somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘর

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘরের দেয়ালটা আমাদের ক্যানভাস হয়েছে কখনও
ঘরের কোনায় কোনায় স্মৃতি বুনছে তখনও।

এই ঘর তখন উপস্থিত থাকে যখন এই দুনিয়ায় প্রবেশ করি।
জন্মের পরে সাদা তোয়ালে করে এই ঘরেই প্রথম প্রবেশ করি।

ঘরটা সাজানো গোছানো পরেও কেন যেন কিছু একটা মিসিং থাকে।
ঘরের দেয়ালে বাবা মার কাঁধে হাত দেওয়া একটা ছবি ঝুলতে থাকে।

এই ঘরটা পুরনো কাঠের ঘোড়াটাকে।
পুরনো খেলনার ঝুড়িটাকে।
শৈশবের দুষ্টামি গুলোকে।
আগলে রাখে স্টোরের রুমেটাতে।

এরপর যখন গরম কিংবা ঈদের ছুটি আসে
নতুন ঘরে যাওয়ার একটা দাওয়াত নামা আসে,
এটা কোনও ছুটিতে যাওয়া হলিডেহোম না
এটা হল নানা দাদাওয়ালা ঘর।

ওখানে শেশবটাকে নতুন করে ভালোবাসি।
ফেরার সময় দাদীর বানানো তিলের নাড়ু কিংবা নানীর বানানো আচার নিয়ে আসি।

এর পরে যখন ঘর আসে; এটা বুঝতে হলে আপনাকে হতে হবে মহাবীর।
ওই ঘরটা আসলে কোনও বন্ধু কিংবা বান্ধবীর।

ওই ঘরটা একেবারে পারফেক্ট হয়,
ওই ঘরটা এমন হয় যেমনটা আপনার ঘর একেবারে না।
তো ঘরটা কোনও বন্ধু কিংবা বান্ধবীর থাকে।
ওই ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস নিজের ঘরে দেখার স্বপ্ন থাকে।

যদিও ওই ঘরটা পরের গলিতে থাকে
কেন যেন ঘরটা নিজের বড় আপন লাগে।

এই ঘরটার সবকিছু সবার নজরে আসে।
আমরা যার স্কুলে টিফিন খাই; ওটা এই ঘর থেকেই আসে।

ওই ঘরে শুক্রবারের বিকেলটা কি সুন্দর কাটে।
এরকম ঘর আমিও বানাবো, এরকম একটা স্পিরিট আসে।

এরপর এমন একটা সময় আসে, যখন কোনও সুন্দরীকে দেখে মনে ঘন্টা বাজে।
তখন ঘরে একটা কোণায় রঙিন বোতল থাকে, আর সারারাত গিটার বাজে।

গ্রুপস্টাডির নামে সব পাগলদের জমা এদিকে হয়।
এ প্লাস বি স্কয়ারের জায়গায় জানালা দিয়ে সিগারেটের ধোয়া বের হতে থাকে।

ওই ঘরটা ওই বন্ধুর হয়, যার ভাবনা চিন্তায় একটু ভাবুক ভাবুক ভাব থাকে।
কলেজ জীবন ওই ঘরটা খালি হতো কোনও এক ফাঁকে।

জীবন আগে বাড়ে। যৌবনে প্রবেশের পরে নিজের ঘরের মতো কিছু নেই এই বুঝটা চলে আসে।
যখন চাকরির খোঁজার কিংবা জীবনে সামলে নেওয়ার একটা চাপ থাকে।
তখন জীবন, মেস কিংবা শেয়ারে থাকা ঘরে নিজের একটা ছাপ থাকে।

মেসের মধ্যে এক রকমের লোক আসে। কেউ ভীষণ কাছের। কেউ ভীষণ আজব। কারও সঙ্গে দুবছরেও হয় না ঠিক মতো কথা।
ঘরের এক কোনে ঝুলতে থাকে ভেজা জামা। শুকাতে থাকে আন্ডারওয়ার।

যখন নিজের ডাল রুটির একটা ব্যবস্থা হয়। তখন সুযোগ বুঝে ওই মেসের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বের হওয়ার সময় মেসের ওই নোংরা দেয়ালের জন্যও মন খারাপ হয়।

এখন সময় যখন জীবনের ঠিকানা পরিবর্তনের তখন জীবনে স্যাটেল হতে চেয়ে, আপনি বুঝে শুনে লোন নেন ব্যাংক থেকে।
কিনে নেন কিস্তিতে একটা ঘর, যে ঘরের নেইমপ্লেটে নিজের নাম লেখা থাকে।


নিজের নতুন ওই ঘরের চার দেয়ালে যখন একাকিত্বে ধরে।
তখন ঘরটাও নতুন কাউকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

একটা মেয়ে; যে ওই ঘরটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়।
ওই মেয়ে, যার চুড়ির শব্দে ঘরটাকে রাজপ্রাসাদের ফিলিংস দেয়।

বাড়তে থাকা বয়সের সাথে, ঘরের দেয়ালের রঙ যখন শুকোতে থাকে।
তখন ওই মেয়েটার গর্ভে আপনার শৈশব ফিরে আসে।
তখন আপনার কাহিনী যেন আবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে।
সময় যেন আবার ঘুরতে থাকে।

সময়টাও ভীষণ জরুরি। যখন আপনি একসময় ঘর থেকে সাদা কাফনে করে বের হয়ে যেতে থাকেন।
ওই ঘর তখন আপনার কেবল একটা ছবি ঝুলতে থাকে।
তবুও ওই ঘরের মানুষের মনে আপনার স্মৃতি বাজতে থাকে।

ওরা ভীষণ ভাগ্যবান যারা একটা ঘরের মধ্যেই নিজের সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। সাদা তোড়ালে থেকে সাদা কাফনের সফর একই ঘরে করে নেয়।

ঘর সম্পর্কের হোক,
মেসের হোক
কিস্তির হোক
কিংবা
ঘর শৈশবের হোক
ঘর বন্ধুর হোক
কিংবা নানী দাদীর স্মৃতির হোক।
এই ঘর কেবল শান্তি দেয়, মুখে হাসি দেয় আর রাতে শান্তির ঘুম দেয়; দেয় ভীষণ খুশি।
এত বড় সফরের পর ঘরের সব জায়গায় নিজের নাম লিখে দিতে ইচ্ছে করে।

মৃত্যুর পরে জান্নাত জাহান্নাম জানি না। তবে দুনিয়াতে ঘরের থেকে শান্তির কিছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×