তাজা খবর : ফালানী হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত আসামী অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ভারতের বিচারিক আদালত ।
নাগরিক মন্তব্য :
১/ জনৈক তরুন ফেসবুকার : খান** পুত ভারতের মাম্মি কি ড্যাডি । শ্লাদের সবার মুখে মুতি ... >
২/ জনৈক সুশিল : মাননীয় আদালত যে রায় দিয়েছে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতেই হবে । হোকনা তা ভারতের । আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সকল মানুষের কর্তব্য । আমাদের এখন দেখতে হবে রাষ্ট্র্রের কুটনৈতিক মহল এটা নিয়ে কতটা অগ্রসর হতে পারে ।
৩/ জনৈক আবুল (চা দোকানদার ) : ফেলানী কিডা গো মামা ...?? হেতের হইছেটা কি ..??
৪/ জনৈক স্বঘোষিত সমালোচক : ফেলানী বর্ডার পার হতে গিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে । বিএসএফ যেহেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে তারা তাদের কাজই করেছে । এককভাবে বিএসএফকে এর জন্য দোষারোপ করাটা অন্যায় ...!!!!
ফেসবুকে হুজুগে পাবলিক বলে একটা কমিউনিটি আছে যারা বেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ । একটা ইস্যু পেলেই ইনাদের দেশপ্রেম চাঙ্গা হয়ে ওঠে । চেতনায় আগুন জ্বলে । কিন্তু সমস্যা হলো সেটা তারা স্টাটাসে/কমেন্টে উগলে দিতে গিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেন । ইনারা জানেন সাঁতার কাটতে হলে জলে নামতে হবে বাট কোন জায়গা থেকে শুরু করতে হবে সেটা বলতে গেলেই ইনারা গুটিয়ে যান ।
গত কয়েকদিন ধরে এই বিশাল হুজুগ দেখছি ।
এবার চলুন একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই ।
ভারত সীমান্তে নির্যাতন করছে, আর তো সহ্য করা যায় না। গতবছর ফেলানী কে মেরেছে, এ বছর হাবুকে ন্যাংটা করে পিটালো। তার উপরে কত বড় সাহস, আমাদের বিজিবি (প্রাক্তন বিডিআর) জওয়ান কে তুলে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন। এবার কিছু একটা করতেই হবে। শুরু হল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া। কার স্ট্যাটাসে কত কমেন্ট/লাইক পড়ল সেই নিয়ে প্রতিযোগিতা। এমন কি ইংলিশ মিডিয়ামের পোলাপাইন, যাদের বাংলা জ্ঞান মোটামুটি ‘ক’ লিখতে কলমের কালি শেষ, তারাও এখান ওখান থেকে বাংলা কমেন্ট কপি করে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করল। এর সাথেসাথে সমস্ত ব্লগে উঠল ঝড়। চলল ক্ষমতাসীন দলের গুষ্ঠী উদ্ধার। সেই সব ভারতীয় পন্যের তালিকা প্রকাশ করা হল, যেগুলো ব্যাবহার করার কারনে বাংলাদেশে আজ এত দারিদ্র, এত অরাজকতা। কেউ কেউ আবার ভারত বিরোধী সমাবেশ এর ডাক দিলেন। সে এক এলাহী কান্ড।
তো ঘটনা এক সপ্তাহ গড়াল না। হুজুগ শেষ। ভারত নিয়ে চিন্তা করার আর সময় নেই।
আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে এই অনলাইন ঝড়ও ৩/৪ দিনের মধ্যেই থেমে যাবে। আমাদের ফেসবুক বিপ্লবীরা আবার গান,জোকস আর ছবি শেয়ার করা শুরু করবে। ব্লগাররা এই ইস্যু গুলোর পূনঃবিশ্লেষন করবে। আবার কমেন্ট, অনলাইন তর্ক; বেনসন সিগারেট টানতে টানতে বিডিনিউজ আর প্রথম আলোর সাইট এ ঘুরাঘুরি-যদি নতুন কোন ইস্যু পাওয়া যায়।
আমাদের নির্যাতিত হাবু আর বিডিআর জওয়ান বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে? কাতরাক। ফেলানী মারা গেছে, মারা যাক। আমি আর কি করতে পারি? আমি তো ওদের কে নিয়ে তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। ব্লগও লিখছি। কতজন কমেন্ট করেছে জানেন? কতগুলো লাইক পরেছে, আপনার কোন আইডিয়া আছে? ব্যাস, হয়ে গেল দ্বািয়ত্ব শেষ।
আমার সমস্যাটা এখানেই। দেখে খুব ভাল লাগল যে আমাদের সবকিছু নিয়ে আমরা খুবই সচেতন আর খারাপ লাগল যে আমরা গোল্ডফিশের মত স্বল্প স্মৃতির অধিকারী এবং অদূরদর্শী। ভারত নির্ভরশীলতা নিয়ে যে এত আলোচনা, তার মধ্যে কোথাও আমাদের ভারত নির্ভরশীলতার কারনটা নেই। সবাই দোষারোপ/কটাক্ষ করছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখা আর লেইস চিপস খাওয়া লোকজন কে (যারা করছে তারা নিজেরাও এই দোষে দুষ্ট)। অতি নগন্য একটা অংশ ছাড়া কেউ এটা বলল না যে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ কেন দেশী টিভি চ্যানেল বাদ দিয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখে কিংবা দেশী পটেটো ক্র্যাকার্স বাদ দিয়ে লেইস চিপস খায়?
আমার কথা ------------
আমাদের মুল লক্ষ্য থেকে আমরা বিচ্যুত হচ্ছি বারবার। আমরা কোন ভাবেই সরকারের প্রতিপক্ষ না, বা দেশের সার্বভৌমত্ব হারায় এমন কিছুই করব না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য মানুষকে দেশে তৈরী পন্য ব্যাবহারে অনুপ্রানীত করা, সবার আর্থিক সঙ্গতির দিকে খেয়াল করে আর যেগুলার অল্টারনেটিভ দেশে প্রস্তুত হয়।
দ্বিতীয় লক্ষ্য হল, সীমান্তে ভারতীয় বর্বরতার প্রতিবাদে ভারতীয় পন্য বর্জন করতে শেখা। আমাদের পাবলিক মার্কেটের অনেক কিছুই এখন ভারতীয়দের দখলে, সেখান থেকে আমাদের নিজের পায়ে দাড়ানো। আর নিজে স্বনির্ভর হলে আসলে এসব বিদেশী পন্যের পরোয়া কেউ এমনিতেই করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৯