ঘরের দেয়ালটা আমাদের ক্যানভাস হয়েছে কখনও
ঘরের কোনায় কোনায় স্মৃতি বুনছে তখনও।
এই ঘর তখন উপস্থিত থাকে যখন এই দুনিয়ায় প্রবেশ করি।
জন্মের পরে সাদা তোয়ালে করে এই ঘরেই প্রথম প্রবেশ করি।
ঘরটা সাজানো গোছানো পরেও কেন যেন কিছু একটা মিসিং থাকে।
ঘরের দেয়ালে বাবা মার কাঁধে হাত দেওয়া একটা ছবি ঝুলতে থাকে।
এই ঘরটা পুরনো কাঠের ঘোড়াটাকে।
পুরনো খেলনার ঝুড়িটাকে।
শৈশবের দুষ্টামি গুলোকে।
আগলে রাখে স্টোরের রুমেটাতে।
এরপর যখন গরম কিংবা ঈদের ছুটি আসে
নতুন ঘরে যাওয়ার একটা দাওয়াত নামা আসে,
এটা কোনও ছুটিতে যাওয়া হলিডেহোম না
এটা হল নানা দাদাওয়ালা ঘর।
ওখানে শেশবটাকে নতুন করে ভালোবাসি।
ফেরার সময় দাদীর বানানো তিলের নাড়ু কিংবা নানীর বানানো আচার নিয়ে আসি।
এর পরে যখন ঘর আসে; এটা বুঝতে হলে আপনাকে হতে হবে মহাবীর।
ওই ঘরটা আসলে কোনও বন্ধু কিংবা বান্ধবীর।
ওই ঘরটা একেবারে পারফেক্ট হয়,
ওই ঘরটা এমন হয় যেমনটা আপনার ঘর একেবারে না।
তো ঘরটা কোনও বন্ধু কিংবা বান্ধবীর থাকে।
ওই ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস নিজের ঘরে দেখার স্বপ্ন থাকে।
যদিও ওই ঘরটা পরের গলিতে থাকে
কেন যেন ঘরটা নিজের বড় আপন লাগে।
এই ঘরটার সবকিছু সবার নজরে আসে।
আমরা যার স্কুলে টিফিন খাই; ওটা এই ঘর থেকেই আসে।
ওই ঘরে শুক্রবারের বিকেলটা কি সুন্দর কাটে।
এরকম ঘর আমিও বানাবো, এরকম একটা স্পিরিট আসে।
এরপর এমন একটা সময় আসে, যখন কোনও সুন্দরীকে দেখে মনে ঘন্টা বাজে।
তখন ঘরে একটা কোণায় রঙিন বোতল থাকে, আর সারারাত গিটার বাজে।
গ্রুপস্টাডির নামে সব পাগলদের জমা এদিকে হয়।
এ প্লাস বি স্কয়ারের জায়গায় জানালা দিয়ে সিগারেটের ধোয়া বের হতে থাকে।
ওই ঘরটা ওই বন্ধুর হয়, যার ভাবনা চিন্তায় একটু ভাবুক ভাবুক ভাব থাকে।
কলেজ জীবন ওই ঘরটা খালি হতো কোনও এক ফাঁকে।
জীবন আগে বাড়ে। যৌবনে প্রবেশের পরে নিজের ঘরের মতো কিছু নেই এই বুঝটা চলে আসে।
যখন চাকরির খোঁজার কিংবা জীবনে সামলে নেওয়ার একটা চাপ থাকে।
তখন জীবন, মেস কিংবা শেয়ারে থাকা ঘরে নিজের একটা ছাপ থাকে।
মেসের মধ্যে এক রকমের লোক আসে। কেউ ভীষণ কাছের। কেউ ভীষণ আজব। কারও সঙ্গে দুবছরেও হয় না ঠিক মতো কথা।
ঘরের এক কোনে ঝুলতে থাকে ভেজা জামা। শুকাতে থাকে আন্ডারওয়ার।
যখন নিজের ডাল রুটির একটা ব্যবস্থা হয়। তখন সুযোগ বুঝে ওই মেসের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বের হওয়ার সময় মেসের ওই নোংরা দেয়ালের জন্যও মন খারাপ হয়।
এখন সময় যখন জীবনের ঠিকানা পরিবর্তনের তখন জীবনে স্যাটেল হতে চেয়ে, আপনি বুঝে শুনে লোন নেন ব্যাংক থেকে।
কিনে নেন কিস্তিতে একটা ঘর, যে ঘরের নেইমপ্লেটে নিজের নাম লেখা থাকে।
নিজের নতুন ওই ঘরের চার দেয়ালে যখন একাকিত্বে ধরে।
তখন ঘরটাও নতুন কাউকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
একটা মেয়ে; যে ওই ঘরটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়।
ওই মেয়ে, যার চুড়ির শব্দে ঘরটাকে রাজপ্রাসাদের ফিলিংস দেয়।
বাড়তে থাকা বয়সের সাথে, ঘরের দেয়ালের রঙ যখন শুকোতে থাকে।
তখন ওই মেয়েটার গর্ভে আপনার শৈশব ফিরে আসে।
তখন আপনার কাহিনী যেন আবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে।
সময় যেন আবার ঘুরতে থাকে।
সময়টাও ভীষণ জরুরি। যখন আপনি একসময় ঘর থেকে সাদা কাফনে করে বের হয়ে যেতে থাকেন।
ওই ঘর তখন আপনার কেবল একটা ছবি ঝুলতে থাকে।
তবুও ওই ঘরের মানুষের মনে আপনার স্মৃতি বাজতে থাকে।
ওরা ভীষণ ভাগ্যবান যারা একটা ঘরের মধ্যেই নিজের সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। সাদা তোড়ালে থেকে সাদা কাফনের সফর একই ঘরে করে নেয়।
ঘর সম্পর্কের হোক,
মেসের হোক
কিস্তির হোক
কিংবা
ঘর শৈশবের হোক
ঘর বন্ধুর হোক
কিংবা নানী দাদীর স্মৃতির হোক।
এই ঘর কেবল শান্তি দেয়, মুখে হাসি দেয় আর রাতে শান্তির ঘুম দেয়; দেয় ভীষণ খুশি।
এত বড় সফরের পর ঘরের সব জায়গায় নিজের নাম লিখে দিতে ইচ্ছে করে।
মৃত্যুর পরে জান্নাত জাহান্নাম জানি না। তবে দুনিয়াতে ঘরের থেকে শান্তির কিছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪৬