গল্পটির চরিত্র গুলো বাস্তব হলেও গল্পটি ইন্সপায়ার্ড।
জানালার ওপাশ থেকে ভোরের আলোর ঝটা একদমই পছন্দ নয় সাবিতের। বাবা মা এর দাম্পত্য জীবনের চতুর্থ ফসল সাবিত। একটু বেশিই নিরুত্তাপ আর কিছুটা একগুয়ে স্বভাবে নিজকে বাকি দুনিয়া থেকে একটু আলাদা রাখাই যেন সৃষ্টিকর্তার দেওয়া একমাত্র কাজ তার জন্য। তো যেটা বলছিলাম ভোরের আলো আটকাবার জন্য কর্মযজ্ঞের কমতি ছিলোনা সাবিতের ছয়ফিটের ছোট্ট রুমে। ওই আলোটা যেন তার কাছে সকালের পানির ঝাপটা মনে হতো। যাই হোক জীবনের সৃষ্টিশিল সকল কাজ ফেলে একমাত্র সাবিত চিনেছিলো কিছু ভার্চুয়াল দুনিয়ার বন্ধুদের। ফিলিপিনো বা জাপানিজ বন্ধুগুলোর সাথে কথা বলার জন্য সারাদিন গেমের আলো জমকালো দুনিয়ায় বুদ হয়ে কেটে যেতো সারাদিন। যেন লম্বা কোন শীত ঘুমে সাবিত ঘুমিয়ে আছে, হারিয়ে গেছে স্বপ্নের দুনিয়াতে। বাবা প্রাক্তন শিক্ষক ও মা বরাবরই ঘরে কাজ করেই এসেছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে আর বড় ভাই তার মতো। সাবিতের এই চারিত্রিক গঠনগত ট্রুটি চোখে পড়েনি কারোরই। সংসারে অভাব অনোটন যাই হোক সাবিত কিছু শুনতে চায়না চায়নি কখনো।
ইউনিভার্সিটি ক্লাসগুলোর এ্যাটেন্ডেন্স শিটে সাবিতের নাম তো আছে, উপস্থিতি শূণ্য। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই একদিন ভোর ঠিক তিনটা বেজে চৌত্রিশ সাবিত ঘুমিয়ে পড়লো গেম অন থাকা অবস্থায়ই। ঘুমটা ভেঙ্গে সে দেখলো সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ একেবেরেই পরিচিত ছিলো না কিছুই। তারপরও কিছু কিছু যেন ঠিক পরিচিত ঠেকলো।
যেন ভুলে কেউ সাবিতের ঘরের নকশাটা ঝুল আর ধুলো দিয়ে বোঝাই করে দিয়েছে। কিছু বোঝার আগেই দরজা খুলে গেলো আর সামনের পথ গিয়ে পড়লো একটা কমন গ্রাউন্ডে যেখানে আরো অনেকেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে নিজেস্ব ঘর থেকে। কোন অদৃষ্য উৎস থেকে কেউ বলে উঠলো সবাইকে আপসাইড ডাউনে স্বাগতম। আপনারা অনেকেই অবাক হয়েছেন আপনাদের ঘুম ভাঙার পর আমরা জানি। তবে এটা কোথায় তার প্রশ্নের উত্তর কোনদিন আপনারা পাবেন না। এটা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারের ঐক্যমত্যে তৈরী করা একটি কমন ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যাটেলগ্রাউন্ড যেখানে আপনাদেরকে আনা হয়েছে দেশগুলোর অনপ্রোডাক্টিভ জনগোষ্টিদের সামাজিকিকরনের শতকরা সম্ভাবনা বিশ্লেষনের পরে। এই প্রকল্পে আপনারা তারাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যাবেন যারা সবাইকে হারিয়ে জীবনের সঠিক মূল্যবোধে ফিরে যেতে পারবেন। অথবা আটকে যাবেন লুপে বার বার প্রথম থেকে।
যেন যে গেম সাবিত খেলে কোন গেমের ইন্টারফেস এর মতো করে সাজানো কোন গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছে সাবিত আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বর্ণের ও গোত্রের মানুষ। ব্রিফং চলতে থাকলো, বর্তমানে আপনারা নিউরো কানেক্টর দিয়ে আটকে আছেন পৃথিবীরই ভূগর্ভে কোন স্থানে যাকে আমরা নাম দিয়েছি আপসাইড ডাউন এবং প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে ঘটা ঘটনা সেটা স্পর্ষ হোক বা কথা বলা স্বাভাবিক ভাবে শুনতে ও অনুভব করতে পারবেন। তবে স্বাভাবিক জীবনে গিয়ে কখনোই কাউকে বলা হলে আপনাদেরকে পুনরায় আবার গেমে ফিরিয়ে আনা হবে এবং স্বাভাবিক জেলের মতো সাজার দন্ডবিধী অনুযায়ী গেমে অবস্থান করতে হবে।
সাবিত বুঝতে পারলো একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশ কটি ভাষায় বলা হোলো।
এই পুরো গেমটি তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে যার কোন পূর্বাভাষ আপনাদের দেওয়া হচ্ছে না এটা সময়ের সাথে আপনাদের বুঝে নিতে হবে। মনে রাখবেন এটা একটা সামাজিকিকরনের প্রকল্প যারা আপনারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তাদের ফিরিয়ে আনাই এই গেম বা প্রকল্পের উদ্দেশ্য।.....................(চলবে)
১. ৩০ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:০৮ ০