কথায় আছে, মুখ থেকে কথা আর ধনুক থেকে তীর একবার বের হয়ে গেলে তা ফেরানর উপায় থাকে না। এ কারনেই হয়ত সবাই চেষ্টা করে "কথা" ভেবেচিন্তে বলতে, যাতে অকারনে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। আম-জনতা যদি এই ব্যাপারে সাবধান হতে পারে, তাহলে এই এক ই বিষয়ে সরকারের কি করা কোন দায়বদ্ধতা নেই?
যে কোন গনতান্ত্রিক দেশেরসরকার খুব স্বাভাবিক ভাবেই যেকোন বিষয়ে জনগনের মুখাপেক্ষি। বিষেশ করে তা যদি হয় ঘনঘন সড়ক দুর্ঘটনা, সাংবাদিক দম্পতি হত্যা বা সীমান্তে BSF এর নির্বিচারে নিরীহ বাংালি হত্যার মতন স্পর্শকাতর বিষয়। উল্ল্যেখিত প্রতিটি বিষয়েই জনগন সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ আশা করেছে। তা না পেয়ে অধিকাংশ খেত্রেই বিষয় গুল রাজপথে গড়িয়েছে। অতঃপর চরম পরিস্থিতিতে সরকার কিছু মন্তব্য করেছেন। যা করার চে না করাটাই হয়ত ভাল ছিল!
ঘনঘন সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মাননীয় স্থানিয় সরকার মন্ত্রি বলেছিলেন, "দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই, এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার কি আছে?" View this link তিনি আরো বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে আমাদের কিছু করার নেই।’ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-02-02/news/221581 ক্যাথেরিন মাসুদের কাছে কি এটা শুধুই দুর্ঘটনা? যে পরিবার টি তাদের একমাত্র আয়কর্তা কে হারাল, তাদের কাছে কি এটা শুধুই দুর্ঘটনা? যে শিশুটি পৃথিবীর সৌন্দর্য বুঝার আগেই অকালে প্রান হারাল তার পরিবারের কাছে কি এটা শুধুই দুর্ঘটনা? এরকম বর্ননা দিয়ে শেষ করা যাবেনা যাদের কাছে এটা শুধুই দুর্ঘটনা না। অযগ্যদের লাইসেন্স প্রদান, রাস্তার বেহাল দশা, এগুলার জন্যেই তো দুর্ঘটনাগুলো আর শুধুই দুর্ঘটনা থাকেনা, বরং একটা স্থায়ী দগদগে ঘা তে পরিনত হয়। View this link এই দায় কি কোন সরকার পক্ষে "দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই" বলে এড়ানো সন্ভব? নাকি উচিৎ? এ ধরনের বক্তব্য কি একটি গনতান্ত্রিক দেশের কোন দয়িত্ববান মন্ত্রির মুখে মানায়?
প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্র (?) ভারত এর নিবেদিত প্রান (!) সীমান্ত রক্ষী বাহীনি একের পর এক বাংালি হত্যা করছে নির্বীচারে। এ নিষয়ে মাননীয় স্থানিয় সরকার মন্ত্রির বক্তব্য ছিল 'সীমান্তে যা কিছু ঘটছে তার সঙ্গে বহু বিষয় জড়িত। এগুলো রাষ্ট্রীয় বিচারযোগ্য কোনো বিষয় নয়। দুই দেশের পক্ষ থেকেই চোরাকারবারি, মাদক পাচার ও গরু চুরি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটনাগুলো ঘটছে। এসব অতীতে ঘটেছে, এখনো ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এগুলো নিয়ে রাষ্ট্র খুব বেশি চিন্তিত নয়।’ View this link অপর দেশ যদি তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিনা বিচারে, নির্যাতন করে আমার দেশের লোক কে হত্য করে, তাহলে আমার দেশের কাছে এটা "বিচারযোগ্য কোনো বিষয় নয়" নয় কেন? সীমান্তের অপরাধ নিয়ে রােষ্ট্রর খুব বেশি চিন্তিত না হইয়াটা (!) কি আভ্যন্তরীন নিরাপত্তার ব্যাপারেও সরকারের এক ই মনোভাবের প্রতিচ্ছবি?
সম্প্রতি, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, "দুই সাংবাদিককে নিজের ঘরে মারা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।" View this link রাস্তার দায়িত্ব ও সরকারের না, সীমান্তের দায়িত্ব ও সরকারের না, বেডরুমের ও না, তাহলে কোথাকার দায়িত্ব সরকারের? এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনতাকে আরো প্রশ্নের মুখোমুখি করাটাই কি সরকারের একমাত্র দয়িত্ব?
কোথায় যেন একটি কথা পরেছিলাম, "যে নিজের দুর্বলতাকে প্রতিনিয়ত জাহির করতে থাকে, সে যতটা না দর্বল, তারচে ও বেশি দুর্বল হিসাবে প্রমানিত হয়"। বাংলাদেশের মত একটি স্বন্পন্নোত দেশ, যা নাগরিক রা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে ন্যায় এর জন্যে, সেই সরকার যখন প্রতিটি বিষয়ে অক্ষমতা প্রকাশ করে, আম-জনতা কার কাছে যাবে?
সরকারের এই প্রতিটি বক্তব্য এক একটি তীর। সরকার কোন ভাবনা চিন্তা না করে এগুলা ছুড়ে তো দিয়েছেন, কিন্তু এর নিশানা কে? মিডিয়া? সাধারণ জনগন? নাকি সরকার নিজে?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৩৭