শীলা দুপুরের জন্য রান্না করতে গেল। শরীর ভালো লাগছে না তার। চোখ জ্বলছে, শরীর ভেঙে আসছে। হয়তো জ্বর আসবে। এই শরীর নিয়ে রান্না হবে না, তাই সে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। আকাশ এলে একটা ডিম ভেজে দিবে।
আকাশের আজ হসপিটালে হাফডে ডিউটি। এই খুশিতে হসপিটাল থেকে ফেরার পথে দুইজনের জন্য চায়নিজ কিনে নিল। ডাক্তারদের জীবনে ছুটি খুব কম থাকে। মাঝে মাঝে একটু আধটু ছুটি পেলে, ওটা ওঁনাদের কাছে ঈদের থেকে কম কিছু হয় না।
ঘরের মধ্যে নিস্তব্ধতা। কলিং বেল বাজল। আকাশের এই একটা অভ্যাস, ঘরে ঢোকার সাথে সাথে ঘর গরম করে ফেলতে পারে। শীলা পানি দাও, শীলা তোয়ালে দাও, শীলা খাবার দাও... করে করে মুহূর্তে ঘর গমগমে করে তোলে। এটা বোধহয় বদঅভ্যাস।
শীলার জ্বর বেড়েছে। কোনও মতে দরজা খুলল। খোলার সাথে সাথে আকাশ দুই হাতে চায়নিজের প্যাকেট উপরে তুলে শো করে বলল, টাডাআআআআ...!
অন্য দিন হলে শীলা ভীষণ আগ্রহ দেখাতো। কিন্তু কোনও রিয়েকশন না দিয়ে সে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
আকাশ এসে শীলার কপালে হাত দিয়ে বলল, তোমার তো জ্বর এসেছে। ডাক্তারের বউয়ের জ্বর এসেছে এটা হতেই পারে না!
শীলা হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু মাথা ঘোরাচ্ছে।
আকাশ প্লেটে করে বাইরে থেকে আনা খাবার গুলো বেড়ে শীলাকে খাইয়ে, ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।
শীলা দীর্ঘক্ষণ ঘুমালো। ঠিক সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙলো তার। উঠেই সে ঘড়ি দেখল। সাতটা! তার চোখে পড়ল, তার বিছানার পাশে ফ্লোরে কয়েল জ্বালানো, স্ট্রেটা নেই, তাই ফ্লোরে কয়েলের ছাই গুলো জমা হচ্ছে। আকাশ পাশে শুয়ে টিভি দেখছে। মিউট করা টিভি।
শরীর এখন ভালো লাগছে শীলার। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, খেয়েছো?
আকাশ হেসে বলল, আমার দুইটা বিয়ে করা উচিত, একজন অসুস্থ হলে আরেকজন রান্না করবে।
এবার একটু এনার্জি নিয়ে হাসল শীলা। বিছানে থেকে উঠতে উঠতে বলল, রাতের খাবার রেঁধে ফেলি।
আকাশ শীলাকে টেনে আবার শুইয়ে বলল, অসুস্থ আছো, একটু অসুস্থ থাকো! এই উছিলায় কয়েকটা দিন চায়নিজ খাই! কি বলো!?
শীলা বলল, আচ্ছা, তবে আমার ঘুম ভেঙেছে এখন টিভির শব্দ শুনতে পারো।
আকাশ শব্দ অন করে চ্যানেল ঘোরালো। একটা ইংরেজি চ্যানেলে টম হ্যাংসের "দ্যা টার্মিনাল" দিচ্ছে। আকাশ লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে শীলাকে বুকে জড়িয়ে টিভিতে সিনেমাটা দেখতে লাগল। হঠাৎ আকাশ বলে উঠল, পপকর্ন হলে ভালো হতো, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৫