জন্মাবধি অদেখা
অশ্রু হাসান
আমি মানুষ, থাকি এই পৃথিবীতে;
যেখানে নাকি সূর্য উদয়-অস্ত হয়,
দিনের আলোর শেষে সেথায় নাকি নিকষ রাত নামে,
আবার নাকি কখনো জ্যোৎস্নাময় হয় অন্ধকার রাত।
সীমাহীন নীল আকাশও নাকি আছে সেথায়,
যে আকাশে কখনো নাকি শুভ্র মেঘ ভাসে,
কখনো নাকি আবার গুমোট কালো মেঘেরা গর্জন করে,
যে গর্জনে ভীত হয়ে আকাশ নাকি খুব করে কাঁদে।
আমি মানুষ, শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি এক শহরে;
যেখানে নাকি মানুষ আর মানুষে গিজ গিজ করে,
তাদের কেউ নাকি খেতে পায়, কেউ নাকি পায় না,
তারা ক্ষণে ক্ষণে নাকি হাসে, আবার ক্ষণিকেই কাঁদে,
আচ্ছা, হাসলে কাঁদলে কেমন দেখায় তাদের?
কেউ কেউ নাকি একে অন্যকে খুব ভালোবাসে,
এতোই নাকি ভালোবাসে যে নিজের জীবন পর্যন্ত উজাড় করে দেয়।
আবার কেউ কেউ নাকি একে অপরকে ভীষণ ঘৃণা করে,
ঘৃণায় বিষাক্ত হয়ে একে অন্যকে হত্যাও নাকি করে।
আমি বন্দী থাকি ইট-ইস্পাতের তৈরি দালান নামক এক খাঁচায়;
সেথায় আমাকে চোখে চোখে দেখে রাখে বাবা, মা, ভাই, বোন।
তারা সময় পেলেই আমায় গল্প শুনায়
এই পৃথিবীর আকাশ-বাতাসের, চাঁদ-সূর্যের,
দিন-রাতের, নদী-সাগরের, আরও কত কিছুর!!!
তারা সবাই আমাকে আরও জানায়
এই শহরের সুখী-দুঃখী জনপদের কেচ্ছা-কাহিনী,
ভালোবাসা-ঘৃণার, অলসতা-ব্যস্ততার সংজ্ঞা ও উদাহরণ,
আরও কত কিছু জানায় যার ইয়ত্তা নেই।
সব শুনে, সব জেনে খুব করে ইচ্ছে জাগে
তাদের শুনানো জানানো সব দেখতে কেমন হয়?
কিন্তু খুব করে জাগা ইচ্ছেটা চট করে ঘুমিয়ে পড়ে,
কেননা বিধাতা যে জন্মাবধি নিভিয়ে রেখেছে
আমার দু’চোখের দৃষ্টির প্রদীপ।