somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমি জরিপ, দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন

১৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমি জরিপ, দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন
ভূমি (Land) সম্বন্ধে ধারণা:
আমরা সাধারণ ভাষায় ভূমি বলতে আবাদি কিংবা অনাবাদি জমিকেই বুঝি। কিন্তু ভূমি বা জমি কথাটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।
ভূমি বলতে যা বুঝানো হয়েছে তা হলো, যে ভূমি আবাদি, অনাবাদি অথবা বৎ‍সরের যে কোন সময় জল দ্বারা নিমজ্জিত থাকে এবং ভূমি/জমি হতে উত্‍পন্ন সুবিধাদি সহ, বাড়ী ঘর দালান কোঠা ভূমির সাথে সংযুক্ত বস্তু সমূহ অথবা জমির সাথে সংযুক্ত কোন বস্তুর সাথে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ রয়েছে এমন বস্তু বা বস্তুসমূহকে ভূমির অর্ন্তভূক্ত বা ভূমি বলে গণ্য। সাধারণভাবে সকল আবাদি ও অনাবাদি ভূমি এবং নদনদী, খাল-বিল, নালা-ডোবা, পুকুর, বাড়ীঘর, দালান কোঠাসহ যা ভূমির সাথে স্থায়ীভাবে যুক্ত রয়েছে, তাকেই ভূমি বলে গণ্য হবে। তবে কোন সাগর বা উপসাগরকে ভূমি বলে গণ্য করা হবে না।
ভূমি জরীপ সংক্রান্ত
ভুমিকা: জমি সংক্রান্ত বিষয়টি খুব স্পর্শকাতর ৷বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে উচ্চ বিত্ত কিংবা উচ্চ শিক্ষিত মানুষও ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের জমির উপর তাদের স্বত্ব আছে কিনা কত পরিমাণ স্বত্ব আছে সেই হিসাব বুঝে নেয়ার জন্য সব সময়ই সজাগ ৷যেহেতু জমির স্বত্বের হিসাবের ব্যাপারে প্রত্যেকটি মানুষই খুব সজাগ তাই জমির পরিধি নিয়ে বা পরিমাপ নিয়ে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয় ৷এই সমস্যা সমাধানের জন্য জমির সঠিক জরিপ খুবই প্রয়োজন ৷
ভূমি জরিপ কি: জরিপ তথা ইংরেজী Survey শব্দটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে ৷ভূমি জরিপ বলতে বিভিন্ন মৌজা তথা গ্রাম বা সীমানা ভিত্তিক নকশা (Map) তৈরি বা জমির মালিকানা সংক্রান্ত পুরাতন রেকর্ড পর্যালোচনা বা যাচাই বাছাইকে বুঝায় ৷অর্থাৎ সহজ ভাষায় জরিপের সময় পুরাতন তৈরীকৃত নকশা (Map) ও রেকর্ড সংশোধন করা এবং জমির আকৃতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে থাকলে অর্থাৎ মালিকানার পরিবর্তন হয়ে থাকলে সেই মোতাবেক সামঞ্জস্য রেখে মৌজা বা সীমানার মধ্যে জমির নকশা (Map) এবং কাগজ পত্রের রেকর্ড তৈরি করাকে বুঝায় ৷
অধিকার
জমি জরিপ হওয়ার পূর্বে জরিপের বিষয়ে জানার অধিকার (যেমন-মাইকিং, ঢোল সহরত অথবা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে)
{১৮৭৫ সালের সার্ভে আইনের ৫ ধারা এবং ১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব আইনের ২৯ ধারা}
রেকর্ডের ভুল সংশোধনের জন্য আপিল করার অধিকার।{১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব আইনের ৩০ ধারা}
চূড়ান্ত রেকর্ডের উদ্দেশ্যে যখন প্রকাশনার কাজ চলে তখন পুনরায় পর্যবেক্ষণের অধিকার।
রেকর্ডের মূদ্রিত কপি ও নকশা সংগ্রহের অধিকার।
জরিপের খসড়া সংশোধনের জন্য ভুমি প্রশাসন অফিস/সেটেল্টমেন্ট অফিস থেকে ৩০ কার্য দিবস সময় পাবার অধিকার।{১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব আইনের ৩০ ধারা}
কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীগণের নাম নতুন করে রেকর্ড করে নেয়ার অধিকার।
রেকর্ডের মূদ্রিত কপি পাওয়ার পর তা সংশোধনের অধিকার।
চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশনার পরও যদি কোনো ভূল ত্রুটি থাকে তাহলে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলা করার অধিকার।{১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৫ (ক) ধারা}
ভূমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনালে আপিল করার অধিকার।
{১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৫ (খ) ধারা}
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করার অধিকার।
{১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৫ (গ) ধারা}
লঙ্ঘন:
জমি জরিপ হওয়ার বিষয়ে না জানানো ৷
রেকর্ড সংশোধনের জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া ৷
চুড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশনার কাজ চলার সময় পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া ৷
রেকর্ডের মুদ্রিত কপি ও নকশা সংগ্রহ করতে চাইলে তা প্রদান না করা ৷
কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার উত্তরাধিকারী গণের নামে জমি রেকর্ড করিয়ে নেওয়ার সুযোগ না দেয়া ৷
রেকর্ডের মুদ্রিত অংশের কপি পাওয়ার তা সংশোধনের সুযোগ না দেওয়া ৷
চুড়ান্ত প্রকাশনার পরও যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে ভুমি জরিপ ট্রাইবুনালে মামলা করতে বাধা দেওয়া ৷
প্রতিকার
প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে?
ভূমি জরিপ সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে কোন সমস্যা হলে প্রথমে ভূমি জরিপ কারী আমিনের সংগে যোগাযোগ করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে ৷
যদি সমাধান না হয় তাহলে থানা ভূমি সেটেল্টমেন্ট অফিসারের অফিসে গিয়ে জরিপ সংশোধনের জন্য লিখিত দরখাস্ত দাখিল করতে হবে ৷ (১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ ধারা)
কতদিনের মধ্যে আপত্তি দাখিল করতে হবে?
ভূমি জরিপের খসড়া প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে ৷(১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালার ৩০ ধারা)
সাহায্যকারী সংগঠন :
"জাতীয় আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা"
(প্রত্যেক জেলার জেলা জজ সাহেবের অফিস)
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ("ব্লাস্ট")
১৪১/১, সেগুন বাগিচা, ঢাকা-১০০০ ।
ফোন নম্বর- ৮৩১৭১৮৫, ৯৩৪৯১২৬ ।
"মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন"
নোতাম সাহার, মাদারীপুর ।
ফোন নম্বর-০৬৬১-৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮ ।
"নিজেরা করি"
৭/৮, ব্লক-সি, লালমাটিয়া, ঢাকা ।
ফোন নম্বর-৮১২২১৯৯, ৯১৪৪০৮৫ ।
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভোলপমেন্ট ("এ.এল.আর.ডি.")
বাড়ী নং-৪০, রোড নং-৪/এ, ধানমন্ডি আ/ এ, ঢাকা-১২০৯ ।
ফোন নম্বর-৯৬৬২৫০৩, ৯৬৭১১৭২ ।
ভূমি জরিপ সংক্রান্ত বিস্তারিত:
ভূমি জরিপ চূড়ান্ত প্রকাশের পর কোথায় যেতে হবে?
ভূমি জরিপের পর জরিপের চূড়ান্ত প্রকাশের পর যদি কোনো ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হন তাহলে ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করতে হবে ৷
{১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এক্টের (সংশোধনী ২০০৪) এর ১৪৪, ১৪৫ (ক) ৬ ধারা}
বিস্তারিত জানার জন্য ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে প্রতিকারে ক্লিক করুন
কত দিনের মধ্যে করতে হবে ?
জরিপের চূড়ান্ত প্রকাশের পর ১(এক) বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে ৷
আপিল করার সুযোগ আছে কি ?
আছে ৷
কোথায় যেতে হবে?
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভুমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনালে
{১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এক্টের (সংশোধনী ২০০৪) এর ১৪৪, ১৪৫ (ক) ৬ ধারা}
কত দিনের মধ্যে?
ভুমি জরিপ ট্রাইবুনালের প্রদত্ত আদেশের তারিখ হতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে ৷
ভুমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনালের আদেশেও যদি কোন ব্যক্তি সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে আপিল করতে পারবেন ৷
ভূমি জরিপ চলাকালে ভূমি মালিকদের যা করণীয়:
ভূমি মালিকের জন্য ভূমি বা জমি জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জমি জরিপের সময় জমির মালিকানার উপর ভিত্তি করে জমি রেকর্ড তথা খতিয়ান বা স্বত্ব লিপি তৈরি করা হয়। সাধারণত কোন এলাকায় জমি জরিপ শুরু হওয়ার আগে ভূমি প্রশাসন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই এলাকার জনগণকে অবহিত করেন অনেক সময় ভুমি প্রশাসন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে মাইক দ্বারা মাইকিং করে জরিপের ব্যাপারে জনগণকে নিশ্চিত করেন। তারপর পূর্ব ঘোষিত নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী ভূমি প্রশাসনের কর্মী তথা সার্ভে কর্মকর্তা বা আমিন গন জমির মালিকের সহায়তায় তাদের জরিপের কাজ শুরু করে দেন। এক্ষেত্রে জমির মালিকগণের যে কাজটি পূর্বেই করে রাখতে হবে তাহলো তাদের নিজস্ব জমির সীমানা নির্ধারণ করে রাখা, এতে জমি জরিপের সময় নিজে অথবা জমির মালিকের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি (যেমন ছেলে) জরিপ কর্মচারী বা আমিনদেরকে জরিপ কাজে সহায়তা করবে। জমির মালিককে সংশ্লিষ্ট জমি অর্থাৎ যে জমির জরিপ কাজ শুরু হবে সেই জমির আগের রেকর্ডের পর্চা বা দলিল দস্তাবেজ নিয়ে মালিক বা তার অভিজ্ঞ এবং বিশ্বস্ত প্রতিনিধি মাঠে হাজির থেকে জরিপকারীর নিকট যথাযথভাবে উপস্থাপন করে নাম রেকর্ড করে নিতে হবে। যদি কোন পুরাতন রেকর্ড থাকে এবং সাবেক রেকর্ডের মালিক মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তার উত্তরাধিকারীগণ তাদের নাম ঠিকানা বর্ণনা করে নতুন করে নাম রেকর্ড ভুক্ত করতে আমিনকে সাহায্য করতে হবে। (১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধি মতে)
জমি রেকর্ডের খসড়া প্রকাশনার পর করণীয়:
প্রজাস্বত্ত বিধি অনুযায়ী জরিপ শেষ হওয়ার পর ভূমি রেকর্ডের খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর জমির মালিকদের বা তাদের প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০ কার্য দিবস খোলা রাখা হয় ৷ এই খসড়া রেকর্ডে যদি কোন ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে ৩০ ধারা মোতাবেক আপত্তি দাখিল করতে হবে, যাকে লোক মুখে Dispute বলে ৷ ৩০ ধারায় আপত্তি দাখিলের পর উক্ত আপত্তি বা Dispute মামলার রায় যার বিপক্ষে যাবে সে ব্যক্তি প্রয়োজন মনে করলে উক্ত রায়ের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আইন অনুযায়ী আপিল দায়ের করতে পারবেন ৷এক্ষেত্রে আপিল দায়েরকারীকে তার দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সাক্ষী আদালতে হাজির করতে হবে ৷(১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধির ২৯, ৩০ ধারা)
চূড়ান্ত (Final) রেকর্ড প্রকাশের পূর্বের কাজ:
জমির মালিকদের জমি জরিপ হয়ে যাওয়ার পর চূড়ান্ত রেকর্ডের উদ্দেশ্যে যখন প্রকাশনার কাজ চলে তখন পুনরায় পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়। সরকারী নির্ধারিত মূল্য দিয়ে জমির মালিকগণ ইচ্ছা করলে মূদ্রিত খতিয়ানের কপি ও নক্সা ক্রয় করে কোথাও কোন ভুল আছে কিনা তা দেখতে পারবেন। মূদ্রিত তথা খসড়া খতিয়ানের কপি সংগ্রহের পর যদি কোন নামের, গাণিতিক, পরিমান, করণিক বা মূদ্রণ জনিত ভুল অথবা কোন জালিয়াতি বুঝা যায় তাহলে সেটেলন্টমেন্ট অফিসে গিয়ে তা সংশোধনের জন্য দরখাস্ত পেশ করতে হবে। উক্ত দরখাস্ত পাওয়ার পর সেটেলমেন্ট অফিসার তদন্ত করবেন এবং কোনরূপ ভুলের প্রমাণ পেলে তিনি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির পূর্বে বিধি মোতাবেক সংশোধন করবেন। সুতরাং জমির জরিপ সংক্রান্ত ব্যাপারে জরিপ চলাকালীন সময় থেকে জরিপ কার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত মধ্যবতী সময়ে রেকর্ড সংক্রান্ত কোনরূপ সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি সাথে সাথে সেটেলমেন্ট অফিসার/সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দৃষ্টি গোচরে নিয়ে আসতে হবে। (১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধির ৩০ ধারা)
ভূমি জরিপ ট্রাইবুনাল ও ভুমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনাল এর মাধ্যমে প্রতিকার:
বাংলাদেশের জমি সংক্রান্ত বিষয়াবলীর মাধ্যমে সৃষ্ট বিভিন্ন বিরোধের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার ২৭শে ফাল্গুন ১৪১০ মোতাবেক ১০ই মার্চ ২০০৪ ইং তারিখে The State Acquisition and Tenancy Act (1950 xxviii of 1951) এর সংশোধনী এনেছেন। উক্ত আইনের ১৪৫ (ক) ধারায় ভূমি জরিপ ট্রাইবুনাল (Land Survey Tribunal) গঠন করার কথা বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে অনেক ভূমি জরিপ ট্রাইবুনাল গঠন করতে পারবে। উক্ত আইন (সংশোধনী ২০০৪) এর ১৪৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ভূমি জরিপের চূড়ান্ত প্রকাশনার পর যে সকল সমস্যা উদ্ভবের ফলে মামলার সৃষ্টি হবে সেগুলি সরাসরি ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। উল্লেখ্য যে ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালের বিচারক হবেন একজন যুগ্ম জেলা জজ।
মামলা করার সময় সীমা:
উক্ত আইন (সংশোধনী ২০০৪) এর ১৪৫ (ক) ৬ দফাতে বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি ১৪৪ ধারা মোতাবেক চূড়ান্ত প্রকাশনার পর অসন্তুষ্ট হন তাহলে তাকে চূড়ান্ত প্রকাশনার তারিখ হতে ১ বছরের মধ্যে ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।
তবে বাদী যদি তার দেরীর সংগত কারণের কথা ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালকে বুঝাতে সক্ষম হন কিংবা সন্তষ্ট করতে সক্ষম হন তাহলে উপরোক্ত ১ বছর পরেও ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালে চুড়ান্ত জরিপ সংক্রান্ত প্রকাশনা সংশোধনের জন্য মামলা করতে পারবেন।
যদি কোন ব্যক্তি ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালের রায়ে সন্তুষ্ট না হন তাহলে এই আইনের ১৪৫ (খ) (৫) ধারা মোতাবেক ভূমি জরিপ ট্রাইবুনালের রায়, ডিক্রি অথবা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩ মাসের মধ্যে ভূমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনালে আপীল করতে পারবেন।
এই আইনের ১৪৫ (গ) ধারায় বলা আছে যে যদি কোন ব্যক্তি ভূমি জরিপ আপিলেট ট্রাইবুনালের রায়েও সন্তুষ্ট না হন তাহলে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করতে পারবেন।
দলিল সম্পাদন কি ?
প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এক খণ্ড নিষ্কন্টক জমির মালিক হওয়ার স্বপ্ন সব সময়ই বিরাজমান। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণ হবে তখনই যখন দলিলটি সম্পাদিত হবে। দলিল সম্পাদন বলতে বুঝায় দলিল দাতার স্বাক্ষর বা টিপসহি প্রদান। জমির বিক্রেতা বা দাতা যে তারিখে ও সময়ে দলিলে স্বাক্ষর করবেন সেই তারিখ ও সময় থেকেই দলিলটি সম্পাদিত হবে বলে গণ্য হবে।
উইল ব্যতীত অন্যান্য সকল দলিল সম্পাদনের তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসারের নিকট পেশ করতে হবে। ৪ মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে উক্ত সম্পাদিত দলিল রেজিস্ট্রির জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি কোনো আদালতের কোনো রায় (Judgement) ডিক্রি (Decree)/আদেশ (Order) থাকলে এবং উক্ত রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে কোনো আপিল হলে তা নিষ্পত্তির ৪ মাসের মধ্যে দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দাখিল করতে হবে।(১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এক্ট এর ২৩ ধারা মতে )
দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত অধিকার:
দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে জমি ক্রয় করার অধিকার।
দলিল সম্পাদনের তারিখ হতে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৪ মাস সময় পাওয়ার অধিকার।
জমি ক্রয়ের সময় পূর্বের মালিকের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখার অধিকার।
লংঘন:
দলিল সম্পাদনের পর তা রেজিস্ট্রেশনের জন্য সময় না পাওয়া।
জমি ক্রয়ের সময় জমি সংক্রান্ত কাগজ পত্র দেখতে না দেওয়া।
প্রতিকার:
দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে জমি দলিল রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে।
দলিল লেখার সময় ক্রেতাকে যে সকল বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে:
দলিল সম্পাদনকারী তথা জমি দাতা (বিক্রেতা) আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কে সম্পন্ন কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে ৷
পুরাতন দলিল এবং নতুন দলিলের বিভিন্না জায়গা যেমন (ক) শিরোনাম (খ) সাফ কবলা (গ) বায়না পত্র ইত্যাদি খেয়াল করতে হবে ৷
ক্রেতা যে জমিটি কিনতে যাচ্ছেন সেই প্রস্তাবিত জমিটির পরিমাণ বিক্রয় মূল্য (বায়না দলিল হলে বায়নায় পরিশোধিত টাকা এবং বাকী টাকা)
পক্ষ পরিচয় তথ্য (১) দলিল গ্রহীতা (২) দলিল দাতা অথবা (ক) প্রথম পক্ষ (খ) দ্বিতীয় পক্ষ
উভয় পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি
স্বত্ত্বের বর্ণনা: জমি দাতার মালিকানার ভিত্তি, দলিল মূলে হলে পূর্বের দলিলের নম্বর ও তারিখ পর্চা/খতিয়ান ইত্যাদি ৷
জমির বিক্রেতা যদি জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে তাহলে মূল মালিকের সাথে বিক্রেতা যোগ সূত্র/সম্পর্ক সঠিক আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে ৷
দলিলে প্রস্তাবিত জমির তফশিল যেমন জেলার নাম, উপজেলার নাম, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজার নাম, দাগ নং খতিয়ান নম্বর জমিটি কোন শ্রেণীর যেমন ভিটা, নাকি দলা, নাকি ডাঙ্গা নাকি জলাভূমিতে তা দেখতে হবে ৷
ক্রেতা যে জমিটি ক্রয় করতে চাচ্ছে সেই জমিটির চৌহদ্দি ঠিক আছে কিনা অর্থাত্‍ উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম পাশের জমির বর্ণনা সহ মালিকের নাম উল্লেখ করতে হবে ৷
জমি বিক্রেতা বা দলিল দাতা দলিলের ১ম পৃষ্ঠার উপরের ডান পাশ্বের নীচ থেকে উপরের দিকে তার নিজ নাম স্বাক্ষর করবেন অথবা নিরক্ষর হলে নিজ নামের উপরে টিপ সহি প্রদান করেছেন কিনা তা দেখতে হবে ৷ এছাড়াও জমি বিক্রেতা বা দাতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নীচে স্বাক্ষর বা টিপ সহি করবেন৷ তবে দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষর বা টিপ সহি দিলে ভালো হয় ৷
জমির বিক্রেতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নীচে যে জায়গায় তার নিজ নাম স্বাক্ষর বা টিপ সহি করেছেন ঠিক তার নীচে উক্ত দলিলটির লেখক তার নাম স্বাক্ষর করবেন; এরপর কমপক্ষে ২ জন সাক্ষী এবং অপর একজন জমির বিক্রেতাকে সনাক্ত করে সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষর করবেন
দলিলে যতদূর সম্ভব কাটাকাটি, ঘষামাঝা, অষ্পষ্টতা এড়াতে হবে তবুও যদি কোনরূপ ভুল ক্রটি ঘষামাঝা কাটাকাটি হয়েও যায় তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত কাটাকাটি বা ঘষামাঝা যুক্ত লাইন ও শব্দের ক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে কৈফিয়ত লিখে দলিল লেখককে তার নীচে স্বাক্ষর করতে হবে৷
জমির তফশিল লেখার সময় প্রত্যেক দাগে মোট জমির পরিমাণ কত এবং আদ্যকার বিক্রয় দলিলে উক্ত দাগের মধ্য হতে কত একর বা শতাংশ জমি দেয়া হচ্ছে তা প্রতি ক্ষেত্রে লিখে নিতে হবে ৷তবে উল্লেখ্য যে, কোন অবস্থাতেই কয়েকটি দাগের জমি একত্রে যোগ করে একর/শতাংশ লেখা উচিত হবে না ৷
জমির ক্রেতাকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো বিভিন্ন জরিপের দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর,যাতে দলিল লেখকের মাধ্যমে সঠিকভাবে লিখানো হয় ৷এজন্য জমির ক্রেতাকে জমি ক্রয় করার পূর্বেই তহসিল অফিস হতে জমির সঠিক দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর জেনে নিতে হবে ৷
জমি ক্রয় এবং রেজিস্ট্রেশনের সময় যেসব সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক
{১৯০৮ সালের রেজিষ্ট্রেশন আইনের (সংশোধনী ২০০৫ মতে )}
এক খণ্ড জমির মালিক হওয়া প্রতিটি মানুষেরই মনের একটি অদম্য কামনা। কিন্তু এই অদম্য মনের বাসনা পূরণ করতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে,কোনটি সঠিক কিংবা কোনটি ভুল তা বুঝে উঠতে পারে না।তারপরও জমি ক্রয়-বিক্রয়েদালাল,টাউট,বাটপার, প্রতারকদের প্রতারণা তো আছেই। বিশেষ করে শহর,উপশহর বা শহরের আশেপাশের এলাকার জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি। তাই বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তিতে পড়ে জমি ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতারা প্রায়ই প্রবঞ্চিত হচ্ছে।সেই কারণে জমি ক্রয় কালে ক্রেতাদেরকে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে তা তুলে ধরা হলো। একে ক্রেতা সাবধান (Doctrine of Caveat Emptor) নীতিও বলা যেতে পারে।
জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাত্‍ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করে নিতে হবে।
জমির তফসিল অর্থাত্‍ জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ও উক্ত দাগে জমির মোট পরিমাণ।
জমি ক্রয় করার পূর্বে উক্ত জমির সিএস রেকর্ড, এসএ রেকর্ড;আরএস রেকর্ড এবং মাঠ পর্চাগুলি ভালোভাবে দেখে নিতে হবে।
বিক্রেতা যদি জমিটির মালিক ক্রয় সূত্রে হয়ে থাকেন তাহলে তার ক্রয়ের দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।
জমির বিক্রেতা উত্তরাধিকারসূত্রে জমিটি পেয়ে থাকলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ানে তার নাম আছে কিনা তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।যদি সর্বশেষ খতিয়ানে বিক্রেতার নাম না থাকে তাহলে তিনি যার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে জমিটি পেয়েছেন তা মূল মালিকের সংঙ্গে বিক্রেতার নামের যোগসূত্র কিংবা রক্তের সম্পর্ক আছে কিনা বিষয়টি ভালোভাবে দেখতে হবে।
জরিপ চলমান এলাকায় বিক্রেতার নিকট রক্ষিত মাঠ পর্চা সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে।
উল্লেখ্য যে, যদি মাঠ পর্চার মন্তব্য কলামে কিছু লিখা থাকে যেমন (AD)তাহলে বুঝতে হবে উক্ত খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসদিক বা সত্যায়ন বা শুদ্ধতা বা Attestation পর্যায়ে আপত্তি রয়েছে, সেক্ষেত্রে জমি ক্রয়ের আগে জরিপ অফিসে/ক্যাম্পে গিয়ে জমিটির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে।
তবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রেতার শরিকদের সঙ্গে জমি বিক্রেতার সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টন নামা বা ফারায়েজ দেখে নিতে হবে।
জমি বিক্রেতার নিকট থেকে সংগৃহীত দলিল, বায়না দলিল, খতিয়ান, মাঠ পর্চা ইত্যাদি কাগজ পত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে তলবকারী বা স্বত্বলিপি রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাই করে নিতে হবে।
সর্বশেষ নামজারী মাঠ পর্চা, ডিসিআর, খাজনার দাখিলা বা রশিদ যাচাই করে দেখতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনা সহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায়- দায়িত্ব ক্রেতাকেই নিতে হবে।
ক্রেতা যে জমিটি ক্রয় করতে যাচ্ছে সেই জমিটি সার্টিফিকেট মকদ্দমা ভুক্ত কিনা, কিংবা জমিটি নিলাম হয়েছে কিনা তা তহসীল অফিস/উপজেলা ভূমি অফিস হতে জেনে নিতে হবে। তবে অবশ্যই ক্রেতাকে মনে রাখতে হবে যে ১৯১৩ সালের সরকারী পাওনা/দাবী আদায় আইনের ৭ ধারায় বলা আছে সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রয় যোগ্য নয়।
বিবেচ্য জমিটি খাস, পরিত্যক্ত/অর্পিত, অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশকৃত কিনা তা তহসিল অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসক (ডি.সি অফিস) এর কার্যালয়ের L.A(এল.এ) শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
ক্রেতা যে জমিটি কিনতে যাচ্ছে সেই জমিটি নিয়ে কোনো আদালতে মামলা রুজু আছে কিনা তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। তবে মামলাভুক্ত কোনো জমি ক্রয় করা উচিত নয়।
বিক্রেতা তার জমির নকশা দেখিয়ে ক্রেতার নিকট জমি বিক্রয় করতে চাইতে পারে (যেমন বসুন্ধরা প্রকল্পের জমি নকশা/ছবির বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হয়) সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে উক্ত নকশার সাথে সঠিকভাবে মিল আছে কিনা বিক্রেতার দখল ও মালিকানা আছে কিনা তা সরেজমিনে গিয়ে দতন্ত করে আসতে হবে।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কিংবা জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে সর্বশেষ জমি কেনা বেচার তথ্য জেনে আসতে হবে।
যে জমিটি বিক্রি হতে যাচ্ছে সেই জমিটি ঋণের দায়ে ব্যাংকে দায়বদ্ধ কিনা সেই বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে।
প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কিনা সেই বিষয়টিও সরেজমিনে তদন্ত করে জেনে নিয়ে জমি ক্রয় করতে হবে।
ক্রেতাকে সবচেয়ে যে বিষয়টি বেশি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো কিছু কিছু এলাকা রয়েছে সেই এলাকার জমি জমা সরকারিভাবে বিক্রয় নিষিদ্ধ কিন্তু দালাল টাউট, বাটপার বা প্রতারক চক্র সহজ সরল ক্রেতাকে ঐ নিষেধাজ্ঞার কথা গোপন করে তার কাছে জমি বিক্রয় করতে পারে সেদিকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে। যেমন-ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের স্বার্থে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার
(ক) আড়াইশ প্রসাদ (খ) বন ঘরিয়া (গ) বিশিয়া কুড়ি বাড়ি (ঘ) বারই পাড়া (ঙ) উত্তর সালনা (চ) বাউপাড়া (ছ) বাহাদুরপুর (জ) মোহনা ভবানীপুর মৌজা গুলিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি জমিতে শিল্প/কারখানা/পাকা ইমারত সহ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, কৃষি, দুগ্ধ ও মত্স খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্য
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২২/১১/১৯৯১ইং তারিখে পবম (শা-৩) ১৪/৯৪/ঌ৮৮ নং স্মারকে একটি পরিপত্র জারি করে।
সুতরাং উপরোক্ত মৌজাগুলির জমি কোনো ক্রেতা ক্রয় করলে সেই জমি ক্রয়টি অবৈধ হবে বা বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়াও সরকার যদি কোনো এলাকার জমি যে কোন সময় ক্রয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করে তাহলে সেই এলাকার ক্রেতাকে জমি ক্রয় করতে সাবধান থাকতে হবে।
যে জমিটি ক্রেতা ক্রয় করতে যাচ্ছে সেই জমিটির ব্যাপারে পরবর্তীতে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের ওজর আপত্তি না সৃষ্টি হয় সে জন্য ক্রেতা কতৃর্ক অতি সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য ৩ টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যেতে পারে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলের জমি ক্রয় করতে লিগ্যাল নোটিশের প্রয়োজন হয় না কিন্তু শহর বা শহরের আশে পাশের এলাকার জমি ক্রয় করতে হলে ক্রেতাকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া ভালো।
যে সকল দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য বাধ্যতামূলক নয়:
যদিও ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন এক্টে বলা হয়েছে যে উইল ব্যতীত সকল দলিল সম্পাদনের তারিখ হতে ৪ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক তথাপিও কিছু কিছু দলিল রেজিস্ট্রির জন্য বাধ্যতামূলক নয় সেগুলি হলো-
কোন রাজস্ব আদালতের বাটোয়ারা কার্যক্রমে পক্ষগণ কর্তৃক কোন সোলেনামা সম্পাদিত হয়ে থাকলে এবং উক্ত সোলেনামা যদি আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়ে থাকে।
যদি কোন সম্পত্তি ভোগ করার জন্য অন্য কারো অধিকার সংকোচন বা কমানো বা ধ্বংস না করা হয় এবং তা যদি পারস্পরিক ও পারিবারিকভাবে নামান্তর করণের মত কার্যক্রমে সোলেনামা করা হয় তাহলে তা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নাই।
কোন আদালতের ডিক্রি (Decree), রায় ( Judgement) বা আদেশ (Order)
অতীতের স্বত্বের স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তুতকৃত পারিবারিক বন্দোবস্ত।
দেওয়ানী আদালতের বা সার্টিফিকেট অফিসারের নিলামে হস্তান্তরকৃত সম্পত্তির বায়না নামা।
১০০ টাকার কম মূল্যমানের স্থাবর সম্পত্তির হস্তান্তর দলিল।
পোষ্যপুত্র/পালক পূত্র গ্রহণ করার দলিল।
(১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের ২৩ ধারা)
রেজিস্ট্রেশন আইন (সংশোধনী ২০০৫) মোতাবেক জমির ক্রেতা এবং বিক্রেতার যা জানা আবশ্যক:
সম্পত্তির উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে জমি বা সম্পত্তি নিবন্ধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে এবং অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত তাই তারা নিত্য নতুন আইনের সংশোধনের প্রতি খেয়াল নাও রাখতে পারে। গত বছরের ডিসেম্বর মাস/২০০৪ইং তে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইনের কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে যা চলতি বছরের ১ লা জুলাই ২০০৫ ইং তারিখ থেকে উক্ত রেজিস্ট্রেশন আইনের সংশোধনীগুলি কার্যকর হবে। উক্ত সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হলো-
আগে জমি বিক্রির কাজটি ছিল একপক্ষীয় অর্থাত্‍ শুধু বিক্রেতাই দলিল সম্পাদনের কাজ করতেন। এখন বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতাকেও সম্পাদনের কাজ করতে হবে অর্থাত্‍ দলিল করার সময় উপস্থিত থাকতে হবে। ফলে এখন আর বিদেশে বসে কিংবা অপ্রাপ্ত-বয়ষ্ক ছেলে মেয়ের নামে জমি কেনা সম্ভব নয়।
সম্পত্তিটিতে বিক্রেতার উপযুক্ত মালিকানা রয়েছে তা প্রমাণের জন্য সম্পত্তিটির পূর্ববর্তী বিক্রেতা বা মালিকের কাগজপত্রের প্রমাণপত্র থাকতে হবে এবং সম্পত্তিতে যে বিক্রেতার আইনানুগ মালিকানা আছে এই মর্মে একটি হলফনামা জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় জমির বিক্রেতাকে দাখিল করতে হবে।
সম্পত্তির ধরন, সম্পত্তির দাম, সম্পত্তির মানচিত্র এবং আশপাশের সম্পত্তির বিবরণ ও আঁকানো ছবি (sketch Map) দিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক।
শেষ ২৫ বছর উক্ত সম্পত্তিটিতে কার কার মালিকানা ছিল তার বিবরণ রেজিস্ট্রেশনের সময় দাখিল করা বাধ্যতামূলক।
ক্রেতা এবং বিক্রেতার উভয়ের ছবি লাগবে এবং ছবির উপরে দুপক্ষেরই স্বাক্ষর এবং টিপসহি দেওয়া বাধ্যতামূলক, এর ফলে বেনামীতে আর কোন সম্পত্তি কেনা বেচা করা যাবে না।
কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হতে জমি ক্রয় করবে মর্মে বায়নাপত্র করে থাকে তাহলে সেই বায়না পত্রটিও এখন থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ৫০০ টাকা।
৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে হলে রেজিস্টেশন ফি হবে ১ হাজার টাকা।
আর জমির মূল্য যদি ৫০ লাখ টাকার বেশি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ২ হাজার টাকা।
যদি শরিয়া আইন অনুসারে স্বামী স্ত্রী, ভাই-বোন বা ছেলে মেয়েদেরকে কোন সম্পত্তি দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সম্পত্তির মূল্য যাই হোক না কেন নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ফি হবে ১০০ টাকা।
১ঌ০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন সংশোধনের পূর্বে শরিয়া আইন অনুসারে মৌখিক ভাবে যদি কোন জমি কাউকে দেয়া হতো তা বৈধ ছিল, কিন্তু বর্তমান সংশোধনীতে বলা হয়েছে সব ধরনের হস্তান্তরই লিখিত এবং নিবন্ধিত হতে হবে। ফলে মৌখিকভাবে হস্তান্তর করা জমির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের জন্য আবেদন করা যাবে না।
অত্র সংশোধনী আইন কার্যকর হওয়ার পূর্বে সম্পত্তি কেনার চুক্তি সম্পাদনের ৩ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকত কিন্তু বর্তমানে তা ১ বছর সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে উল্লেখ্যয যে, উভয় পক্ষ যদি চুক্তিটি কার্যকরী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় চুক্তিতে উল্লেখ করেন তাহলে সেটিই কার্যকর হবে অন্যথায় না থাকলে ১ বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকবে।
তবে উল্লেখ্য যে সমস্ত সম্পত্তি বিক্রির বায়না চুক্তি এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করা হয় নি সেই ক্ষেত্রে এই আইন বলবত্‍ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য বিক্রির সব প্রমাণ উপস্থিত করতে বলা হয়েছে অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের পর সেই সম্পত্তির বিক্রয় চুক্তি বাতিল বলে গন্য হবে।
যদি কোন সম্পত্তি কোন ব্যক্তির নিকট বন্ধক থাকে তাহলে যার কাছে জমিটি বন্ধক আছে তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোথাও বন্ধক রাখা বা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রি করলে তা বাতিল বলে বিবেচিত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৪৪
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×