মুক্তচিন্তা, মুক্তচিন্তা, মুক্তচিন্তা.....
মুক্তমনা, মুক্তমনা, মুক্তমনা.....
আস্তিকতা, নাস্তিকতা, আস্তিকতা, নাস্তিকতা.....
এই শব্দগুলো খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে অভিজিত রাকে হত্যার পর। ঠিক এমনটাই হয়েছিলো রাজীব হত্যার পরও। বিষয়গুলো নিয়ে লেখার একটা প্রয়োজন অনুভব করছি, তাই আজ অনেকদিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম।
* মুক্তচিন্তাঃ
মুক্তচিন্তা বলতে সত্যিকার অর্থে বোঝায় একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে নিয়ে উন্মুক্ত বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাভাবনা। যেমনঃ একজন মুসলমান হয়ে বলতে পারা যে আইএস বা আল কায়েদার নিরপরাধ মানুষ হত্যা একটি জঘন্য সন্ত্রাস, একজন হিন্দু হয়ে বলতে পারা যে বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির প্রতিষ্ঠা একটি অত্যন্ত নিচু কাজ, একজন আওয়ামীলীগ সমর্থক হয়ে বলতে পারা যে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নিরাপত্তার নামে বালুর ট্রাক বসিয়ে আটকে রাখা ফ্যাসিজম, একজন বিএনপি সমর্থক হয়ে বলতে পারা যে বোমা ফাটানো, মানুষ পোড়ানো কোন আন্দোলন হতে পারে না।
* মুক্তমনাঃ
যিনি নিজেকে একপাক্ষিক মনোভাব থেকে বের করে নিয়ে এসে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে চিন্তা করতে পারেন।
* আস্তিকতাঃ
সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু আছেন বলে বিশ্বাস রাখা ও অনুগত থাকা।
* নাস্তিকতাঃ
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস না রাখা।
এবার আসি কিছু বিশ্লেষণে, মুক্তচিন্তার সাথে আস্তিকতা-নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই। যেকোনো স্থানে থেকে, যেকোনো বিশ্বাসে থেকে, যেকোনো মানুষ মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার অন্যদের চিন্তাধারাকেও সম্মান দেখাতে হবে, আপনাকে মানতে হবে পৃথিবীতে একমাত্র আপনিই সঠিক নন। আর যদি সঠিক হয়েও থাকেন, অন্যের ওপর আপনার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাঁর অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার আপনার নেই। একজন মুসলমানের অধিকার নেই একজন নাস্তিককে জোর করে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করানোর, তেমনি একজন নাস্তিকেরও অধিকার নেই একজন মুসলমানের বিশ্বাস ভুল বলে চাপিয়ে দেয়ার। একজন হিন্দুর অধিকার নেই কোন মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার, একজন মুসলমানেরও অধিকার নেই কোন মন্দির ভাঙ্গার। উপরোক্ত সবগুলো কাজই ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষের ওপর আক্রমণ, প্রথম ধরণটি হচ্ছে পরোক্ষ আক্রমণ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রত্যক্ষ আক্রমণ। উভয়ই অপরাধ।
আমি আবারও বলছি, মুক্তচিন্তার সাথে আস্তিকতা-নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই। আস্তিকতা-নাস্তিকতা যার যার বিশ্বাসের ব্যাপার, ঠিক মুসলমান-হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ধর্মের মতো নাস্তিকতাও একটি বিশ্বাস, একটি ধর্ম। ধর্ম পছন্দ করার অধিকার সকলেরই আছে, বিশ্বাস করার অধিকারও সবারই আছে। কিন্তু নিজের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠার জন্য অন্য বিশ্বাসকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। আপনি একজন নাস্তিক, আপনি একজন মুসলমান/ হিন্দু/ খ্রিষ্টানের বিশ্বাসকে হেয় করছেন, অপমান করছেন, আক্রমণ করছেন। তাহলে আপনি কীভাবে আপনি দাবী করছেন আপনি একজন মুক্তমনা, একজন মুক্তচিন্তার অধিকারী ?
মুক্তচিন্তা নামক খোলস ধরে আপনার গোঁড়ামী কি মৌলবাদ নয়, ভণ্ডামি নয় ? তেমনি, আপনি একজন মুসলমান, আপনি বলছেন ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু আপনি একজন জলজ্যান্ত নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে ফেললেন। তাহলে আপনি কীভাবে দাবী করতে পারেন যে আপনি একজন মুসলমান ?
এবার আসি আসল কথায়, ধর্ম-বিধর্ম, বিশ্বাস-অবিশ্বাস যার যার নিজস্ব, একান্ত মানসিক বিষয়। একে মানসিক বা শারিরীক কোনভাবেই আঘাত করে পাল্টানো যায় না, ঘৃণা ছড়ানো যায়, বিদ্বেষ ছড়ানো যায়। আমাদের এই ছোট্ট দেশটায় ষোল কোটি মানুষ, আমাদের এক সাথেই পাশাপাশি অবস্থায় থাকতে হবে। এমনিতেই আমাদের মধ্যে ঘৃণা-বিদ্বেষ-দ্বন্দ্ব অনেক বেশি, যার ফল আমাদের আগুনে পুড়ে দিতে হচ্ছে। এই ঘৃণার জালে আমরা পুরো জাতি ধুঁকছি। এর মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করে ঘৃণা ছড়িয়ে আমরা কখনোই সামনে এগুতে পারবো না, শান্তি বয়ে আনতে পারবো না বরং আরও জ্বলতে হবে। প্রত্যেককে যার যার বিশ্বাসকে নিয়ে অপরের বিশ্বাসের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকে, স্রদ্ধাপরায়ন থেকে মিলেমিশেই থাকতে হবে। ভালোবাসা দিয়েই শান্তি আনয়ন সম্ভব, আক্রমণ-সংঘাত দিয়ে নয়।
চাই শান্তিপূর্ণ, সংঘাতহীন, সুখী জীবন.....
চাই শান্তিপূর্ণ, সংঘাতহীন, সুখী সমাজ.....
চাই শান্তিপূর্ণ, সংঘাতহীন, সুখী বাংলাদেশ......
আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্যকে, অন্যের বিশ্বাস-অনুভুতিকে, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা জানানোর মানসিকতা......
সবাই ভালো থাকুন, সুখী থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫১