বাংলাদেশে কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম অনেকদিন পর। ইন্টারনেট খুব মিস করছিলাম বলে একটা সাইবার ক্যাফে পেয়ে ঢুকে গেলাম। একটা ব্যপার দেখে অবাক হয়েছি--কম্পিউটারগুলো এক একটা অন্যটা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মাঝে পদর্ার দেয়াল, টেবিলের সাইডগুলো উঁচু উঁচু। আমি প্রথমে কারণ বুঝিনি। ভাইয়া পর্দা তুলে দিয়ে কাজ করছিল, ক্যাফের লোকটা এসে পর্দা নামিয়ে দিয়ে গেল। ভাইয়া মহা বিরক্ত হলো। ওর নাকি অক্সিজেনের অভাব হচ্ছিল। পর্দা রহস্য আমার কাছে পরিষ্কার হলো যখন কম্পিউটার স্ক্রীনের বাঁ পাশে হিস্ট্রী দেখলাম। পর্ণোগ্রাফী ছাড়া একটাও সাইট লিস্টে ছিল না। একটাও না। মনে হচ্ছিল সেটা অসুস্থদের আড্ডাখানা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ক্যাফে থেকে যতো দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসলাম।
মানবের পোস্ট পড়ে আমার সে রকম বিবমিষা হয়েছে। তিনি যেভাবে "ব্লু ফিল্ম", "গ্রুপ সেক্স" বিস্তারিত বর্ণনা সহ লিখলেন, তাতে তো বোঝাই যাচ্ছে অন্ধকার জগতের ব্যপারে তিনি সুঅভিজ্ঞ। অন্ধকার জগতের পুরো ব্যপারটাই যে অস্বাভাবিক, বিচ্ছিরি আর অসুস্থ--এ ব্যপারে নিশ্চয়ই কারো দ্্বিমত নেই?
সব চেয়ে বড় মিথ্যা হচ্ছে সত্যের সাথে মিশানো মিথ্যা। কারণ মানুষ কিছু সত্য দেখে কনভিনসড হয়ে গেলে তখন আর বাকি মিথ্যাগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। সবই সত্য বলে ধরে নেয়। মানব সেই কাজটা করেছেন সুন্দর ভাবে। খেয়াল করে দেখবেন, তিনি হাদীসগুলো সরাসরি কোট করেননি। নিজের ভাষায় লিখেছেন, ব্র্যাকেটে আর দু'টো হাদীসের মাঝে নিজের চিন্তা ভাবনা ঢুকিয়ে দিয়েছেন অবলীলায়। আর বাংলা অনুবাদতো নিজের খেয়াল খুশি মতো করেছেন। Chinese whisper খেলতে জানেন তো? বেশ কয়েকজন লাইন ধরে বসে থাকে, একজন একটা কথা (ধরুন "আজ বৃষ্টি হবে") ফিসফিসিয়ে পাশের জনের কানে বলে, সে যা শুনে তাই পাশের জনের কানে ফিসফিসিয়ে বলে। এভাবে চলতে থাকে। শেষের জনের কাছে কথাটা পেঁৗছতে পেঁৗছতে একেবারে বিকৃত হয়ে যায়। শোনার সমস্যা তো হয়ই, আবার মাঝে এমন মানুষও থাকে যে ইচ্ছা করেই যা শুনে, তা না বলে অন্য কিছু বলে। ফলে "আজ বৃষ্টি হবে" হয়ে যায় "গরুঘাস খায়"। আরবী থেকে বাংলা অনুবাদে অনেক সময়ই ঠিক ভাবটা উঠে আসে না তিনটি কারণে:
এক: বাংলায় সঠিক প্রতিশব্দের অভাব (ইংরেজীতে জোছনার ভাল প্রতিশব্দ নেই-- সব ভাষারই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে),
দুই: বাঙালী যারা আরবী শিখে অনুবাদ করে তাদের নিজেস্বভাষাগত সীমাবদ্ধতা এবং আরবি বাগধারা, শব্দের ব্যুৎপত্তি ইত্যাদি সম্পর্কেজ্ঞানের স্বল্পতা।
তিন: অসততা। ইচ্ছা করেই কাছাকাছি একটা প্রতিশব্দ দেয়া, যাতে পুরো অর্থ বদলে যায়।
"মানব" (বা যার অনুবাদ তিনি নিয়েছেন) যে তিন নম্বর কাজটা করছেন তার অনেক প্রমাণ আমি পেয়েছি। কিছু উদাহরণ দেই...
আমি যেখানে হাদিসের বাংলা অনুবাদে "পৃষ্ঠদেশ" পড়েছি, আর ইংরেজি অনুবাদে "back" পড়েছি, তিনি সেটাকে মনের মাধুরী মিশিয়ে অনুবাদ করেছেন নিতম্বের প্রচলিত শব্দ। "পৃষ্ঠদেশ" মানে তো পিঠ, আর ইংরেজীতেও নিতম্বের প্রতিশব্দের অভাব নেই। তিনি কেন নিচের দিকে গেলেন বুঝলাম না। এটাকে তো অসততা বলবেন তাই না? অমানবিক অসততা।
আর একে ঘিরে যে গল্পটা তিনি বানালেন... ইসলাম পূর্ব আরবের প্রথা ছিল স্ত্রীর সাথে রেগে গেলে তাদের পিঠকে "মায়ের পিঠ" এর সাথে তুলনা করতো এবং বলতো, "তুমি আমার জন্য আমার মায়ের মতোই নিষিদ্ধ"... বলে ফেলার পরে তাদের ধারণা ছিল, তাদের সম্পর্কসত্যিই মা-ছেলের মতো হয়ে যেতো। তারা স্ত্রীকে আর স্পর্শ করতো না। কোরআন এরকম ফালতু প্রবাদ/কথা থেকে বেঁচে থাকার আহবান জানায় এবং ঘোষণা দেয় এরকম কেউ বলে ফেললেই স্ত্রী মা হয়ে যাবে না, জন্মদাত্রী জন্মদাত্রীই।
অথচ দেখুন তিনি কি চমতকার পর্ণোগ্রাফীক গল্প বানিয়েছেন এটা নিয়ে?
এ ব্যপারে বিস্তারিত পড়ুন:
http://www.answering-islam.de/ Main/Index/Z/zihar.html
"হিলা" বিয়ের কথা বলে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ইসলামে আইনগত ভাবে "ফ্রি সেক্স" হালাল করে দেয়া হয়েছে, যেখানে "হিলা" বিয়ের পুরো ব্যপারটাই হারাম। ইসলামে বিয়ে অনেক পবিত্র, ভারি স্বামাজিক দায়িত্ব। তালাক দিবে এই চিন্তা মাথায় রেখে বিয়ে করা বৈধ না। পড়ুন:
http://www.islamonline.net/servlet/ Satellite?pagename=IslamOnline-English-Ask_Scholar/ FatwaE/FatwaE&cid=1119503544100
আমি প্রতি লাইনে লাইনে এরকম অসততা দেখেছি। আর খণ্ডন করার রুচি হচ্ছে না। যাদের এখনো অন্য হাদীসগুলোর ভুল ব্যাখ্যার ব্যপারে সন্দেহ আছে তারা দয়া করে এ ব্যপারে নিজেরা সঠিক সোর্স থেকে পড়াশোনা করে মিলিয়ে নিন।
"সামহোয়্যার ইন..." কে ধন্যবাদ মানবের সাইটে কিছু লিমিটেশন প্রয়োগের জন্য। কারণ তিনি সবচেয়ে বিচ্ছিরি ধরণের মিথ্যা বলছেন আল্লাহর রাসুল (সা আর কোরআন নিয়ে। ফলাফল: খাঁটি পর্ণোগ্রাফী...
মানবের পোস্টে কোন মন্তব্য লিখতে আমার ইচ্ছা করছে না, এটা লিখেছি আমি অন্যদের জানার সুবিধার্থে। যে ঘোড়া আর শুকর দু'টোরই চার পা আছে বলে দু'টোর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখে না, তাকে আপনি কি করে বুঝাবেন দু'টোয় বিস্তর পার্থক্য?
মানবের প্রতিটা পোস্টেই রেফারেনস লিস্ট এক। হাহ! তিনি দেখি ডেনিশ কার্টুনগুলোও দিয়েছিলেন! অস্ট্রেলিয়াতেও কোন বিখ্যাত সংবাদপত্রেকার্টুনগুলো ছাপেনি, কারণ মানুষকে থাপপড় দিতে পারার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে না। এ পর্যায়ে কেউ যদি conspiracy theory দেয় যে তিনি জেনে শুনে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে, মুসলিমদের এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিভ্রান্তিসৃষ্টি করতে, অমুসলিমদের সামনে মুসলিমদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে উঠে পড়ে নেমেছেন তাহলে কিন্তু আমার পুরো অবিশ্বাস হবে না। কাজটা অমানবিক, বিচ্ছিরি। গ্রামের কুটনি বুড়িগুলোর মতো কুটনামি করে ঝগড়া বাধানো আর কি...