>> 'আরে, জানেন ভাবী? ঐযে রাইমার বড় বোন ময়না আছেনা? ওর জন্য এত্ত ভালো একটা বিয়ের প্রপোসাল আনলাম, ছেলে বিদেশে থাকে, পড়া-শোনা করে, মেয়েকে বিয়ে করে বিদেশে নিয়ে যেয়ে পড়াবে, আর কী লাগে ভাবী? ময়নার মা কে বললাম ময়নার Bio-data টা দিতে আর সুন্দর দেখে ময়নার একটা ছবি দিতে, কিন্তু ভাবী তো কানেই নিলোনা কথাটা।'
--- 'সে কী কথা সিপরা ভাবী? কথা কানে নিলোনা মানে?'
>> 'মানে আর কি ভাবী? এই দেই দিচ্ছি করে করে আর দিলোই না। এখন ছেলে মানুষ, তাদের কে তো আর এ্ত অপেক্ষায় রাখা যায় না তাইনা? উনারাও অন্য জায়গায় মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছে।'
--- 'ওমা!!! তাই নাকি ভাবী? এ্ত ভালো প্রপোসালে তারা সারাই দিলোনা? ময়নার জন্য কি কোনো রাজপুত্রের অপেক্ষায় আছে নাকি তারা?'
>> 'কী জানি ভাবী? ময়নার মা'র তো এমন ভাব যেন ভালো ছেলে পেলে এক্ষনি মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়, অথচ মেয়ের Bio-data টা পর্যন্ত ও দিলোনা। কেনো গো? আমরা কি ময়নার জন্য কোনো খারাপ সম্বন্ধ আনবো নাকি যে একেবারে মেয়ের Bio-data টা পর্যন্ত দেখা টা নসিব হল না। তবে জানেন ভাবী? শুনলাম মেয়ে নাকি নিজেই ওর Bio-data দিতে চায় না। এমনকি নিজের কোনো সুন্দর ছবিও দেখাতে চায়না। বিয়ের প্রস্তাব আসলেই নাকি ময়না এমন পাগলামি করে।'
--- 'ভাবী, তাহলে ধরেই রাখুন যে ময়নার নিজের কোনো পছন্দ আছে, নাহোলে প্রাপ্ত-বয়স্ক একটা মেয়ে তার Bio-data দিতে চাইবে না এটা আবার কী ধরনের কথা?'
>> 'আমারও না ভাবী তাই মনে, জানেন তো? আর এই ব্যাপারটা ময়নার মাও জানে, তাই মেয়ের কীর্তি কর্মকে মাও ঢামা-চাপা দিয়ে রাখে। যাক এমন মেয়ের প্রপোসাল আনি নি, ভালোই হয়েছে।পরে কিছু হলে তো দোষ সব আমার ই হবে। আল্লাহ বাচিয়েছেন।'
****** ******
কতটা সহজেই একটা মেয়ের না বলা কোনো কথার কত হরেক রকমের অর্থ বের হয়ে যায়।
কত সহজেই একটা মেয়ের সম্পর্কে, মেয়েটির চরিত্র সম্পর্কে কত ভালো-মন্দ বলে ফেলা যায়।
প্রাপ্ত-বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথেই কি বিয়ে করতেই হবে? নাকি নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার টুকুও ক্ষোদ ঐ মেয়েটারই নেই?
কেও ভাবেনা। একটা মেয়ের মনের গভীরে কত কথা, কত স্বপ্ন লুকাইত থাকে, তা সে মেয়েটি ছাড়া পৃথিবীর আর কেঐ জানতে পারে না।
মেয়ে বেশি লাজুক হলেও সমস্যা, বেশি কথা বললেও বিপদ।
মেয়ের নিজের শখ-আহলাদ থাকা ভালো, কিন্তু এমন শখ যেটা মেয়ের শশুর বাড়ির মানুষদের মন জয় করার জন্য কাজে লাগে।
মেয়ে শিক্ষিতও হও্য়া চাই, আবার বিয়ের পর মেয়ের চাকরী করাতেও আপত্তি।
একটা মেয়ে যাবে তো যাবে কোথায়?
যেই বাবা জীবনে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখায় এবং নিজের মেয়েকে সবসময় নিজের কাছে রাখার প্রতিজ্ঞা করে, সেই বাবাও যদি মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে তাহলে সেই মেয়ের ঠিকানা কোথায়?
হ্যা, মেয়ের অবশ্যই নিজের একটা পছন্দ থাকতে পারে।
নিজের পছন্দের কিছু শখ থাকতে পারে যে শখ হয়ত সে বিয়ের পর আর পালন করতে পারবেনা।
নিজের পছন্দের একটা চাকরী থাকতে পারে, যেটা হয়তা তাকে বিয়ের পর আর করতে নাও দেয়া হতে পারে।
নিজের পছন্দের কিছু স্বপ্ন আছে, যা হ্য়ত বিয়ের পর আর পূরণ করা সম্ভব হবে না।
এবং সবচেয়ে পছন্দের যেই বিষয়টা, যেটা হল তার নিজেস্ব একটা সত্তা, নিজের একটা স্বাধীনাতা, সেটা কার নেই বলুন? এসব মেয়েটি হয়ত জানে বিধায় বিয়ের জন্য ওতটা সহজে রাজি হতে চায়না
কিন্তু এত কথা ভাবে কে বলুন? যার বিয়ে তার খবর নাই বলে কি পারা-পর্শীরা নাক ডেকে ঘুমাবে? তা কী হয়?
দু-চার মুখে মেয়ের চারিত্রক কিছু নিন্দা না রটালে যে রাতের খাবার হজম হবে না!!!!
***** *****
কিছুদিন পর সিপরার বড় মেয়ের জন্যও একটা 'বিদেশী পাত্রের' প্রস্তাব আনলেন এক পরিচিত ভাবী। মেয়ের কাছে তাই যেই তার Bio-dataটা সুন্দর করে লিখে দিতে বলা হল, ওমনি মায়ের সাথে তর্ক করে রীতিমত মুখের উপরই দরজা বন্ধ করে দিলো সিপরার মেয়ে। সে এখন বিয়ে করতে চায় না।
সিপরা আজ তাই বিশাল tension এ আছে। মেয়ে বিয়ের ব্য়স হয়ে যাচ্ছে। একটা ভালো ছেলে পেলেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবে। তার জন্য মেয়ের Bio-data টা ভাবীদের দিতে হবে।
অণ্বেষনের জন্য এই অজ্ঞাতের প্রশ্ন, " কেনো আমরা ভুলে যাই যে একটা মেয়েরও তার নিজস্ব একটি সত্তা আছে। কেনো একটা মেয়ের সম্পর্কে কোনো কিছু ভাবার আগে আমার সেই মেয়েটির আসল রূপটাকেই নজর আন্দাজ করে যাই? তবে কী মেয়েরা জন্মায় শুধু বিয়ে করার জন্যই?"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১:৪৯