একজন নারী ধর্ষিত হবার প্রথমেই তার মাথায় ধর্ষকের শাস্তির চিন্তা আসে না । হয়তো সে ধর্ষিতা হবার পরপর বার বার করে গোছল করে তার শরীর থেকে অসহ্য ঘৃণা সরিয়ে ফেলতে চায় ! সে তার সব থেকে কাছের মানুষটির/মানুষগুলোর সান্নিধ্য চায় সেই সময়ে । তারপর হয়তো সে চায় ধর্ষকের শাস্তি হোক। কিন্তু ততক্ষণে ধর্ষিতার শরীর থেকে ধর্ষনের আলামত অনেকটাই মুছে যায় । আর আলামত মুছে যাওয়ার কারণে এবং সমাজ জানাজানি, লোক কানাকানি, ধর্ষকের পক্ষ থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষনের মামলা আর আগাতে পারে না। ধর্ষক খালাস পেয়ে যায় ।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক-
খুবই সাধারণ একজন চাকুরে মুরাদ এর বড়লোক বন্ধুটি বড়ই রসময় সব রঙ্গতামাশা করতে ওস্তাদ তার বন্ধুপত্নীর সঙ্গে এবং সেটা্ও মুরাদ এর অনুপস্থিতিতে বড্ড অসময়ে, যখন মুরাদ বাড়ির বাইরে থাকে অর্থাঁৎ অফিসে।
খুবই সাহায্যকারী মনোভাবাপন্ন বন্ধু শামীমের এই নিয়মিতই অসময়ে উপস্থিতি বন্ধু মুরাদকে দুশ্চিন্তায় না ফেললেও ভাবিয়ে তোলে কমবয়সী স্ত্রী পুস্পকে।
একসময় কোন এক দুপুরের পর পর সময়ে শামীমের উপস্থিতি এবং সন্দেজনক আচরণ এবং তারপরই পুষ্পকে একা বাড়িতে পেয়ে আক্রমণের ধকল সামলাতে না পেরেপেুষ্প অজ্ঞান হয়ে যায় ।
মুরাদের কাছে দেবতারুপী বন্ধুই হায়েনা হয়ে ঝাপিয়ে পরে অজ্ঞান পুষ্পকে ছিঁবড়ে খেতে !
আইন যুক্তি ছাড়া, প্রমাণ ছাড়া আবেগ দিয়ে এগিয়ে যায় না । থেমে যায় ধর্ষিতার নীরব যন্ত্রনাকে অন্ধকারে রেখে।
বাস্তবে অন্তত তাই হয়...
কিন্তু কখনো কখনো নাটক, সিনেমাতে দর্শককে সচেতন করতে এগিয়ে আসে কোন কোন কাহিনীকার। সেখানে যোগ হয় যখন পুরনো কেস ঘেটে দেখা যায় শামীম নামের মানুষরূপী হায়েনারা এর আগেও একই ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে বেঁচে যেয়ে ঘুরে বেড়ায় বুক ফুলিয়ে, তখন কোন একজন উকিলের বক্তব্যের মারপ্যাচে আর ভবিষ্যতে এই হায়েনার দ্বারা আরো নারী ধর্ষিত হতে পারে...এই আশংকা ঢুকিয়ে দেয় প্রধান বিচারকের মনেও । তখন বিচারক রায় দিয়ে সাজা দেন এই সব শামীমদের।
সমাজকে, বিবেককে সচেতন করতে তেমনই একটি সিনেমা "প্রিয়তমেষু"
ঘটনাগুলো আরো চাপা পরে যায় যখন ধর্ষক খুব পরিচিত কাছের কেউ হয়। হতে পারে তার সহোদরার স্বামী, যে কিনা ধর্ষিতার "দুলাভাই" বা তার প্রিয় খালার স্বামী "খালু" অথবা তার অনেক পছন্দের ফুফুর স্বামী "ফুফা" হয় সেক্ষেত্রে ধর্ষিতা নিজেই হয়তো ধর্ষকের কথা ভেবে নয় বরং ধর্ষকের সাথে সম্পৃক্ত তার আপন মানুষদের হতে পারে বোন, খালা,ফুফু বা আর কেউ নিকটাত্নীয়ের অসম্মান, কষ্টের কথা ভেবে বিষাক্ত যন্ত্রণাকে পাথর চাপা দেয়।
ধর্ষক যেহেতু জানে আইন তার কিছুই করতে পারবে না, পরবর্তীতে আরো কেউ একই পন্থায় ধর্ষিতা হয় এবং আলামত মুছে যায় । এভাবেই ধর্ষকরা টিকে থাকে আর সমাজকে নোংরা দূর্গন্ধময় করে যাচ্ছে নিরবে। আমাদের নাক দূর্গন্ধ সহ্য হওয়া নাক। তাই আমাদের অসহ্য লাগে না । সাময়িক ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায় সহসাই।
কয়েকদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, ব্লগে পোস্ট দিয়ে, শাহবাগে বা এমনি কোন রাজপথে মানববন্ধন করে তারপর ভুলে যাই।
কয়েকদিন পর নতুন আরেক ধর্ষিতার আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণগহ্বরে প্রবেশ করলে শুরু হয়ে যায় আমাদের ক্রোধাগ্নীর আবার সেই চক্র ।
এভাবেই চলতে থাকে চক্রাকারে...সেই সাথে থেমে থাকে না ধর্ষকেরও ছিঁবড়ে খাওয়ার ভোজন পর্ব ।
সমাজকে, বিবেককে সচেতন করতে তেমনই একটি সিনেমা "প্রিয়তমেষু"
প্রথম প্রকাশ:
২১ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:১৫
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২৫