somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাবেক শিবিরের আত্মকাহিনী -২৪ (মধুরতম দিনগুলি - ১)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে ফিরেই আমার বিবাহিত জীবন শুরু হোল। বউ হল ছেড়ে চলে এলো আমার কাছে, আমার বাবার বাড়ি। আমার তখন মুক্ত জীবন। চাকুরী নেই, পড়াশোনা নেই, চাকুরী খোজার চিন্তাও নেই। তখন বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন চরমে। দিনের পর দির হরতাল। ঢাকায় এসে চাকুরী খুজবো, তার উপায়ও নেই, গরজও নেই।

আমাদের বাড়ীতে বেশ অনেক খানি যায়গা ছিল। দেড় বিঘা জমির উপর ছোট একটা দোতলা বাড়ি। বাড়ীর পশ্চিমে একটুখানি খালি যায়গা, সেখানে শীতকালে আমরা ব্যাডমিনটন খেলতাম, তার পর রাস্তা, পূবদিকে বেশ অনেকখানি খালি, সেখানে কয়েকটা আম গাছ, একটা পেয়ারা গাছ আর একটা বরই গাছ ছিল। তার পর ছোট একটা নদী। দক্ষিণ দিকটা পুরোটাই খালি। এল প্যাটার্নের বাড়ী। আমাদের ঘরটা ছিল দক্ষিণ পাশে। তারপর একটা ব্যালকনী। অনেক চাদনী রাতে আমরা ব্যালকনীতে বসে নদীর দিকে তাকিয়ে থেকেছি। চাদের আলোয় ছোট্ট নদীটির মৃদু ঢেউ মুক্তদানার মত চকমক করতো। বাড়ীর সীমানা জুড়ে নারকেল গাছের সারি। সেগুলোর পাতায় চাদের আলো পড়ে ঝকমক করতো। মোহগ্রস্থের মত আমরা বসে বসে দেখতাম। মাঝে মাঝে আমি তাকে গানও শুনিয়েছি। রবীন্দ্র সঙ্গীত। বধু কোন আলো লাগলো চোখে, জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে, ইত্যাদি। খেলাঘরের সাথে যখন ছিলাম ছোট বেলা, তখন গান শিখেছিলাম।

বউএর সাথে আমার খুব মিল হয়ে গেলো। আমাদের দুইজনের ভালো লাগার বিষয়গুলোর মধ্যে খুব মিল ছিল। সে কবিতা লিখতো। কবিতা পড়তো। আদর্শিক মিলও ছিল। আমরা দুইজনই ইসলাম ও বাংলাদেশকে সমভাবে ভালোবাসতাম এবং এই দুটি বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। তাকে উদ্বুদ্ধ করছি ব্লগে লেখার জন্য। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ততা কাটলে লিখবে বলেছে।

অখন্ড অবসর। তাই, আমি মহা উদ্যোমে কৃষি কাজ শুরু করলাম। দক্ষিণ দিকের খালি যায়গাটাতে মাচা করে লাউ, কুমড়ো, কাকরোল আর পুইশাক লাগানো হলো। বউএর লাল শাক পছন্দ। তাই বেশ কিছু যায়গায় লাল শক লাগানো হলো। বাড়ীর সামনের মাটিতে প্রচুর ইটের টুকরো ছিল। অনেকখানি যায়গার মাটি সরিয়ে ভালো মাটি দেয়া হলো। তারপর সেখানে বেশকিছু ফুলগাছ লাগানো। কামিনী গাছ ছিল একটা। তার পাশে হাসনা হেনা আর শিউলি লাগালাম। বউ লাগালো অনেকগুলো বেলী আর গোলাপের চারা। দোপাটি, জিনিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা - এসবের বীজও লাগানো হয়েছিল।

নদীর পাড়ে একটুখানি নীচু জমি ছিল। বাবা জমিটি কিনে নিলেন। আমি সেখানে পুকুর কাটতে বললে বাবা রাজী হলেন। এখন বেশ সুন্দর একটা পুকুর হয়েছে। সান বাধানো ঘাট হয়েছে। আমার ছেলে মেয়েরা সেখান থেকে সাতার শিখেছে। বাড়ী গেলে আমরা সবাই সেই পুকুরে গোসল করি। সান বাধানো ঘাটে বসে মাছদের মুড়ি খেতে দিই।

কিছুদিনের মধ্যে বাড়ীর চেহারা বদলে গেলো। আমি বাইরে যাবার পর মা অনেকটাই শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তিনি সদা চঞ্চল, সদা ব্যস্ত। আমাদের সাথে এই গাছের গোড়ার মাটি ঠিক করেন, ওই গাছের পাতায় আদর করেন। বাবা বলতেন, "দেখো আমার মাকে (তার পুত্রবধূ) আনলাম আর সারা বাড়ীটা কেমন প্রাণ ফিরে পেলো।" মা টিপ্পনী কাটতেন, "তোমার মার জন্য নাকি আমার বাপের জন্য?"

চলবে ..
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৬
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×