পারুর কাছ থেকে সদ্য ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস সোজা কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসলো। মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে কমলাপুর স্টেশনে নেমে দেখে বেলা গড়িয়ে গেছে। দেবদাস তার বয়সি এক যুবককে ডাক দিয়ে বললো এইযে দাদা, একটু শুনবেন?
হলুদ পাঞ্জাবী পরা যুবকটি একটা পান মুখে গুজে দিতে দিতে ঘুরে তাকিয়ে বললো, জী আমাকে বলছেন? দেবদাস লক্ষ্য করে হলুদ পাঞ্জাবী পরা এ যুবকের পায়ে কোন স্যান্ডেল নেই। দেবদাস তার মোবাইলে একটা স্ক্রীনশট দেখিয়ে বলে ‘দাদা এই ঠিকানাটা কোথায় একটু বলতে পারবেন?’ ও আচ্ছা আজিমপুর জবাব দেয় হলুদ পাঞ্জাবীওয়ালা , আমিও ওইদিকেই যাবো। তো ভাই সাহেব আপনার কোন সমস্যা না থাকলে আমার সাথে যেতে পারেন।
তাহলে তো আরো ভালোই হয়, বলল দেবদাস। তো দাদা, আপনার নামটা জানা হল না। জী আমার নাম ‘হিমু’ বলে হলুদ পাঞ্জাবীওয়ালা। দেবদাস নিজের পরিচয় দিয়ে বলে আর আমার নাম দেবদাস, আপনি আমকে দেবু বলেও ডাকতে পারেন ‘নাইস টু মিট ইউ’
আজিমপুরে বহু খোঁজাখুজি করে হিমু দেবদাসের কাঙ্খিত বাড়ীটি খুজে পেলো। বাড়ীর সামনে এক বারো তেরো বছরের ছেলে বললো ‘আফনেরা কি কাউরে খুজতাছেন?’ দেবদাস বললো এই ছোড়া এটা কি মিসির আলি সাহেবের বাসা? ‘জে আফনেরা ভিতরে যান, উনি বাসায় আছেন মনে হয়’
মিসির আলি সাহেব একটা বুকশেলফ হাতড়াতে হাতড়াতে তার সামনে থাকা আগন্তুকদের উদ্দেশ্যে বললো- বইপত্র আর ঠিকঠাক করে রাখতে পারি না। এইতো সেদিন পাশের বাড়ির ফাজিল ছেলে ফটিক রবীন্দ্রনাথের “গল্পগুচ্ছ” বইটা নিয়ে বলে হারায় ফেলছে। তবে আমার ধারনা ও বইটা নিয়ে নীলখেতে বিক্রি করে দিছে। এদিকে হুমায়ূন আহমদের ‘রুপা’ বইটাও খুজে পাচ্ছিনা। দেবদাসের বুকটা তখন ছ্যাঁত করে উঠলো- রুপা উল্টা করলে আবার পারু হয়। মিসির আলি কথা চালিয়ে গেলেন- অর্ধেক পড়া হয়েছিল, হুমায়ূন আহমদের লেখা পড়তে আমার খুব একটা ভালো লাগে না তবু আমার এক ছাত্রী গিফট করেছিল তাই নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। তা তোমরা বইটই পড় না ?
দেবদাস মাথা নাড়িয়ে বলল নাহ! হিমু উদাস হয়ে মুখের উপর বলে বসলো “হিমুরা বই পড়ে না !!” মিসির আলি সাহেব বিরক্ত হয়ে বললো ওওঁ, তা তোমরা কি জন্য এসেছো আমার কাছে। সমস্যাটা কি? আজ্ঞে সমস্যাটা আমার বললো দেবদাস। আপনার ব্লগে ‘হ্যালুসিনেশন’ বিষয়ক লেখা পড়ে আপনাকে নক করেছিলাম। অনেক কথাও হয়েছিল তখন।
মিসির আলি একটা গোল্ডলিফ সিগ্রেট জ্বালাতে জ্বালাতে বললেন ও আচ্ছা, ছ্যাকা খেয়ে হেলুসেশনে পড়া কেস। দেখুন দেবদাস বাবু আমার ধারনা আপনি হ্যালুসিনেশন পড়েন নাই! যেহেতু আমার হ্যালুসিনেশন টপিক্সটা আপনাকে আকৃষ্ট করেছে তাই ওটা আপনার সাবকনশাস মাইন্ডে কোননা কোন ভাবে গেঁথে গিয়ে ঘোরাফেরা করছিলো। আর ছ্যাকা খাওয়ার মুহুর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে ফলে আপনার মাঝে কৃত্রিম হ্যালুসিনেশনের একটা হ্যালুসিনেশন নিজে নিজে সৃষ্টি করে ফেলেছেন !? এই রকম পরিস্থিতিতে আপনি এ্যালকোহল গ্রহন করে হ্যালুসিনেশন ঘোরের মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলছেন, যা আপনাকে একধরনের আনন্দ দিচ্ছে। আর এটাই হল বিষয় কিন্তু।
দেবদাস চিন্তিত হয়ে বললো, তাহলে...। মিসির আলি দেবদাসকে থামিয়ে দিয়ে বলে আপনি ফিরে যান। এতো চিন্তা কেনো, বিপুলা এই পৃথিবীর কিছু রহস্য না হয় থাকুক, কিছু সমস্যার সমাধান একটু দেরি করেই হোক। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলবো।
মিসির আলির বাসা থেকে বেরিয়ে হিমু বললো দেবু ভাইসাহেব আপনি এখন গুদামগ্রামটা জ্বালাতে পারেন। কিছুটা চমকে আড়চোখে দেবদাস তাকালে হিমু বলে ভাইসাহেব- আমার ‘ইনুটেশন’ ক্ষমতা প্রবল। আর আপনিতো ভাগ্যবান ভাইসাহেব, ছ্যাকা খাওয়াতো ভাগ্যের বিষয় !
দেবদাস বলল সুযোগ পেয়ে খোঁচাচ্ছেন দাদা?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৫