somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প-- টিউশন পর্ব-১

১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরে এসে প্রথম প্রথম অনন্যোপায় হয়ে 'বিদ্যা বেঁচে খাওয়া' (টিউশনি) শুরু করেছিলাম । শক্তপোক্ত মামা-চাচার অভাবে চাকরীর বাজারে বারবার ডাব্বা মারছিলাম । এদিকে বাসা থেকেও রেড-এলার্ট । বাধ্য হয়ে টিউশনি 'খোঁজ-দ্যা সার্চ' করতে হয়েছিল ।

প্রথম প্রথম টিউশনি পাওয়ার জন্য ঝক্কি,সে তো একটা আছেই,বেতন বেশি তো ম্যালা দুর বাসা , বাসা কাছে তো বেতন কম, দুটাই ঠিক আছে তো তখন আবার দেখা যায় এক্কেবারে ন্যাদা পোলাপান পড়ানো লাগবে……যাইহোক অবশেষে কষ্টে সৃষ্টে প্রথম যে টিউশনি টা পাইলাম ওইটা মিরপুর-১২তে। কাছাকাছি আর মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে দেখে রাজি হয়ে গেলাম।
প্রথম দিন গিয়ে মাইয়ার মারে এক্কেরে ইম্প্রেসড করে ফেললাম (মেয়েকে ১ম /২য় করেই ছাড়ব টাইপ ডায়লগ মেরে) ।

পরদিন থেকে পড়ানো শুরু করলাম, মিনিট বিশেক গেসে, মেয়ে কয় কি, 'স্যার আজ আর পড়বনা, অনেকক্ষন পড়সি(!!)।' আমি প্রথম দিন আর ঝাড়ি দিলাম না, বুঝায়ে শুনায়ে আবার পড়াইতে বসলাম । একটু পর মেয়ে আমারে জিগায়, “স্যার, ডু ইউ হ্যাভ এ গার্লফ্রেন্ড?” আমি তো পুরাই টাশকি। থতমত খেয়ে বললাম, 'না তো ।' মেয়ে চোখ কপালে তুলে বলে, 'হোয়াট? ইউ আর সো ব্যাকডেটেড।' আমি আরেকবার বেকুব হলাম।
ক্লাস সিক্স এ পড়া ওই মেয়ে তখন যা বলল তার মর্মার্থ হল- আমি ক্লাস সিক্সে পড়ে বয়ফ্রেন্ড জুটায়ে ফেলসি আর আপনি এত বুড়া হয়েও পারেন নাই? প্রেস্টিজ নিয়ে টান পড়ার কারনেই হোক আর মেয়ের কেরামতি দেখে ভয়ে পেয়েই হোক, আমি মোটামুটি চুপসানো বেলুনের মত একটা চেহারা বানায়ে আবার পড়ানোয় মন দিলাম । কিছুক্ষন পর আবার আমাকে বলে, 'স্যার, আপনি জানেন তো আমার বাবা যে ‘অমুক” কোম্পানির মালিক ( একটা বিখ্যাত কলম কোম্পানি) ।' আমি বললাম ,'না তো !' পরে খেয়াল করে দেখি মেয়ের হাতে ইন্ডিয়ান “লিঙ্ক” কলম। আমার বাপের কলম ফ্যাক্টরি থাকলে তো আমি জীবনেও কলম কিনতাম না কিন্তু এই মেয়ের কাহিনী কিছুই বুঝলাম না। দিন কয়েক পর আমি এইটা আবিষ্কার করতে সক্ষম হইলাম, নিজের কলম ব্যাগ থেকে বের না করে অন্যের কাছ থেকে কলম ধার করে সংগ্রহ করা ওই মেয়ের অন্যতম হবি !

যাই হোক, এই মেয়ে কে পড়ানো আর গাধা পিটিয়ে মানুষ বানানো একই ব্যাপার।। দুই আর দুইয়ে যে চার হয় এইটা বের করতেও ক্যালকুলেটর চাপত। তবে স্বীকার করতেই হবে অসাধারণ স্মরণশক্তির জোরে এই মেয়ে একেকটা অঙ্ক হুবহু মুখস্থ করে ক্লাস সিক্সের মুখ দেখতে পেরেছে ! আমি কিছু বুঝিয়ে শেষ করার পর বেশিরভাগ সময়-ই তাকিয়ে দেখতাম, সে হয় জানালা দিয়ে তাকায়ে আছে আর না হয় বিশাল নখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায়ে আছে আর নয়ত দীঘল কেশ নিয়ে খেলা করছে !!
একদিন নিজের কেশরাশির সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে মুগ্ধ নয়নে একগোছা কেশ রাশি হাতে নিয়ে মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, '' স্যার, আমার চেহারার সাথে ক্যাটরিনা কাইফের চেহারার অনেক মিল আছে না?'' আমি এক পলক তাকিয়েই বললাম, ''আরে তাই তো, এতদিন তো খেয়াল ই করিনিইইইই !'' মেয়ে গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে বলে, ''একচুয়ালি সি ইজ হট এন্ড কিউট, বাট নট প্রিটি। স্যার , ডোন্ট ইউ থিংক , আই এম প্রিটি?''
আমি হেহেহেহে মার্কা হাসি ঝুলায়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। কোনভাবেই দ্বিমত পোষণ করে একটা জ্ঞানগর্ভ সৌন্দর্য বিষয়ক বক্তৃতা শুনতে মোটেও আগ্রহী ছিলাম না ।

শুধু এই পিচ্চির বিনোদন ই যথেষ্ট না, তার আবার ছোট দুইটা ভাইবোন ছিল। টীচার দেখামাত্র ভাইটা ঢিশুম ঢিশুম গুলি করা 'হাউস অফ ডেথ' আর না হয় 'ভি কপ' খেলতে বসত। এই খেলাগুলার বস্তাপঁচা সাউন্ডে আমার ইচ্ছে করত জানালা দিয়ে ঝাঁপ মারি। তিন বছরের ছোট বোন টা ছিল আরো এক কাঠি উপরে। তার জন্য প্রতিদিন চকলেট ( লাভ ক্যান্ডি) নিয়ে যেতে হত, না হলে ওই বিচ্ছু পিচ্চির জ্বালায় ওখানে থাকাই রীতিমত অসম্ভব ব্যাপার ছিল। যাহোক ,মাস দুয়েক যাওয়ার পর মেয়ের অসম্ভব প্রতিভার ফসল হিসেবে মিডটার্ম পরীক্ষায় যখন ডাব্বা মারল, তখন বুঝলাম, এখন মান সম্মান নিয়ে পালানোর সময় চলে আসছে ....।

অবশেষে একটা শুভদিন দেখে আমার টিউশনি পর্বের ইতি টানলাম ।


আআ
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×