লেখা শুরু করার আগে বাংলা একাডেমীর ডিকশনারী দেখলাম, ব্যবসায়ীর একটা অর্থ দেয়া: 'স্বার্থসন্ধানী চিন্তাভাবনা'।
তাহলে ধর্ম ব্যবসায়ী তারাই, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে 'স্বার্থোদ্ধার সংক্রান্ত কাজে'।
এখানে কী ওয়ার্ড হচ্ছে 'ব্যবহার'। [গাঢ়]এক ধরণের মুখোশ হিসেবে ব্যবহার করা, সাময়িক ভাবে ব্যবহার করা, স্বার্থের প্রয়োজন মিটে যাওয়ার পরে ছুড়ে ফেলে দেয়া।[/গাঢ়]
ধর্মের ক্ষেত্রে কারা মুখোশ ব্যবহার করছে সেটা দেখার আগে দেখি চলুন: দেশের জন্য কারা সত্যিকার হিতৈষী সেটা আমরা বুঝতে পারি তাদের জীবন দেখলে। কেউ যদি দেশের জন্য গলা শুকিয়ে কাঠ করে ফেলেন সকাল বিকাল, এভাবেই ভালোবাসা কুড়ান, অথচ তাদের ব্যক্তিগত জীবনের ব্যবহারে দেশকে ভালোবাসার চিহ্নটুকু দেখতে পারি না, তাহলে বুঝবো তারা স্বার্থউদ্ধারের জন্য দেশের জন্য ভালোবাসার সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করছ। মুখে ফেনা তুলছে দেশ প্রেম দেশ প্রেম বলে, এই দেশ প্রেম ধুয়ে পানি খাচ্ছে, কিন্তু নিজের ছেলে মেয়েদের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে বিদেশে, নিজে কখনও দেশের সাধারণ মানুষের দু:খ কষ্টগুলো ছুয়ে দেখছে না।
মোট কথা, তার বলা কথাগুলোর প্রভাব তার জীবনে কতটুকু সেটা একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝা যাবে, সে আসলে কি কোন বিশেষ ক্ষেত্রে মানুষের ইমোশন ব্যবহার করছে কি না, অর্থ্যাৎ সে ওই বিশেষ অনুভূতি নিয়ে লাভজনক ব্যবসায় নেমেছে কি না। [গাঢ়]যদি তার বলা কথাগুলো তার জীবনে প্রভাবশূণ্য হয়, তাহলে সেই মানুষটার সব কথা আমার কাছে মূল্যহীন।[/গাঢ়]
এখন ধর্ম ব্যবসায়ী। দুই ধরণের হতে পারে ধর্ম ব্যবসায়ীরা।
প্রথমত, যারা আসলে ধর্ম পালনের মুখোশ পড়ে কিন্তু একই সাথে এমন সব কাজ কর্ম করে যার সাথে তার নিজের ধর্মেরই বিশাল তফাৎ। এই কাজটা একটা অফিসের কর্মচারী যেমন করতে পারে, মুখে নুরানী দাড়ি রেখে টেবিলের নিচ দিয়ে ঘুষ নিয়ে, তেমনি করে ইমামের টাইটেল ঝুলানো সমকামী লোকগুলো। দু'টো উদাহরণ দিলাম, কিন্তু সমাজে যেখানে ধর্ম পালন করলে আসলে লাভ হয়, সেখানে এমন উদাহরণ অনেক। তাদের বলা কথার প্রভাব ব্যক্তিগত জীবনে শূন্য। এজন্যই বুঝা যায়, তারা ধর্মকে ব্যবসায়িক লাভে ব্যবহার করছে। ধর্ম ব্যবসায়ী!
দ্বিতীয়ত, [গাঢ়]এমন মানুষেরা, যারা আসলে নিজেরা ধর্ম পালন করে না এবং সেটা এক ধরণের গর্ব ভরেই বলে বেড়ায়! কিন্তু একই সাথে যারা ধর্ম পালন করে, তাদের চিপায় ফেলার জন্য নানা সময়ে ধর্মের বিভিন্ন ব্যাপার "আউট অফ কনটেক্সট" তুলে ধরে কাজ সারে।[/গাঢ়] কুরআনেরই আয়াত, 'তাদের যেখানে পাও, সেখানে হত্যা করো', এটা তুলে দাবী জানিয়ে আমেরিকার একটা লাইব্রেরিতে কুরআন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, অথচ, আয়াতটা ছিল বদরের যুদ্ধের সময়ের আয়াত। একটা সেনাপতি নিশ্চয়ই তার যোদ্ধাদের বলবে না, প্রতিপক্ষকে যেখানে পাও সেখানে আদর করো! তাহলে এই ধরণের মানুষ চিনবেন তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য দিয়ে:
১. তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম পালনের প্রভাব দেখা যায় না এবং সেটা গর্ব ভরে বলে বেড়ান (নিজেকে অতিরিক্ত সাধু প্রমানের জন্য),
২. সময়ে সময়ে তর্কে খাতিরে ধর্মকে তুলে আনবেন, কিন্তু যেহেতু নিজের জীবনে ধর্মের সরাসরি নির্দেশও অমান্য করেন, এ কেবল ব্যবসায়িক খাতিরে বুঝাই যায়!
৩. তারা ধর্ম সম্পর্কে বেশি পড়াশোনা বরাবর নিরুৎসাহিত করেন, কারণ বেশি পড়াশোনা করলে যে জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে!
আমি নিজে ইসলাম ভালবাসি, এবং আমার পুরা জীবনটাই ইসলামের আলোয় রাঙাতে চাই। আমি আজকে ইসলামের কোন ব্যাপারে ভুল হতে পারি, আগামী কাল যখন বুঝতে পারবো, তখন আমি নতুন উপলব্ধি থেকেই কাজ করবো। কারণ এখানে আমার কোন জাগতিক স্বার্থ নেই।
দুই রকম ধর্ম ব্যবসায়ীই ব্লগীয় পরিসরে দেখতে পাচ্ছি। আপাতত হেদায়ত চাচ্ছি সেই সব ধর্ম ব্যবসায়ীদের, যারা এমনি কুরআন হাদীসের রেফারেন্সের দাবী তুলে মুখে ফেনা তুলেন (হিন্ট এক: নিজেরা কুরআন পড়বেন না), কিন্তু এই গুলা দেখানো হলে মুখ ঘুরায় চলে যান:
হাদীস: বিশ্বাসীদের সব সময় অপবাদ দেয়া, গালিগালাজ করা, অশ্লীল কথা বার্তা বলা থেকে দূরে থাকতে হবে। (তিরমিযী)
একবার মুহাম্মদ (সা) মুয়ায (রা) কে বলেন, তোমার জিভকে সব সময় সংযত রাখবে। মুয়ায (রা) আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, 'আমাদেরকে কি আমাদের বলা কথা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে?' মুহাম্মদ (সা) জবাব দিলেন, 'হ্যা। এবং সত্য হলো, বেশির ভাগ মানুষই দোযখে যাবে তাদের জিভের খারাপ ফসলের জন্য।' তিনি আরও বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ এবং আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে না হয় চুপ থাকে।'
মুহাম্মদ (সা) বলেন, শুধুমাত্র একটা ভালো কথা বলার জন্য আল্লাহ কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করবে আবার শুধুমাত্র একটা খারাপ কথার জন্যও সে দোযখে নিক্ষিপ্ত হতে পারে। একজন বিশ্বাসী (ঈমানদার) কখনও গালিগালাজ, অশ্লীল এবং অর্থহীন কথা বার্তায় লিপ্ত হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, মুনাফেকীর বৈশিষ্ট্য চারটি।
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে,
২. যখন প্রতিজ্ঞা করে, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে,
৩. আমানতের খেয়ানত করে,
৪. যখন রেগে যায়, তখন অশ্লীল ভাষায় কথা বলে।
(একটু রেগে আছি মনে হয়। মা পরশু আসবে, সারা বাসা গোছানো লাগবে। কালকে প্ল্যান করেছি এক লন্ড্রী কাপড় ধুবো প্লাস চারটা তরকারী রান্না করবো। ঘুমানো উচিৎ! ওহ, আমার ব্লগে কোন গালাগালি না, নিজের বমি পাত্রে বমি করে নিজেই চেটে খান। থ্যাংকস।)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৭ রাত ৯:৩১