সদা হাস্যোজ্জ্বল অষ্টাদশী মেয়েটি প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে অন্যদের জাগিয়ে দিতো। একদিন মেয়েটি কাউকেই ঘুম থেকে জাগায়নি। কাজের বুয়া সুফিয়া সকাল ৮টায় মেয়েটিকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য ডাকাডাকি করে। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ নেই। সুফিয়া সেখান থেকে গিয়ে মেয়েটির মাকে ডেকে আনে। মা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পান, খাটের ওপর এলোমেলোভাবে শুইয়ে আছে তার আদরের কণ্যা। কাপড়-চোপড় খাটের নিচে পড়ে রয়েছে। এ দৃশ্য দেখে অজানা আশঙ্কায় মায়ের বুক কেঁপে ওঠে। তিনি ওই ঘরের পেছন দিকের জানালার কাছে গিয়ে দেখতে পান, গ্রিল গোল করে কাটা। জানালা দিয়ে তিনি ভিতরে তার মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। চোখ ছিল কালো কাপড়ে বাঁধা। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ দরজা ভেঙে রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ নিশ্চিত হয়, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরে জানালার গ্রিল কেটে খুনিরা পালিয়ে যায়।
সম্পত্তির লোভে স্বয়ং মামার (আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাদের) হিংস্রতার শিকার এই অভাগা মেয়েটির নাম রুশদানিয়া বুশরা ইসলাম। ২০০০ সালে সংগঠিত এই ঘটনাই চাঞ্চল্যকর বুশরা হত্যা নামে পরিচিত।
খুনি সরকারি দলের নেতা হওয়ায় তৎকালীন সময়ে পুলিশ গড়িমসি করলেও মিডিয়ার ব্যপক প্রচারণার কারনে পুলিশ বাধ্য হয়েছিল কাদেরকে গ্রেফতার করতে। পরে বুশরা হত্যা মামলায় কাদেরের মৃত্যুদন্ড ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন সাজা হয়।
গতকাল আদালত সেই খুনি কাদের ও তার স্ত্রীকে খালাশ দিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে খালাশ দেয়ার মানে তারা বুশরাকে খুন করেনি। তাহলে বুশরাকে খুন করেছে কে? সেটাও আদালত বলে দেয়নি। তাহলে বুশরা কি হত্যা হয়নি? নাকি বুশরা নামে কেউ আদৌ ছিলোই না!!! সব মিডিয়ার সৃষ্টি !!
আগে রাষ্ট্রপতি দলীয় খাতিরে ফাঁসির আসামিকে ক্ষমা করে দিতো। এখন প্রধান বিচারপতিও সেটা শুরু করেছেন। তিনি আবার বক্তৃতা বিবৃতিতে ন্যায় বিচারের বুলি আওড়িয়ে বেড়ান। অথচ তিনিই খুনের আসামীকে খালাশ দিয়ে বুশরাদের বাবা মাদের দ্বিতীয়বার কন্যা হারানোর শোকে বিহ্বল করেন।
বুশরার পিতা ছিলেন একজন সহকারী পুলিশ সুপার। যেই পুলিশের ওপর ভর করে আজ অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। যেই আওয়ামী লীগের জন্য পুলিশ এমন কোনো ঘৃণ্য কাজ নেই করেনি। বাসা থেকে ধরে ধরে এনে শত শত বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করছে, গুম করছে, অপহরন করছে, মিছিল মিটিংয়ে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। স্বয়ং ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া নিজ মুখেই বলেছেন সরকার টিকায়া রাখছে পুলিশ, রাস্তায় আগুন ধরাইছে পুলিশ, ৫ জানুয়ারির ইলেকশন করাইছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগের জন্য জানপ্রাণ দেয়া পুলিশ নিজেই যখন আওয়ামী লীগ কর্তৃক অহরহ অবিচার আর নির্যাতনের স্বীকার হয়, থাপ্পড় মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়, পিটিয়ে রক্তাক্ত করে, তখন সাধারণ জনগনের কি অবস্থা সেটা সহজেই অনুমেয়। বিচার যখন নির্বাসনে চলে যায়, গুটিকয় কিছু উচ্ছিষ্টভোজি পাবলিকের ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই স্লোগানে যখন বাংলালিংক দামে ফাঁসি কার্যকর করা হয়, আইন পরিবর্তন হয়ে যায়, সংসদ থেকে বিচারের রায়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়, তখন বিচারের বানী নিবৃতে কাঁদা ছাড়া আর উপায় কি??
বুশরার খুনিরা মাপ পেয়ে গেছে, বিশ্বজিতের খুনিরাও যেকোনো সময় মাপ পেয়ে যাবে!! কারন তারা সরকার দলের লোক। অবৈধ সরকার দলের লোক। তাদের জন্য কোনো আইন নেই। তারা আইনের আওতার বাইরে, নিয়মের বাইরে। তারা তো ক্ষমতায়ই এসেছে অবৈধভাবে, বেআইনিভাবে, তাদের কাছে আইন কামনা করাটাই বরং বোকামী!!
আসেন ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শুনে হাততালি দেই আর গুন গুন করে গাই “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, একদিন জাগবেই সেই জনতা” ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫১