somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেই ভয়ঙ্কর খবরগুলো আড়ালেই থেকে যায় !

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত ৮ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। র‍্যাবের ভাষ্য, অভিযানে আটক ৫ জনই জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের আস্তানা থেকে পিস্তল, ম্যাগাজিন, হ্যান্ড গ্রেনেডসহ ব্যপক পরিমানে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন তাজুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন, আবু জার গিফারি, নূরে আলম ও ইফতিশাম আহমেদ।



র‌্যাবের এসব অভিযান জঙ্গি দমনের জন্য বলা হলেও নানা রকম সন্দেহ এসব অভিযানকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। কারন জঙ্গি নামে যাদেরকে আটক বা হত্যা করা হচ্ছে তারা আসলেই জঙ্গি কিনা সেটা নিয়েই রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। এই সন্দেহের পেছনে রয়েছে যুক্তিসই কারন। যেমন চট্টগ্রামের এই অভিযানেই যেই ৫ জনকে জঙ্গি পরিচয় দিয়ে আটক করা হয়েছে। তাদের দুইজনের পরিবার ইতোমধ্যেই দাবি করেছে তাদেরকে অনেক আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। অর্থাৎ তাদেরকে এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম রেখে হঠাৎ করে একটি অভিযানের নাটক সাজিয়ে অস্ত্র গোলা বারুদ সামনে দিয়ে জঙ্গি সাজিয়ে আটক দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারের দিন ৮ ডিসেম্বর বিকেলেই প্রথম আলোতে নিউজ হয়- চট্টগ্রামে আটক নূরে আলমকে এপ্রিলে তুলে নিয়ে যায় ‘প্রশাসনের’ লোক?



এই নিউজে বলা হয় নূরে আলমের মা নূর নাহার বেগমের দাবি, টেলিভিশনে নূরে আলমের ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত হন এ নূরে আলমই তাঁর ছেলে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নূরে আলম নীলফামারী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ওর বাবা আবদুল কাদের মারা গেছেন। বাসার সামনে আমাদের একটা মোবাইল ফ্ল্যাক্সি লোড, বিকাশ ও ইলেকট্রনিকসের দোকান আছে, সেটা সে চালাত। ১১ এপ্রিল রাত দেড় থেকে দুইটার দিকে যারা আমার ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে গেছে, তাদের পরনে জিনসের প্যান্ট, গেঞ্জি-শার্ট ছিল। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, আমরা প্রশাসনের লোক, ওকে নিয়ে যাচ্ছি ২০ মিনিট পর রেখে যাব। এ ঘটনায় আমি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি, মামলা করেছি, সংবাদ সম্মেলনও করেছি।’

অপরদিকে এই অভিযানের চারদিন পর আজ প্রথম আলোতে শিরোনাম হলো- পরিবারের দাবি, তাজুলকে তুলে নেওয়া হয় ১৩ মাস আগে



এখানে তাজুল ইসলামের বড় ভাই বাহারুল আলম প্রথম আলোকে জানান, তাজুল ইবতেদায়ী পাস করার পরে কারিয়ানা (নুরানি) প্রশিক্ষণ নিয়ে মানিকগঞ্জের মানিকগঞ্জ দারুল উলুম মাদ্রাসার মক্তবে শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে কয়েকটি গাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য এসে তাজুলকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর এ ব্যাপারে আমি মানিকগঞ্জ থানায় তিনবার গেছি। কিন্তু ওসি আমিনুর রহমান আমার জিডি নেননি। পরে জিডি করতে গেছি ফরিদপুরের সালথা থানায়। কিন্তু সেখানেও আমাদের জিডি নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ভাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গত বছরের ২৫ নভেম্বর দৈনিক নয়া দিগন্ত, যুগান্তর ও সালথার একটি স্থানীয় পত্রিকায় ছবিসহ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। কিন্তু তারপর গত এক বছরে আমরা তাঁর কোনো খবর পাইনি। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর র‌্যাব জানায়, সে নাকি চট্টগ্রামের একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে।’

র‌্যাব বলছে তাদের দুদিন আগে চট্টগ্রাম জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ তাদের পরিবার বলছে তাদের একজনকে ৭ মাস আগে এবং আরেকজনকে ১৩ মাস আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।

এই লেখাটি যখন লিখছি ঠিক তখনই প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম দেখলাম- “আদালতে সেই পাঁচজনের দাবি, আগেই তাঁদের তুলে নেওয়া হয়, পরস্পরকে চেনেনও না তাঁরা

আদালত সূত্রে এই নিউজে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ ইফতিশাম আহমেদ আজ আদালতকে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রাজশাহী নগরের মোন্নাফের মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্ধকার একটি কক্ষে (হাজতখানার মতো) তাঁকে আটকে রাখা হয়। হাতে হাতকড়া ও চোখ সব সময় বাঁধা থাকত। গত ২৯ নভেম্বর মাইক্রোবাসে করে তাঁকে চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে আনা হয়। সেখান থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর কাট্টলীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। র‍্যাব সদস্যরাই ওই বাসার ভেতর আগুন ধরিয়ে দেন। পরে চোখ খুললে তিনি ঘরের ভেতর অস্ত্র দেখতে পান। মিডিয়ার সামনে হাজির করার পর মাইক্রোবাসে তুলে র‍্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ওই দিন রাত তিনটার দিকে আকবর শাহ থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানায় প্রথম এই পাঁচজনের সঙ্গে দেখা হয়। এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না।

আগেই যেই দুইজনের পরিবারের কথা বলা হয়েছে সেই কথার সাথে ইফতিশাম আহমেদের এই বর্ণনা মিলিয়ে দেখলে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়। এই হলো আমাদের র‌্যাবের জঙ্গি বিরোধী অভিযানের আসল চিত্র!!!



এরা কেমন জঙ্গি?? এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অন্ধ প্রকোষ্টে চোখ বাঁধা অবস্থায় বন্দি থেকে তারা কিভাবে জঙ্গি কর্মকান্ড চালালো?? বানোয়াট জঙ্গি কর্মকান্ড নিয়ে কেনো র‌্যাবের এই মিথ্যা বুলি? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি জঙ্গি দমন করছে? নাকি জঙ্গি তৈরি করছে? কি কারনে এমন জঙ্গি জঙ্গি খেলা?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যেসব লোকদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাদেরকে হয়তো র‌্যাব বা পুলিশ পরবর্তীতে কোথাও জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেপ্তার করছে নয়তো বন্দুকযুদ্ধের মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করছে। এতে করেই প্রমানিত হয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে যেই গোপন বাহিনী লোকদেরকে গুম বা অপহরণ করছে তারা সত্যিকারের সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরই লোক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে কারনে তাদের অপহরন গুমের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নিচ্ছেনা থানা পুলিশ। ইফতিশাম আহমেদের বর্ণিত ভয়ঙ্কর কাহিনী বাদই দিলাম।

আশ্চর্য ব্যপার হচ্ছে, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের কথিত জঙ্গি গ্রেপ্তারের খবরগুলো খুব ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার ও টকশোতে ব্যপকভাবে আলোচিত হলেও, গ্রেপ্তারকৃত এই কথিত জঙ্গিদের অধিকাংশকেই যে পূর্বেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো, এদেরকে যে এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই গুম করে রেখেছিলো, এদেরকে দিয়ে যে মিথ্যা জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে, এরা যে সত্যিকারের জঙ্গি নয়, এদেরকে যে বিনাকারনে বা শুধুমাত্র বিরোধীদলীয় কর্মী হওয়ার কারনে বা জঙ্গি জুজু জিঁইয়ে রাখার জন্যই কেবল খুবই নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এই ভয়ঙ্কর ব্যপারগুলো বা এ সম্পর্কিত ভয়ঙ্কর খবরগুলো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। টকশোতেও কেউ তেমন একটা আলোচনা করছে না।

দলকানা মিডিয়া আর টকশোজীবি দলকানা বুদ্ধিজীবিকুল জঙ্গি জঙ্গি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। মাদ্রাসা আর ইসলামী দলগুলোকে জঙ্গি তৈরির কারখানা বলে সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যায়। অথচ সরকারের এসব জঙ্গি তৈরির সাজানো নাটক তাদের চোখের সামনে থাকলেও একটিবারের জন্যও প্রতিবাদ তো দূরের কথা স্বীকারই করে না!! এতে প্রমানিত হয় সরকারের গোপন গুম বাহিনী মানুষদেরকে গুম অপহরন করে জঙ্গি সাজানোর মাধ্যমে মুলত এসব সরকারি পেইড মিডিয়া আর বুদ্ধিজীবিকুলের খোরাকই জুগিয়ে যাচ্ছে।

কবে বন্ধ হবে এসব ভয়ঙ্কর জঙ্গি জঙ্গি খেলা? ক্ষমতায় টিকে থাকতে এভাবে আর কত ইনোসেন্টের প্রাণ নিবে জালিম শাসক??
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×