মুরশেদ নামের একটা ছেলেকে চিনতাম। এখন অবশ্য বেঁচে নেই। মরে ভুত হয়েছে। ছেলেটা আন্দোলন ফান্দোলন করতো আরকি। রাজনীতি করা পোলা গুলো এমনিতেই গ্যাঞ্জাইম্মা। ওইরকম একটা গ্যাজ্ঞাইম্মা পোলার জীবনেও ভালোবাসা ছিল।
একবার কলেজে ক্যান্টিন খোলার আন্দোলন হয়। ছেলেগুলো অ্যাপ্লিকেশন না করে করেছে, প্রিন্সিপালের রুম ঘেরাও! আর মুরশেদ ছিল সেই আন্দোলনের লিডার। সেবার এই আন্দোলনের জের ধরে এক মাস কলেজ বন্ধ ছিল।
রুবি নামে একটা মেয়ে ছিল কলেজে। মেয়েটার বাবা মা এমনিতেই তার বিয়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। এর মাঝে কলেজ বন্ধ হওয়ায় মেয়েটা পড়ল বিপদে। বাবা-মা দেওয়া শুরু করল চাপ। রুবি কোনও উপায় না পেয়ে ঠিক করল মুরশেদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করবে, আন্দোলন উঠিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু যায় নি ভয়ে। এসব বখাটে ছেলের পাল্লায় পড়তে চায়না সে।
কোনও মতে বাবা-মাকে ঠেকিয়ে রেখেছিল রুবি। এর মধ্যে যখন কলেজ খুলল, দেখা গেল বাহিরের কয়েকটা ছেলে এসে কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বিড়ি সিগারেট খায়, আর মেয়েদের টিচ করছে। একদিন গেল, দুই দিন গেল, তিন দিনের দিন মুরশেদ তার দলবল নিয়ে এসে মারাত্মক ধোলাই করল ছেলে গুলোকে! ঝামেলা যে বাড়বে কে জানতো!
তারপরে কয়েকমাস ভালোই ক্লাস হল। রুবির বাবা-মাও বিয়ে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করা বন্ধ করে দিল। হঠাৎ একদিন রুবি কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটা কালো রঙের টয়োটা গাড়ি এসে তার পথে আটকালো। গাড়ি থেকে কয়েকটা যুবক নেমে জোর করে তাকে তুলে নিল গাড়িতে! গাড়িতে উঠানোর পরেই কি জানি শোঙানো হল রুবিকে। রুবি অবচেতন হওয়ার পরে প্রথম যখন চোখ খুলল, তখন সে একটা রুমে খাটের উপর শোয়া। নিজের শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা টের পাচ্ছে সে। সে বুঝেছে কী হয়েছে এখানে তার সাথে। হাত পা বাঁধা তার। চিৎকার করতে চাইলেও মুখ দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছে না।
-
মুরশেদ একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। প্রথমবার মেয়েটাকে সে কলেজ মাঠের কোণে দেখেছিল। একটা বই নিয়ে কি জানি পড়ছিল মেয়েটা। তখনই পছন্দ হয়ে যায় তার। সে চ্যালা প্যালাদের দিয়ে খবর প্রায় নিত মেয়েটার। কখনও মেয়েটার সঙ্গে কথা বলার কিংবা সামনে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি মুরশেদ। মেয়েটার নাম রুবি।
যখন মুরশেদ খবর পায়, রুবি কলেজ ছুটির পর থেকে নিখোঁজ বেচারা হন্য হয়ে খোঁজা শুরু করে। কলেজ গেইটের পুরিওয়ালা থেকে জানা গেল সেই দিন যে ছেলেগুলোকে মুরশেদ আর তার দলবল মেরে ধাওয়া করেছিল তারাই রুবিকে কিডন্যাপ করেছে! এটা জানার পরপরই মুরশেদ চ্যালা প্যালা লাগিয়ে দেয় ওরা কারা এবং রুবি কোথায়।
মুরশেদ যখন জানতে পারল রুবি কোথায়। পাঁচ বাইকে মোট দশজন ছুটে গেল সেখানে! গিয়েই কোনও কথা না হয়ে শুরু হল মারামারি। দশ জনের চাইতে ওখানে লোক অনেক বেশি ছিল। মুরশেদ কোনও ভাবে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। একটা রুমে সে নিস্তেজ রুবিকে খুঁজে পায়। মুরশেদ চোখে জল। মেয়েটাকে কোলের উপর নিয়ে মুরশেদ রুবি রুবি বলে ডাকছিল। রুবি ওই নিস্তেজ ভঙ্গিতে জল জল করা ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,-"মুরশেদ?"
তখনই হল ধপ শব্দ। শত্রুদের একজন একটা রড দিয়ে সজোরে মুরশেদের মাথায় বাড়ি দিয়েছে! টপ টপ করে কপাল বেয়ে রক্ত পড়তে লাগল। ডাইরেক ডেথ আরকি। তারপরের বাড়িটা পড়ল রুবির মাথায়।