somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মান্তরে আমি তোর মত হতে চাই

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিরাতে নাগরিক ব্যাস্ততা সেরে যখন চারদেয়ালের এই বাক্সটায় নিজেকে হাতড়ে খূঁজে ফিরি, অজানা কোনো বিষন্নতায় খেই হারিয়ে ফেলি । হিসেব-নিকেশে বড্ড অপটু এই আমি প্রতিরাতে বেহিসেবি জৈবনিক আয়-ব্যায়ের করচা সেরে ঘুমোতে যাই । ঘুম যেন কোন এক অচিনপুরের বাসিন্দা- কেবল লূকোচুরি খেলে যায় ।
ঘুমের কাছে নিজেকে সঁপে দিতে গিয়ে রাত্রির নিরবতায় ডুবে যাই ।

রোজরাতে ।

মৃত্যুর পরের জীবন কিংবা পুনর্জন্ম, কোনোটাতেই আমার বিশ্বাস নেই। থাকলে খারাপ হত না। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে আরো একবার জন্মানোর।
নাহ, এই আমি হয়ে নয়। পলাশ হয়ে। আমার বন্ধু সাদিকুর রহমান খান পলাশ!


ছোটবেলায় আমি অনেক কিছু হতে চেয়েছি। ঝালমুড়িয়ালা, ঘুড়ির দোকানদার, ক্রিকেটার, ফেলুদা,শার্লক হোমস, আরো কত কী। এখন আর সব মনে নেই। বড় হয়ে আমার মনে হল আসলে এসব কিছু না, আমি পলাশের মত হতে চাই। কিন্তু ততোদিন পলাশ হওয়ার সময়টা পেরিয়ে গেছে। আরেকবার জন্মানো ছাড়া উপায় নেই। সেই থেকে অপেক্ষার শুরু…


খুব আহামরি কোন ছেলে না পলাশ। হ্যা, দেখতে আমাদের সবার চেয়ে একটু ভালো, অনেকে বলে চশমা ছাড়া মাঝে মাঝে নাকি ওকে শাহরুখ খানের মত লাগে। কিন্তু বোম্বের ওই ছ্যামড়াকে আমার কোনদিনই ভালো লাগেনি। তাই আমাকেও ওর মত লাগবে-এই ভেবে পলাশ হতে চাওয়া? ছি!


পলাশের কথা কাজে কোন মিল নেই। ও যেকোন মানুষের চোখে দিকে তাকিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসে একের পর এক মিথ্যা বলে যেতে পারে। হয়তো আমাদের বিকেল পাঁচটায় কোথাও যাওয়ার কথা। পলাশ ঘুম থেকেই উঠবে পাঁচটায়। ফোন করলে দিব্যি বলে দেবে, ‘এইতো আমি কাছাকাছি চলে এসেছি, এক মিনিট একটা বিড়ি ধরা আমি চলে আসতেছি।’ সেই এক মিনিট কখনো কখনো কয়েক ঘন্টা হয়ে যায়। হেলে দুলে পলাশ আসে। এবং আসার পর ভয়ংকর সব অজুহাত দেখায়। কখনো বা ওর কোন কাল্পনিক মামা আকসিডেট করায় হাসপাতাল ঘুরে আসতে দেরি হয়, কখনো ওর কোন কাল্পনিক নানী মারা যায়। একবার কে যেন এমনই একটা মিথ্যা ধরে ফেলেছিল-
‘ওই গত সপ্তাহে না তুই বলছিলি তোর নানী মারা গেছে, তাইলে এইডা কোই থেইক্কা আইলো?’
‘আরে ওইটা ছিল আপন নানী, এইটা নানীর কাজিন!’
পলাশ এমনই। ওকে কিছুতেই আটকানো যায় না। সব প্রশ্নের উত্তর থাকে ওর কাছে।


ছেলেটার চরিত্রও খুব একটা সুবিধার না। এক সঙ্গে ৮/১০ খানা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা ওর কাছে ওয়ান-টুর ব্যাপার। আমি একবার এক মেয়ের মেসেজ ভুলে আরেক মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়ে বুঝেছি দুই নৌকায় পা রাখা কত ঝামেলার। কিন্তু পলাশের কাছে এগুলো ডালভাত। দেশে থাকতে আমি ওকে একসঙ্গে তিনটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে দেখেছি। এখন নাকি লন্ডনে বসে এট-এ-টাইম ৮/১০কে দিব্যি শিডিউল দিয়ে যাচ্ছে। কোন ওভারল্যাপ হচ্ছে না। লোকমুখে শুনা, ওর হৃদয়ের একটু অংশ ইন্ডিয়ান এক মন্ত্রীর মেয়ের কাছে, একটু নিয়েছে ফিলিপাইনের এক বিমানবালা, একটু এক বাঙ্গালি ছাত্রী.. একটু …..
আমরা শুনে বলি ..হোয়াট দ্য ফা*.. এগুলো কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব?


সম্ভব।
পলাশ সব অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পারে (ফিলিং অনন্ত দ্যা ভচ .. 8| ) ছাত্র জীবন থেকে ও টিউশনি করে সংসারের হাল ধরতে পারে। বিদেশে পড়তে গিয়ে পার্ট-টাইম জব করে নিজের এবং ছোট ভাই-বোনের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারে। একেবারে অপরিচিত কাউকে বাঁচাতে রাত-বিরাতে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে, বন্ধুর বাবার অপারেশনের সময় রক্ত দিতে যেখানে সেখানে ছুটে যেতে পারে।
আর পারে বন্ধুদের কথা মনে হলে বিদেশ থেকে কাঁদতে কাঁদতে ফোন দিতেও।


আমি আসলে সেই পলাশ হতে চাই। ওর মত স্টাইল করে চশমা পরা না হোক, না হোক অতগুলো মেয়ের সঙ্গে প্রেম কিংবা সব অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলার অভ্যেস। আমার পলাশের ওইটুকু দরকার যেটা দেখে আমার মা প্রায়ই বলেন, ‘একসঙ্গে এতগুলো বছর থেকেও তুই পলাশের মত হতে পারলি না কেন রে বাবা?’


মা কে খুশি করার জন্য নয়। সত্যি বলছি আমার নিজেরও এখন কেন জানি পলাশ হতে ইচ্ছে করে। এই জন্মে যদি না হয় তাহলে অন্তত পরের জন্মে …

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×