বর্তমানে ‘র্যাব’ মানেই যেনো দেশবাসী ও সাধারণ মানুষের কাছে এক মূর্তমান আতঙ্কের নাম। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বেলায় তো সেই আতঙ্কের মাত্রাটা কয়েকগুণ বেশি। অথচ র্যাব আতঙ্ক হওয়ার কথা ছিলো সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধীর কাছে।
সন্ত্রাসী নির্মুলে র্যাবের ভুমিকা অনেক। সেটা কখনোই অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সেই গৌরব এখন অতীত। এখন র্যাব মানেই গুম কিংবা খুনি বাহিনীর নাম।
সাম্প্রতিক পর পর কয়েকটি কথিত জঙ্গি সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটে বাংলাদেশে। যেগুলোর সবগুলোর সাথেই র্যাবের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
১৭ মার্চ আশকোনায় র্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতি হামলায় হামলাকারী নিহত হয়। র্যাবের কথামত সেখান থেকে হানিফ মৃধা নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে আটককৃত ব্যাক্তি র্যাব হেফাজতে নিহত হয়। মানে তাকে হত্যা করা হয়।
পরবর্তীতে পত্রিকা মারপত জানা যায়, র্যাব যেই হানিফকে বলেছিলো ১৭ মার্চ ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছে, সেটা ছিলো মিথ্যা বানোয়াট কথা। পরিবারের দাবি, হানিফ মৃধাকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারিই তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে র্যাব। শুধু তাই নয়, তার কাছ থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকা ও তার ব্যবহৃত মোটর সাইক্যালটি পর্যন্ত র্যাব নিয়ে আসে।
যমুনা টিভির অনুসন্ধানে যখন সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ এমন ভয়ংকর তথ্য উঠে আসে, তখন র্যাবের কোনো কর্মকর্তা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হলো না।
হানিফ কিভাবে মারা গেলো? আর হানিফকে ২০ দিন আগে গ্রেপ্তার করে কেনো ১৭ মার্চের আত্মঘাতি হামলাস্থল থেকে গ্রেপ্তার বলে মিথ্যাভাবে চালিয়ে দেয়া হলো? র্যাবকে কে জিজ্ঞেস করবে এসব প্রশ্নের জবাব?
এরপর আত্মঘাতি হামলায় নিহত ব্যাক্তির যেই নাম পরিচয় প্রকাশ করলো র্যাব। দেখা গেলো সেই ব্যাক্তি(জুয়েল) মারা যায় নি। সে পত্রিকা অফিসে এসে বললো, আমি তো মরিনি !!
তাহলে কে মরলো সেদিন আত্মঘাতি হামলায়? সেদিন হানিফের মত কোন নিরপরাধকে অপহরন করে এনে আত্মঘাতি হামলা সাজিয়ে হত্যা করা হলো?? এসব প্রশ্ন কে জিজ্ঞেস করবে র্যাবকে??
এমন জঙ্গি নাটকের পরেরদিনই আবার খিলগাঁওতে এক মোটরসাইক্যাল আরোহীকে সিগন্যাল না মানায় গুলি করে হত্যা করে র্যাব। র্যাব পরে জানায় তার কাছে নাকি অনেকগুলো বোমা ছিলো। আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো এসব কথা? কারন তাদের সব কাহিনী তো একে একে মিথ্যা প্রমানীত হয়ে আসছে!!
আত্মঘাতি হামলার মত নাটককারীদের কাছে এই মোটরসাইক্যাল চালককে বোমা দিয়ে মিথ্যা জঙ্গি সাজানোটা খুবই সহজ ব্যপার। তাছাড়া একটি মোটর সাইক্যাল থামানো কি খুবই কঠিন কাজ? র্যাবের কাছেওতো মোটরসাইক্যাল থাকে। তার পিছনে ধাওয়া করে না ধরে কেনো ৬-৭টি গুলি করে তাকে হত্যা করা হলো?? তাকে থামানোর জন্য তো একটি গুলিই যথেষ্ট ছিলো ! আর এতগুলো গুলি করার পরও তার শরীরে বাঁধাই করে রাখা কথিত বোমাগুলো বিষ্ফোরিত হলো না কেনো?
র্যাবের মিথ্যা সাজানো জঙ্গি নাটক শুধু সাম্প্রতিকগুলোই নয়। অতীতেও তাদের ভুরি ভুরি এসব সাজানো জঙ্গি নাটকের প্রমান পাওয়া যায় পত্রিকার পাতায়।
গত ১৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানায় র্যাব। পরে পত্রিকায় শিরোনাম হয়- র্যাবের আটক দুজনকে অনেক আগেই তুলে আনা হয়েছিল?
গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখেও আরো ৫ জঙ্গি গ্রেপ্তারের খবর জানায় র্যাব। পরবর্তীতে সেই ৫ জনকে নিয়ে প্রথম আলোতে শিরোনাম হয়- আগেই তাঁদের তুলে নেওয়া হয়, পরস্পরকে চেনেনও না তাঁরা
এরকম অসংখ্য জাঙ্গি নাটক কিংবা নিরপরাধ লোককে তুলে নিয়ে এসে পরবর্তীতে জঙ্গি সাজানোর উদাহরণ ভুরি ভুরি। অনেকের হয়তো পরিবার বলে কেউ নেই কিংবা পরিবারের কাছে নিহত জঙ্গি নামধারী ব্যাক্তির ছবি না পৌঁছানোয় অনেক ঘটনা অগোচরেই থেকে গেছে।
প্রশ্ন হলো, র্যাব কি জবাবদিহীতার উর্দ্ধে?? তারা কি এভাবেই একের পর এক খুন অপহরণ গুম আর জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন করেই যাবে? আর কত নিরপরাধকে এভাবে জঙ্গি সাজিয়ে হত্যা করবে তারা?? তাদের কি কোনোই জবাবদিহীতা নেই? তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা আদালতের পক্ষ থেকে তাদের কাছে মিথ্যা নাটক সাজানোর ও নিরপরাধ ব্যাক্তিকে জঙ্গি সাজিয়ে হত্যার ব্যপারে জবাবদিহীতা করা হচ্ছে না কেনো?
দেশটা যেনো মগেরমুল্লুকে চলছে! মগেরমুল্লুকেও মনেহয় কিছু জবাবদিহীতা থাকে, কিন্তু এই দেশে কোনো অপরাধের বিন্দুমাত্র জবাবদিহীতাও যেনো নেই। বিশেষ করে দেশের প্রশাসন বা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর বেলায় তো থোড়াই কেয়ার! ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া অনেকদিন আগে ঘরোয়া একটি প্রোগ্রামে বক্তৃতায় খুব গর্বের সাথে বলেছিলেন- “সরকার টিকায়া রাখছে পুলিশ”।
সরকার টিকিয়ে রেখেছে বলেই কি পুলিশ কিংবা র্যাবের কোনো জবাবদিহীতা নেই? জবাবদিহীতা চাইতে গেলেই যদি টিকিয়ে রাখার বদলে ধসিয়ে দেয়? সেই ভয়েই কি সরকার কিংবা সরকারি আদালত তাদের কাছে জবাবদিহীতা চাওয়ার সহস করছে না??
নাকি ক্ষমতা টিকানোর যৌথ প্রচেষ্টা এটা? এই ভয়ংকর খেলা থেকে কবে রেহাই পাবো আমরা?? প্রভু রাষ্ট্রের ইশারায় ক্ষমতা টিকাতে আর কতকাল নিজ দেশের বারোটা বাজিয়ে যাবে এরা?? আর কতকাল র্যাবের এসব মিথ্যা ও সাজানো নাটক আমাদেরকে প্রতিবাদহীন নিশ্চুপ শুনে যেতে হবে? জঙ্গির নামে আর কতজন নিরপরাধের প্রাণ গেলে এই খেলা শেষ হবে??
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১৩