বৃত্তীয় রশির অদ্ভুত দুলন দেখতে ব্যাপক ভালো লাগে আজকাল ,
মৃত সব স্বপ্নের কবরে লম্বাচওড়া নারীর মত সেগুনবৃক্ষ দাঁড়িয়ে ;
তাহাদের গ্রীবা থেকে ঝুলে পড়ছে স্পন্দিত রশি
প্রসব-উত্তর দুধে ভারী স্তন যেন প্রেমিকের হাতে ;
( বিনাশের তরে বুকে আজ খুব জ্বালা
বড্ড প্রবল জীবনের এ অসুখ
তাই এই ক্ষণে সব ভরসায় তালা
জিহ্বাতে চাটি ধ্বংসের বুক )
অভ্যাসদোষে অবশ্য খেয়ে ফেলি ঔষুধপত্র মাঝে মাঝে ;
পিতার ডাক্তার বন্ধুর নিপুণ কাউন্সিলিংয়ের পরে কিছুদিন
পোড়োজমিনে ফের ভাবি লাঙল আর মই নিয়ে নামার
আর প্রেমিকা এবং ঈশ্বরের বিশ্বাস রাখার ;
নিয়ন আলোর ভিতর আমার চেতনা কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর
ভূতগ্রস্ত বালকের মতন তৃষ্ণায় যখন ফিরে আমার শরীরে
এবং দুই টন বলের চাপে পিষে যেতে থাকে আমার করোটি
তখন বুঝি , গ্যালাক্সির ক্ষুদ্রতম চিপার তুচ্ছতম উরুর ভাজে
গজিয়ে ওঠা এক নীল পৃথিবীর এক তুচ্ছতর বালস্য বালের জীবন যদি
চরম যন্ত্রণায় আর আর্তনাদে ভরে তবে তাতে সিস্টেমের কিছু আসে যায় না
ও এ অবস্থায় তদবির অফলপ্রশু এবং আশাবাদ অবশ্য-অসম্ভাব্য এবং নিশ্চিত ব্যর্থ ;
ততোধিক শ্রেয় ট্রিগার অথবা রশির পাক দেখে হস্তমৈথুনে মেতে ওঠা ।
চিরন্তন সুখ একদা কতটা বাস্তব এবং সত্য বলে মনে হত
স্রেফ ক্ষণস্থায়ী পীড়া যেন মস্তিষ্কের স্নায়বিক সব ক্ষত ;
তবু নেই ভয় ; হবে যেন সত্যের-ই জয়
জীবন এবং ঈশ্বর স্যাডিস্ট নয় ;
আজো আমার চোখের আগায় সত্য-ই নাচে
তাতে অবশ্য আনন্দ নেই ; কেননা বেদনা চিরস্থায়ী বাঁচে
গিলোটিনের নিচে শুয়ে শুয়ে ঈশ্বরবিহীন আমার সময় কাটে ;
আদৌ ন্যায় , শেষদিন আর ঈশ্বর নামের কিছু আছে ?
(এই দুই চক্ষুতে নামুক আঁধার
পড়বে না তাতে আলোর বাজারে টান
কিছুই আসবে যাবে না তোমার-তার
তাই ছেড়ে দাও ; দেহে বিষাক্ত প্রাণ )
অথচ আমার এখনো মনে পড়ে ; যখন
পিজি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শুয়েছিলাম এবং নিউরোসার্জনদের পিছনে
তাকিয়ে ছিল আমার দিকে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে আমার জননী ও স্বজনেরা
তখন নিজেকে পুনর্জন্মপ্রাপ্ত শিশুর মত নিষ্পাপ বোধ হয়েছিল
যেন এইমাত্র অন্ধকার জরায়ু থেকেই এই প্রথম আমার চক্ষুতে এসে বসল
মহাপৃথিবীর মহামহিম আলো ; যেন এখনি আমি চলে যাবো বিশ্বের দরবারে
এবং হয়ে উঠব কোনো পাঠ্যবইভুক্ত মনীষী ;
চামড়াতে ছুড়ির দাগ বেজায় ব্যর্থ এবং অসার
শুধুশুধু বাড়তি ঝামেলা এবং অর্থনষ্ট ;
তখনো বুঝতাম যদি
হসপিটালের করিডোরে ক্ষয়িষ্ণু রোদে মুমূর্ষু লক্ষকোটি
অণুজীবের মরণের মতন স্বাভাবিক মানুষের পরাজয়
তবে হয়ত আজ এই সময়ে এসে
স্মৃতির উপর আগাছা হয়ে বেঁচে থাকতে হত না।
যদিও আছি বর্তমানে বেঁচে
এই বুকে তবু যদি কোনোদিন সাহস আসে
যদি কোনোদিন ঝুলে পড়া রশির স্তন আমাকে ভালোবাসে
অথবা ট্রিগারের লৌহমুখ আমার করোটির দিকে হাসে
তবে ছুটিপ্রাপ্ত কিশোরের মত বেঞ্চ লাফিয়ে উদ্যান পেরিয়ে
চলে যাবো সীমাহীন হর্ষে নির্বাণের চরম স্ফুর্ততায় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৩