মাঝে মাঝে এমন কিছু বই পড়তে ইচ্ছে হয় যার মধ্যে আসলে এতো কাহিনীর মারপ্যাঁচ নাই অথবা এমন জটিল কোন তত্ত্ব বইয়ের পরতে পরতে ছড়ানো থাকবেনা যা ছাড়াতে মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরোন সজাগ রাখতে হয়। চৌরঙ্গী ঠিক সেইরকম একটি বই, যেটি বেশ আরাম করে শুধু চোখ খোলা রেখে পড়া যায়!
এই উপন্যাসটিতে মূলত ফুটে উঠছে একটি বনেদী হোটেলের প্রাত্যহিক কর্মকান্ডের কাহিনী বা ধারা বিবরণী। যাতে গল্পের প্রধান চরিত্র শংকর নিদারুন কষ্টভোগ করে সেলসম্যান থেকে হোটেল রিসিপশনিস্টের বহু আরাধ্য একটি ‘চাকরী’ পেয়ে যায়। অতঃপর শুরু হয় তার হোটেলের জীবন, হোটেলের বর্ননা।
প্রতিদিন হোটেলে যে কত বিচিত্র ধরনের লোকের সমাগম ঘটে এবং তাদেরকে আপ্যায়ন করার জন্য হোটেল এবং তার সংশ্লিষ্ট লোকগুলকে যে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার বর্ননা সত্যি আপনাকে অভিভূত করবে।
এরপর একে একে শংকরের বর্ননায় হোটলের আসবাবপত্র, রুম, সুইট, সার্ভিস, নানান দেশের খাবার আর পানীয়র যে ফিরিস্তি পাবেন তাতে আরেকবার আপনি মুগ্ধ হবেন।
এসবের মাঝেই কিছু চরিত্র আর তাদের টানাপড়েনও এই উপন্যাসের খুব উল্লেখযোগ্য দিক। যেমন হোটেলের ম্যানেজার মার্কোপোলো সাহেবের সুদূর ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষে এসে বাঙালী নারীর প্রেমে পড়া অতঃপর চরম এক সঙ্কটের মাঝে নিজেকে সপে দেওয়া, এরপর কনি নামক একটি মেয়ের কথা যার পেশা হল সারা পৃথিবী জুড়ে হোটেলে একধরনের নগ্ন নৃত্য পরিবেশন করা। এছাড়াও আছে প্রভাতচন্দ্র গোমেজ, নাট্যহরিবাবু, করবী, অনিন্দ্য, পাকড়াশী এসকল বহুবিদ চরিত্রের ছড়ানো ছিটানো প্যাকেজ।
এরকম অসংখ্য চরিত্রের ছোটছোট কাহিনী নিয়েই আসলে এগোতে থাকে চৌরঙ্গী, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
[ এই উপন্যাসটি গত ৩০ বছরে কতবার যে রি-প্রিন্ট (পুনঃমুদ্রন) হয়েছে সেটি জানলে আপনি বিস্মিত হবেন]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫