( উৎসর্গঃ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি । যাঁদেরকে স্বদেশের মাটি পরম মমতায় আগলে রেখেছে । )
- মা ভাত খাবো না । ওয়ক থু । ভাত কেউ খায় ?
- কেন বাবা ? অবশ্যই ভাত খেতে হবে। ভাত না খেলে পেটে পোকা হবে । এই পোকা লাফালাফি করবে । তখন বুঝবে মজা ।
- হোক পোকা । তাও খাবো না । আচ্ছা মা, পোকা দেখতে কেমন হবে ? কার্টুনের মতন হবে মা ?
- না , এই পোকা হবে ভয়ঙ্কর । দাঁত হবে বড় বড় । হলুদ রঙের । এই দাঁত দিয়ে পেটে কামড় দিবে ।
- মা পোকারা দাঁত মাজে না । ছি ছি ছি । মা পোকাদের তুমি বোকে দিবে , আচ্ছা মা । দাও , ভাত দাও মা। পেটে পোকা কামড়াচ্ছে ।
খোকন এই বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো । পেটে হাত দিয়ে মুখ বাকালো । ভাব এমন যে সত্যি সত্যি তার পেটে পোকা কামড় দিচ্ছে । সেই অবস্থায় ভাত খাওয়ার জন্য মুখ হা করে রেখেছে । মিতা তার ছেলের কাজ দেখে হেসে ফেললেন । ছেলে বড় হচ্ছে এক গুন , তার দুষ্টুমি বড় হচ্ছে তিন গুন । সব হচ্ছে তার বাবার কারনে। ছেলে বাবা বলতে পাগল । বাবা ছেলে বলতে দুই ডিগ্রি বেশি পাগল । খোকনের বাবা জামিল আহমেদ আর্মির মেজর । খুবই রাগি মানুষ । একবার চড় দিয়ে এক লোকের নাকি দুইটা দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন। এই গল্প শোনার পর খোকন তো হেসেই কুটি কুটি । যখন তার দুধের দাঁত নড়ে যায় , বেথা হয় তখন কাউকে হাত দিতে দেয় না । বাবার জন্য বসে থাকে । বাবা আসলেই দৌড় দিয়ে কাছে যায় । কাছে গিয়ে বলে " বাবা, বাবা আমাকে চড় দাও । চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দাও । খুব বেথা বাবা । জলদি চড় দাও । " জামিল সাহেব হেসে ছেলে কে জড়িয়ে ধরেন । যা ছেলে হয়েছে তার ।
- মা, বাবা কখন আসবে ?
- আসবে বাবা । কাজ শেষ হলেই চলে আসবে ।
- মা, মা আজ বাবা আসলে বলবো পোকাদের চড় দিতে । এরা দাঁত মাজে না । চড় দিয়ে হলুদ দাঁত ফেলে দিবে। কেমন হবে মা । আমরা এই দাঁত নিয়ে খেলবো , ঠিক আছে মা ।
মিতা তার ছেলের কথা শুনে হাসতে থাকেন । খোকন এখন কথার পিঠে কথা বলে । আজ খোকনের বাবা আসলে বলতে হবে ছেলে বড় হয়েছে । এখন পড়াশোনা দরকার । স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে । আচ্ছা আজ ওর বাবা এতো দেরি করছে কেন ? আজ তো ওর জলদি আসার কথা । মিতা আজ খুব আগ্রহ করে ওর জন্য পায়েস রান্না করেছে । ও পায়েস খুব পছন্দ করে। পায়েস পেলে মানুষটার আর কিচ্ছু চায় না । মিতা খুব ভালো পায়েস রাঁধে । তার পায়েস রাঁধার গোপন রেসিপি আছে । এইটা তার আবিষ্কার । এই কারনে জামিল তাকে পায়েস বউ বলে ডাকে ।
অনেক বেলা হয়ে গেলো । জামিল এখনো আসছে না । মিতার কি করবে বুঝতে পারছে না । ও এতো দেরি করছে কেন । মিতার চিন্তা বাড়লে ও একশো থেকে উলটো করে গুনতে থাকে । এখন সে এই কাজ করছে । কুড়ি পর্যন্ত গুনতেই মিতার ফোন বেজে উঠলো । ও পাশ থেকে জামিল কথা বলছে ।
- মিতা খোকন কোথায় ?
- এই তুমি আজ এতো দেরি করছ কেন । আমি তোমার জন্য রান্না করে বসে আছি । খোকন ঘুমাচ্ছে গো । তোমার কথা বার বার বলছিল ।
- মিতা শোন , আমাদের এখানে সমস্যা হয়েছে ।
- এই কি সমস্যা হয়েছে । তোমার বিপদ হয় নি তো ।। তুমি ভালো আছো তো ।
- মিতা শোন আজ বিডিআর এর দরবার হলে কিছু সমস্যা হয়েছে । আমি এখানেই আছি । ওরা গুলি করছে । - তুমি চিন্তা করো না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
মিতা কাঁদতে শুরু করেছে । 'এই শোন আমি কিচ্ছু বুঝি না । তুমি ওখান থেকে চলে আসো । ওখানে তোমার থাকার দরকার নাই । তুমি চলে আসো প্লিজ ।'
- মিতা শোন , আমার কিচ্ছু হবে না । খোকন কে দেখো । রাতে একসাথে খাবো ।
- না না , তুমি এখনি চলে আসো । তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না । তুমি চলে আসো প্লিজ । দোহাই তোমার । আমি তোমার জন্য পায়েস রান্না করেছি । তুমি চলে আসো ।
মিতা শোন ওরা অনেক কাছে চলে এসেছে । পরে কথা বলবো । মিতা শোন ............... খোকন ............।।
ওপাশ থেকে কল কেটে গেছে । মিতার খুব হতাশ লাগছে । চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে । ও বার বার বলছে ' তুমি চলে আসো । প্লিজ তুমি চলে আসো ।' কান্নার শব্দ গোপন করতে গিয়ে মিতার বুক ফেটে যাচ্ছে । খোকন ঘুম থেকে উঠে পড়েছে । খোকন মার কান্না দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । কি করবে বুঝতে পারছে না । সে মার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । "মা , ও মা । কান্না করলে পোকা আসবে । পেটে কামড় দিবে মা । " মিতা খোকন কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো ।
ঘটনা ২ঃ
মিতা রাতের খাবারের আয়োজন করেছে । আজ শুধু পায়েস দিয়ে রাতের খাবার খাওয়া হবে । তাদের তিনজনের জন্য তিনটা বাটি । খোকন তার পছন্দের লাল বাটি নিয়ে বসে আছে । ও খুব অস্থির । বার বার প্রশ্ন করছে ।
- মা বাবা কখন আসবে । পায়েস তো ঠাণ্ডা হয়ে গেলো । ও মা ঠাণ্ডা পায়েস খেলে পেটে পোকা হয় তো ।
মিতা চুপ করে বসে আছে । জামিল বলেছে রাতে একসাথে খাবার খাবে । ও মিথ্যা বলে না । ও অবশ্যই আসবে । এর মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে । ও সব ঠিকঠাক করেই আসবে । পথে বোধয় আটকে গেছে ।