প্রচন্ড বাতাসে ছাদে ঝুলানো জামাকাপড় গুলো উড়ছে। রক্তিমা চা বানাচ্ছিল আমার জন্য, আমি বেডরুমে শুয়ে হাই ভলিউমে 'অনিকেত প্রান্তর' শুনছি। ষোল মিনিটের গান! বেশ ধৈর্য নিয়ে শুনছি।
আমাদের গোছানো সংসার। রক্তিমা আপাতত কিছু করে না। কিন্তু ও আমার থেকে বেশি এডুকেটেড। আমি তো গ্যাজুয়েশনটা কোনও মতে কমপ্লিট করে বেঁচে গেছি। বিয়েতে ওর বাবা-মার মত ছিল না। অনেকটা পালিয়েই বিয়ে করেছি।
বাবা চলে যাওয়ার আগে আমার জন্য কিছু রেখে যেতে পারেনি। কেবল এই পুরান ঢাকার, চারতলা বিল্ডিং এর ওপরের তলা ছাড়া। ঠিক ওপরের তলা না। ছাদ। ছাদের পাশে থাকার মতো দুই টা রুম। এই-ই। মা ভাইয়ার সাথে আমেরিকায়।
শেষবার যে রাতে ভাইয়া আমাকে ওপরতলার (ছাদ) দলিল দিয়ে চলে গেল, সেই রাতে আমি এক ফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। যেখানে আমি প্রতিটা রাত রক্তিমার সাথে ফোনে কথা বলে কাটিয়ে দিতাম, সেই রাতে রক্তিমার ফোন পর্যন্ত ধরিনি। আটান্ন মিসকল, বাইশটা বিশালাকার মেসেজ। সকালে যেভাবে সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছিল আমার ওই ছাদে, তা কখনও ভোলার নয়।
ভাইয়া আম্মুকে নিয়ে চলে যাওয়ার একমাস পরেই আমরা বিয়ে করি। আমার ইচ্ছে ছিল না। তখন প্রত্রিকায় লিখে কয় পয়সাইবা রোজগার করি। রক্তিমা অনেকটা জোর করেই বিয়ে করে, শুধুমাত্র আমাকে কনসল করার জন্য। শুধুমাত্র এটা বোঝানোর জন্য যে,'তুমি একা নও'।
আমি একা হইনি। আপাতত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হচ্ছি না। আমরা এখনও প্রতিটা রাতে ছাদে তারা দেখি। আমি চা আর ও কফি। রাতে কবিতা শোনাই। রক্তিমার মা আমাকে এখন দারুণ পছন্দ করেন আর বাবা দুচোখে দেখতে পারেন না।
'অনিকেত প্রান্তর' প্রায় শেষ। তিন চার মিনিট বাকি আছে। রক্তিমা আমাকে চা দিতে দিতে বলল,
-তোমাকে একটা কথা বলব?
কিছুটা সন্দেহ হল। রক্তিমার এমন করে কিছু বলা মানেই বিশাল কোনও খবর। তা আনন্দের না দুঃখের তা অবশ্য বোঝা যায় না। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,
-বল..
ও খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল,
-আমাদের দুইজনের সংসার, তিন হচ্ছে...!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১০:১৫