নগরে এখন সন্ধ্যা ; ফিরে আসা শুধুশুধু তাই এই ঘরে
ঝুলে থাকা মশারির বিষণ্ণ পেরেকে -
ছাদ স্পর্শ করা অবসাদের অসার কাষ্ঠদন্ডে
ক্রুশবিদ্ধ হতে। সহজেই অথচ লাফিয়ে পড়া যায়
ডবল ডেকার বাসের সামনে কিম্বা ব্রিজের উপর থেকে
ধূসর কংক্রিটে ; অথবা দরজা বন্ধ করে রশি আর ফ্যানের সাহায্যে
দিব্যি ঝুলে থাকা যায় ধ্যানমগ্ন বাদুরের মত
অনন্ত নির্বাণে । তবু জীবনের মত কোনো কিছু
ফিসফিস করে হৃদয়ের ভিতর সম্ভাবনার কথা
বলে ; বলে এবং বলতে থাকে। বলেঃ
এখনো অনেকগুলো ক্ষতে লবণ ছিটানো বাকি
তারা তোমার দিকেই চেয়ে আছে, তুমি কি তাদের জাগাবে না?
দেখবে এবার ঠিক ঠিক স্নায়ুতে এমন আর্তনাদ উঠবে যে ,
তুমি তোমার ঘরের ভিতরে বসেই পিংক ফ্লয়েডের কনসার্টে চলে যাবে ,
দেখবে এবার ঠিক ঠিক কোষে এমন প্রলয়লীলা ঘটে যাবে যে ,
তুমি তোমার ঘরের ভিতর বসেই হোয়াইট হাউসে চলে যেতে পারবে ,
দেখবে এবার ঠিক ঠিক স্মৃতিতে এমন ধাক্কা লাগবে যে ,
তুমি তোমার ঘরের ভিতর বসেই নিতে পারবে ব্রেসিয়ারের সজীব সুঘ্রাণ,
তুমি কি সেটা চাও না? যদি চাও তবে বাঁচো , তবে বাঁচো
জীবনে ব্যথা পাবার সম্ভাবনা কখনোই ফুরিয়ে যায় না । ব্যথায় আস্থা হারিয়ো না।
নগরে এখন রাত। আমি ক্রুশকাঠে ঝুলে আছি ।
দুই হাতের ছিদ্রাল তালুর ভিতরে শত জোঁকের বিস্তার
ঝুলন্ত শরীরে হাড়ে হাড়ে এক অনিবার্য ক্ষয়ের সংবাদ
দুই চোখের কোটরে অনিদ্রার ধূসর পাথর
সত্ত্বার কোমল সব পথে একরোখা হাইহিলের আচড়
এইসব।
টের পাই। অনুভব করি চতুর্দিকে ধেয়ে আসে
চার্চের ঘণ্টার প্রতিধ্বনি , বাইবেলের কোরাস ;
আমার অতীত খন্ড খন্ড হয়ে লুটায় আমার ভাঙ্গা পায়ে ;
আমার প্রেমিকা মাতামেরির মত বুলোয় আমার ক্ষতে তার
মায়াবী আঙ্গুল । মনে হয় ঈশ্বরের ডানপার্শ্বে অবস্থান ।
অতঃপর জীবন আমাকে ফিসফিস করে বলে ,
আজকের জন্য আর নয়। এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
নগরে এখন ভোর। নগরে এখন ঘুম।
চোখের কোটরে ক্ষতগুলো স্বপ্নে দেখে
আগামী সন্ধ্যায় ক্রুশবিদ্ধ আমার নন্দিত মুখ।
কানের লতিতে জীবনের স্বর বসে থেকে বলেঃ
তবে বাঁচো , তবে বাঁচো, তবে বাঁচো।
অথচ কত সহজেই কত সহজেই......
সহজেই অথচ লাফিয়ে পড়া যায়
ডবল ডেকার বাসের সামনে কিম্বা ব্রিজের উপর থেকে
ধূসর কংক্রিটে ; অথবা দরজা বন্ধ করে রশি আর ফ্যানের সাহায্যে
দিব্যি ঝুলে থাকা যায় ধ্যানমগ্ন বাদুরের মত অনন্ত নির্বাণে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১৩