বাংলাদেশে জঙ্গি শব্দটার সাথে নাটক শব্দটা যেনো ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে। অমুক যায়গায় জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ, তমুক যায়গায় পুলিশ জঙ্গি গোলাগুলি, টিভিতে এমন ব্রেকিং খবরগুলো দেখলেই এখন মানুষ স্বগতোক্তি করে উঠে আবার কোন নাটক করতে যাচ্ছে সরকার?? আবার কোন ইস্যু ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে সরকার??
কথিত জঙ্গি অভিযানগুলোতে উত্তর না পাওয়া নানা প্রশ্নই মানুষের মনে এমন ধারনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রশ্নগুলোর পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার কিছু কথাও মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই খালেদা জিয়া তার এক বক্তব্যে বলেছেন-
“এই সরকার কিছুদিন পর পর জঙ্গি ধুঁয়া তুলে। অমুক যায়গায় জঙ্গি এতজন পাওয়া গেছে, তমুক যায়গায় জঙ্গি এতজন পাওয়া গেছে। সত্যিকারের জঙ্গি কিনা জানিনা। কিছু লোক তাদের ধরাই থাকে। এদেরকে না খাইয়ে খাইয়ে, দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখে রেখে তাদের দাঁড়ি চুল বড় বড় হয়ে বিদঘুটে একটা চেহারা হয়ে যায়। তারপরে তাদেরকে জঙ্গি বলে সামনে নিয়ে আসে। আরো পুলিশের গতানুগতিক কতগুলো আছে। ঐ অস্ত্র সস্ত্র সাজিয়ে টাজিয়ে সুন্দর করে বলে এরা জেএমবি বা এরা হরকাতুল জিহাদ বা এরা অমুক, এরা এই করেছে সেই করেছে মানুষ মেরেছে, এদেরকে আমরা ধরেছি। কয়েকদিন পরে দেখা যায় এই লোকগুলির কাছ থেকে কি কি তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো প্রকাশ হয়না। এমন এক অবস্থায় তাদেরকে মেরে ফেলা হয়। কেনো তাদেরকে এভাবে মেরে ফেলা হয়? এর ভিতরে নিশ্চই কোনো রহস্য আছে। ”
খালেদা জিয়ার উপরোক্ত বক্তব্যের সত্যতা মিললো আজ চট্টগ্রামের জঙ্গি অভিযানে। চট্টগ্রামে আজকের অভিযানে ৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয় ও ব্যপক পরিমানে অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই হরকাতুল জিহাদ(হুজি) এর সদস্য বলে জানায় র্যাব।
আটককৃত ৫ জনের মধ্যে একজন নূরে আলম। এই নূরে আলমের মা নূর নাহার বেগম দাবি করেন, টেলিভিশনে নূরে আলমের ছবি দেখে তিনি নিশ্চিত হন এ নূরে আলমই তাঁর ছেলে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নূরে আলম নীলফামারী সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ওর বাবা আবদুল কাদের মারা গেছেন। বাসার সামনে আমাদের একটা মোবাইল ফ্ল্যাক্সি লোড, বিকাশ ও ইলেকট্রনিকসের দোকান আছে, সেটা সে চালাত। গত ১১ এপ্রিল রাতে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে নূরে আলমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন ব্যক্তি। এ ঘটনায় আমি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি, মামলা করেছি, সংবাদ সম্মেলনও করেছি।’
অর্থাৎ নূরে আলমকে প্রায় ৭ মাস আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। এতদিন তাকে আটক রেখে এখন জঙ্গি নাটক সাজিয়ে উপস্থাপন করেছে। তার মানে খালেদা জিয়ার সেই কথা “কিছু লোক তাদের ধরাই থাকে” প্রমানিত হলো। বাকি ৪ জন আসলেই জঙ্গি কিনা, তাদেরকেও এভাবে পূর্বে থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো কিনা সেটাও এখন রহস্য। এসব রহস্যের কোনো সমাধান জানার আগেই দেখা যাবে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা অস্ত্র উদ্ধারের নামে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে।
প্রশ্ন হলো কেনো এই মিথ্যা জঙ্গি নাটক? জাতির সাথে কেনো এই তামাশা?? কেনো জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নিরপরাধ মানুষগুলোকে এভাবে হত্যা করা হচ্ছে?? একদিকে পশ্চিমাদের বলছি দেশে কোনো জঙ্গি নেই, আইএস নেই। অন্যদিকে কিছুদিন পর পর এখানে সেখানে মিথ্যা জঙ্গি নাটক সাজিয়ে এমন জঙ্গি জঙ্গি খেলার হেতু কি??
এটা কি পশ্চিমাদের কাছে জঙ্গি দমনের সক্ষমতা প্রমান করে প্রতিবেশি দাদাদের মনতুষ্টির চেষ্টা? দাদাদের বাড়া ভাতে পশ্চিমা ছাই পড়াকে রুখে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রাণপন চেষ্টা?? নাকি অন্য কিছু??
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৯ জন তরুণ হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে গেছে। কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা তাদের। তাদের পরিণতিও যে কল্যাণপুর বা গাজীপুরে কথিত জঙ্গি নিহতের মত হবে না, তারই বা গ্যারান্টি কি? অবিভাবকরা আজ আতঙ্কিত তাদের তরুণ সন্তানদের নিয়ে। কখন জানি তার আদরের নির্দোষ ছেলের মুখটি ভয়ঙ্কর জঙ্গির রক্তাক্ত লাশ হয়ে ভেসে উঠে টিভির পর্দায়!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০