দেশে ফিরে এলাম ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে। তার একটা পটভূমি রয়েছে। গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফুল টাইম চাকুরী নেয়ার পর থেকেই বাবা বিয়ের করানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। প্রতি চিঠিতেই তিনি একটা না একটা মেয়ের ছবি পাঠাতেন।
এর মধ্যে দেশে এলাম ১৯৯৫ সালের জুলাইতে। এসে শুনি তিনি বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন। মেয়ে ইংলিশে অনার্স পড়ছে, সেকেন্ড ইয়ারে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনায় খুব ভালো। ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষাতে ফার্স্ট হয়েছে। বোরকা পরে।
সে সময়ে বিয়ে করার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু, বাবা নাছোড় বান্দা। তিনি শেষ-মেষ তার মোক্ষম অস্ত্রটি প্রয়োগ করলেন। বললেন, তার মনে হচ্ছে, তিনি খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবেন। মৃত্যূর পূর্বে তিনি তার প্রথম পুত্রবধূর মুখটি দেখে যেতে চান।
তখন আমার বয়স পচিশ বছর। এই বয়সে বিয়ের প্রস্তাব আসলে একেবারে বেকে বসা অনেকটাই অসম্ভব। তাছাড়া বাবার ইমোশনাল ব্লাক মেলিং তো রয়েছেই।
বললাম, মেয়েটিকে অন্তত দেখে আসি।
বাবা তাতেও রাজী নন। তিনি বললেন, "আমি কি তোমার জন্য খারাপ মেয়ে ঠিক করবো।"
তবুও একদিন কাউকে কিছু না বলে একজন বন্ধুকে নিয়ে গিয়ে হাজির হলাম তার ক্যাম্পাসে। আমাদের এলাকার একটা মেয়েকে খুজে বের করলাম। অবশেষে আমার হবু বউএর দেখা পেলাম।
সে কালো বোরকা পরে ছিল। মুখ ঢাকা। শুধু তার চোখ আর কপালের কিছু অংশ দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল যেন কয়লার খনির ভিতর দিয়ে হীরক খন্ড জ্বল জ্বল করছে। তার চোখের পাতাকে মনে হয়েছিল কালো ফুলদানিতে রাখা গোলাপের পাপড়ি।
যাহোক বিয়ে হয়ে গেলো জুলাই মাসের শেষ দিকে। বিয়ে মানে শুধু কাবিন নামা। আমি চলে গেলাম সপ্তাহখানেকের মধ্যে।
গিয়ে আর মন টিকছিল না। এদিকে দেশে তখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাহিদা খুব বেশী। অবশেষে কয়েক মাসের মাথায় দেশে ফিরে এলাম।
দেশে ফিরে চাকুরী নিয়েছিলাম একটি এনজিও তে। সেই চাকুরীটা আমার অনেক কিছু বদলে দিলো। আগামী পর্বে সে কাহিনী বলার চেষ্টা করবো।
চলবে ..