নি।
রুদ্র টাকার পাগল। টাকার জন্য ও খুন ও করতে পারে। যতোদূর মনে হচ্ছে ওর স্বভাব এখনও বদলায়নি। আর সত্যিই হলো ও তাই। প্রথমে ওকে সব খুলে বলার পর যেনো ও ৪৪০ ভোল্টেজের বিদ্যুতের শক খায়। কিছুটা সংকোচ করলেও যখন এর পরিবর্তে বিশাল অঙ্কের টাকার অফার দিলাম। তখন কিছুক্ষণ কি যেনো ভেবে রাজি হয়ে গেলো ও।
-
বেশ কিছুদিন পর....
অবশেষে আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম আর সাব-প্রোগ্রামগুলো তৈরী করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সাব-প্রোগ্রামগুলো বানাতে অবশ্য অনেক ধকল সইতে হয়েছে। প্রথমে সাব-প্রোগ্রামগুলোর বাগ ঠিক করতে হয়েছে। সেগুলোর সিকিউরিটির জন্য আরো কিছু ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়েছে। সব শেষে এখন আমরা লাস্ট স্টেপের জন্য তৈরি। কম্পিউটার টেবিলটার সামনে আমরা এখন বসে আছি। দুজনই অনেক এক্সাইটেড। তবে স্বভাবতই রুদ্র একটু বেশিই এক্সাইটেড।
'আর ইয়্যু রেডি?', রুদ্রকে বললাম।
'ইয়েপ।'
'দ্যান স্টার্ট।', বলেই দুজন দুজনের দিকে মৃদু হেসে কাজ শুরু করলাম।
সামনে একটি মনিটর। তার সাথে রয়েছে আরো দুটি ল্যাপটপ। একটি আমার ও আরেকটি রুদ্রের। সবগুলোই একটি আরেকটির সাথে কানেক্ট করা। রুদ্র সাব-প্রোগ্রামগুলো এক এক করে ব্যাঙ্কের সিষ্টেমের সাথে জোড়া লাগাচ্ছে।সিষ্টেমের পাসওয়ার্ড পেতে খুব একটা দেরী হলো না। আমাদের তৈরী সাব-প্রোগ্রামেরসাহায্যে সহজেই আইডেন্টিফাইড করে ফেললাম। এবার আমাদের আসল কাজ শুরু। আমাদের ব্রাউজার দিয়ে লগিন হয়ে গেলেই হয় ।দুরু দুরু মনে পাসওয়ার্ড এন্টার করে লগিন বাটনে ক্লিক করলাম। বুকের মাঝে কেউ যেন হাতুরি দিয়ে বারি মারছে।
হঠাৎই পিসির স্ক্রিনে 'সিস্টেম ইরোর' লেখা ভেসে উঠলো। এটা দেখে আমাদের দুজনের মুখই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।
'হোয়াট দ্য হেল!, উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলাম, 'ইটস জাস্ট ইমপসিবল।'
রুদ্র তাড়াতাড়ি সাব প্রোগ্রামের বাক চেক করতে লাগল।
'ট্রাই এগেইন। কুইক!', রুদ্র বলার সাথে সাথেই আবার পাসওয়ার্ড এন্টার করে লগিন বাটনে ক্লিক করলাম। এবার কোনো ধরনের ব্যাঘাত ছাড়াই প্রোগ্রামের ভেতর প্রবেশ করতে পারলাম। দুজনেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
'ইয়েসসস!', বলে উঠল রুদ্র খুশীর সমস্বরে।
বেশি দেরি করা যাবেনা। তাই আবারো দুজনে কাজে নেমে পড়লাম। একের পর এক সিস্টেমে যাচ্ছি আর ফাইল হোল করছি। ঘন্টাখানেক এর মধ্যেই কাঙ্খিত তথ্য ডাউনলোড করা শেষ হয়ে গেলো। মূল কাজ আপাতত শেষ। এখন শুধু সিস্টেমটা ধ্বংস করে দেওয়া বাকি।
-
আমরা দুজনই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। রুদ্র যেনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে এমন একটা ভাব নিয়ে আছে। যদিও ওর মাঝে স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছি আমি। চেয়ারে হেলান দিয়ে বললাম, 'কিরে রুদ্র! তুই মনে হয় কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত। কোনো সমস্যা?'
'আরে নাহ। কি যে বলিস না তুই। অবশেষে আমরা আমাদের মিশনে সাকসেসফুল হলাম। তাই খুব খুশি লাগতেছে।', আমার সামনে এসে বসে বললো রুদ্র।
'এক্স্যাক্টলি',বলেই হেসে উঠলাম।
আমার সাথে রুদ্র ও জোরে হেসে উঠল।
.‘এই খুশীতে তো একটু চলে নাকি!’, হেসে বলে উঠল রুদ্র।
‘কি চলবে?’, কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আমার কাছে চেয়ার টেনে এসে বসে একটা ক্যান ধরিয়ে দিলো হাতে। এনার্জি ড্রিংকের ক্যান এগুলো।
বললো,‘এটার কথাই বলছিলাম।’
‘ড্রিংক?’ প্রশ্ন করলাম আমি, ‘এগুলো কখন আনলি?’
‘এখানে আসার সময় নিয়ে এসেছিলাম।’, নিজে একটা ক্যান হাতে তুলে নিতে নিতে বললো রুদ্র।
‘ও আচ্ছা।’, হঠাৎ টেবিলে পিসির দিকে চোখ পড়তেই বললাম ওকে, ‘কিরে কাজ শেষ। এখনও অফলাইন করিস নাই কেনো?’
‘আরেহ। একদমই ভুলে গিয়েছি। দাড়া। এক্ষণি আসতেছি।’, বলেই ক্যানটা রেখে চলে গেলো রুদ্র।
ও ফিরে আসতেই ক্যানটা খুলে উঁচু করে ধরলাম আমি, ‘চিয়ার্স!’
ওর হাতের ক্যানটাও উঁচু করে ধরলো ও, ‘চিয়ার্স!’
মৃদু হেসে ক্যানে চুমুক দিলাম আমি। চুমুক দিয়েই ধাক্কা খেলাম একটা। ক্যানটা টেবিলের উপর রেখে বললাম,‘ দোস্ত ভেতরে অ্যালকোহল মিশিয়ে রাখছোস!!’
হাসতে হাসতে বললো ও, ‘এতক্ষণে সেটা টের পাইলি। আমি তো ভাবছিলাম আরো আগেই বুঝে যাবি। তোর সেই ইনট্যুইশন শক্তি কি নিস্তেজ হয়ে গেছে নাকি?’
‘শালা,’ মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে আমার মুখে, ‘ভাল হবি না তুই এই জীবনে।’
‘এ আর নতুন কি!’, হঠাত করেই হাসি থামিয়ে রুদ্র বলে উঠলো, ‘যাই হোক, অনেক তো মজা করলাম। এখন কিছু সিরিয়াস কথা বলে ফেলি।’
‘সোজাসোজি বলছি, তোর আয়ু আর বেশীক্ষণ নেই নীল। তুই আজ, এখানে, কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাবি। তারপর তোর এই বিজনেসটাকে পুরোপুরি আমার নিজের করে নেবো আমি।’
‘এসব তুই কি বলতেছিস রুদ্র। আর ইয়্যু ম্যাড?’, রুদ্রের দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম আমি।
‘আই অ্যাম ফুললি ওকে। তোকে আমি যেই ক্যানটি দিয়েছিলাম। সেখানে আসলে বিষাক্ত এনড্রোমেডোটক্সিন ছিলো।’, মুচকি হেসে বললো রুদ্র।
-
‘এনড্রোমেডোটক্সিন হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের গতি যেমন বাড়িয়ে দেয়, তেমনি বিপজ্জনকভাবে ধীরও করে দেয়। মানুষের হৃৎপিণ্ডে একটা প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার রয়েছে। যত বৈদ্যুতিক স্পন্দন আসে তার অর্ধেকই ওই প্রবেশদ্বারটিতে আটকে যায়। এই বিষে মানুষের মধ্যে ওলফ-পারকিনসন-হোয়াইট সিনড্রোম দেখা দেয়। এই লক্ষণটি ওই প্রবেশদ্বারকে ধসিয়ে দেয় এবং সমস্ত বৈদ্যুতিক পালস গিয়ে হৃৎপিণ্ডে আছড়ে পড়ে। ফলাফল? আকস্মিক হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু! মাত্র দুই থেকে তিনঘন্টার মধ্যে টক্সিন পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে।’
কেউ জানতেও পারবে না কিভাবে মরলি তুই। সবাই ভাববে তুই হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছিস।
‘তুই আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারলি?’, অনেক কষ্টে মুখ দিয়ে শব্দগুলো বের করলাম আমি।
‘হ্যাঁ পারলাম!’, শান্ত কন্ঠে জবাব দেয় রুদ্র। ‘আমি টাকার জন্য সবকিছু করতে পারি। তোর মৃত্যুর পর তোর এই বিজনেস পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে। তোর হয়ে আমি কাজ করবো আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়ার্ল্ডে। আর তোর ল্যাপটপ থেকে পাসওয়ার্ড ব্রেক করে তোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়াটা নিশ্চয়ই কঠিন কোনো কাজ হবেনা আমার জন্য? খেলাটা শুরু করেছিলি তুই নীল। আর শেষ করবো আমি।’
রুদ্র এটুকু বলতে না বলতেই মেঝেতে ঢলে পড়লাম আমি।
রুদ্র আমার পালস চেক করে জোরে হেসে উঠলো।
‘তোর লাশের ব্যাবস্থা পরে করবো’, বলে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যাপটপে সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকলো।
হঠাৎই পেছনে খুঁট করে কিছু একটার শব্দ শুনে ঘুরে তাকালো রুদ্র। আমাকে ওর সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একদম অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ও। ঠিক আমার মতোই বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রুদ্র বললো, ‘নীল! ত্তু ত্তু তুই!’
‘হ্যাঁ আমি’ বলেই বা হাতের একটা আপারকাট খেলে দিলাম ওর উপর। ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো রুদ্র। ও উঠে দাড়াতে না দাড়াতেই দ্রুতবেগে এগিয়ে গিয়ে আরেকটা ডান হাতি ঘুষি বসিয়ে দিলাম ওর বুক বরাবর। আঘাত সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে অবর্ণনীয় কষ্টে কুকড়ে উঠলো রুদ্র।
‘আমাকে জীবিত দেখে অবাক হয়েছিস। তাইনা?’ মৃদু হেসে বললাম আমি, ‘তুই যেমন সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করিস। আমিও তেমন সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করি। আজ তোর জীবনের শেষ দিন। একটু পরেই মারা যাবি তুই। আর হ্যাঁ। আমাকে মারা এতো সোজা না রুদ্র। কি ভেবেছিলি? ক্র্যাকার হওয়া এতো সোজা? অনেক কষ্ট করতে হয়, অনেক মাথা ঘামাতে হয় ক্র্যাকিং করতে। যা তোকে দিয়ে হবে না।’
‘কিন্তু?’ মাথা চেপে ধরলো ও।, ‘কিভাবে?’
‘হা হা হা,’ নিজের মনে হেসে উঠলাম আমি, ‘এখনো বুঝতে পারিস নাই? তোকে আমি এমনিতেও মেরে ফেলতাম। কারণ আমি আমার কাজের কোনো ধরনের প্রমাণ রাখিনা। কাজটা তুই আরো সহজ করে দিলি। আমার হাতে ক্যান ধরিয়ে দেওয়ার পর তুই পিসিতে অফলাইনে যাওয়ার জন্য চলে যাস। আর তুই তো জানিসই আমার ইনট্যুইশন শক্তি সম্পর্কে। তোর এই ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিলো। তুই ফিরে আসার আগেই আমি আমাদের দুজনের ক্যান পাল্টিয়ে নেই। এরপরে তো এতোক্ষণে বুঝেই গেছিস। মরে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিলো অভিনয়। তোর আনা বিষাক্ত টক্সিনে তুইই মারা যাবি এখন।’
‘ইয়্যু ব্লাডি’, কথাটা শেষ করতে পারলো না রুদ্র। হঠাতই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো রুদ্রের। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠলো ওর। অনবরত কাঁপতে লাগলো ও হিষ্টিরিয়াগ্রস্তের মতো। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেলো রুদ্রের শরীর। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম আমি। মুখটা এখন লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ঘন্টাখানেক পর অবশ্য আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম আমি।
-
সামনে এখনও অনেক কাজ বাকি। অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে হবে। লাশটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। সুইস ব্যাংক এর অল সিস্টেম ধ্বংস করে ফেলতে হবে। ল্যাপটপের ডালা খুলে আমার প্রোফাইলে ঢুকলাম। ডিলারকে ম্যাসেজ দিয়ে জানাতে হবে কাজ ৯০% কমপ্লিট। আজকের মধ্যেই তার কাজ ফুললি কমপ্লিট হয়ে যাবে। টাইপ করতে করতে মৃদু হেসে উঠলাম। আর আনমনে বলে উঠলাম, ‘খেলাটা শুরু করেছিলাম আমি। আর শেষ ও করবো আমি। এর মাঝে কেউ আসা মানেই। তার নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা!’
-
(গল্পে উল্লেখিত বিভিন্ন লিঙ্ক, সিক্রেট এজেন্সি অফ ক্র্যাকার স্যোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট, ক্র্যাকিং সিস্টেম, স্ক্রিমকিউ ব্রাউজার এবং স্কাইব্লু অপারেটিং সিষ্টেম সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।)
-
অঃটঃ আরিয়ান শুভ ভাইয়ার গল্প পড়ে আমি এই গল্পটি লিখতে উৎসাহীত হয়েছি। গল্পটা পড়ে মনে হল দেখিতো এমন একটা গল্প লেখা যায় কিনা। কোনো কিছু ভুল হলে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩১