somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন কাহিনীঃ ১ - ডায়েরীর পাতা থেকে (সুন্দরবন ভ্রমন)

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(*বাচ্চাকালে ডায়েরীতে যেভাবে লিখেছিলাম সেটাই তুলে দিলাম)

সুন্দরবন যাওয়ার জন্য ভোর ৬ টায় বাসে উঠেছি।
একে একে খুলনার বিভিন্ন জায়গা পেরিয়ে বাস রূপসা নদীর তীরে পৌছল। ফেরীতে নদী পার হতে হবে। আমাদের বাস ফেরীর সবচেয়ে নিকটে, তাই আমরাই প্রথমে ফেরীতে আরোহন করলাম।

ফেরী চলতে শুরু করলো এবং কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম ফেরী অনেকদূর চলে এসেছে।
ফেরী থেকে নামার পর বাস আবারো সোজা রাস্তায় চলছে। তখন রাস্তার পাশে বিশাল বিশাল চিংড়ির ঘের দেখা যাচ্ছিলো। পাশের সীটে বসা একজন আমাকে বুঝিয়ে দিলেন এখানকার লোকেরা বছরের কিছু সময় চিংড়ির ঘের করে আবার কিছু সময় ফসল ফলায়। এই চিংড়ির ঘের গুলোতে সমুদ্রের পানি ঢোকার ব্যাবস্থা রয়েছে, এই ঘেরগুলোর একটার সাথে আরেকটির সংযোগ রয়েছে।

২/৩ ঘন্টা পরের কথা। আমাদের বাস এখন কোষ্ট গার্ডে। একটা অফিস তার মাথায় কোষ্টগার্ডের লোগো লাগানো। তার পাশে প্রশস্থ রাস্তা। আমারা এই রাস্তা দিয়েই হাঁটছি- আর চারিদিক দেখছি। কোষ্টগার্ডের অফিসের সামনে ফুলের গাছ। অফিসের করিডোরে কিছু কোষ্টগার্ডের লোক চলাফেরা করছে। তাদের গায়ে হাল্কা ব্লু কালারের ইউনিফর্ম, সোল্ডারে ব্যাজ। আমাদের সামনেই ছিলো একটা নদী। এটাই কোষ্টগার্ডের ঘাঁটি। নদীতে কোষ্ট গার্ডের কিছু জাহাজ ও স্পিডবোট রয়েছে।



হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোচ্ছি। সামনের একটা ছোট ব্রীজ পার হয়ে একটা ছোটখাট জাহাজে ঢুকে পড়লাম। জাহাজ বললে ভুল হবে এটা একটা বড় বোট। বোটটার ভিতরে ছোট খাটো অনেক রুম। অবাক করা বিষয়। প্রথমে একটা রুমে ঢুকলাম। সেখানে ছিলো একটা বেড, দেওয়ালের সাথে লাগানো আলমারি। আলমারির ভিতর ছিলো অনেক গুলো ডিকশনারী। এগুলো হয়তো বিদেশে রপ্তানি করা হবে, অথবা আমদানী করা হয়েছে।

এ রুমটা ঘোরার পর গিয়েছিলাম চালকের রুমে। সেখানে কম্পাস, টেলিফোন, হুইল ছাড়াও রয়েছে নাম না জানা অসংখ্য মেশিন। চালকের রুম ঘোরার পর মনে হল নীচ তলা থেকে ঘুরে আসি, কিন্তু একি নীচে যাওয়ার কোন সিড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। সিড়ি খুঁজে পাওয়ার উপায় না দেখে বোটের সামনে ঢালুতে স্লিপ করে নীচে নামলাম, যদিও এটা ভয়ঙ্কর ছিলো। বোটের নীচে কেবিন দেখে অবাক হলাম কারন সেখানে ছিল টেলিভিশন, কেরামবোর্ড, দাবা, ফ্রিজ, সোফা প্রভৃতি। ওখানে ফ্রিজ খুলে দেখলাম মাছ, মাংস, আইসক্রিম এইসব রাখা। সোফায় বসে কিছুক্ষন টিভি দেখলাম।

নীচের কেবিনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ফ্লোরের সাথে লাগানো একটা দরজার দিকে চোখ পড়লো, অর্থাৎ নীচে আর একটা কেবিন। কিন্তু একেবিনে কোন জানলা নেই, কেবিনটা অন্ধকার। অন্ধকার থাকার কারনে প্রথমে খেয়াল হয় নি এখানে একজন নাবিক ঘুমোচ্ছে! যাই হোক নিচের এ কেবিন দেখতে দেখতে বোটের পিছনে চলে আসলাম। পেছনে এসে দেখি উপরে ওঠার সিড়ি। তখন বুঝতে পারলাম এটিই বোটের উপর থেকে নীচ এবং নীচ থেকে উপরে যাওয়ার একমাত্র সিড়ি!

বোট থেকে উপরে এসে দেখি আমাদের জন্য কোষ্ট গার্ডের একটি স্পিড বোট রেডি রাখা হয়েছে। ওটাতে করে সুন্দরবনের দিকে রওনা দিলাম। বড় বড় জাহাজ নোঙ্গর করে রাখা এদিক সেদিক। প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর সুন্দরবন এসে পৌছলাম। সুন্দরবনের প্রবেশ পথে একটা নকশা ঝুলিয়ে রাখা। এই গেট রুমটা পার হয়ে কাঠের উঁচু প্লাটফর্মের উপর হাঁটতে লাগলাম। চারিদিকে নানা রকম গাছ, সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে। সুন্দরী, সেগুন, গরান, গোলপাতা এইসব গাছ। হঠাৎ দেখতে পেলাম দুটো সুন্দর হরিণ। খুব সুন্দর! ওদের পাতা খেতে দিলাম, ওরা পাতা খাচ্ছিলো। হঠাৎ কি মনে করে কাঠের পাটাতন থেকে লাফ দিলাম, আর সাথে সাথে পিতার কাছ থেকে খেলাম এক রাম ধমক! এখানে নাকি যেকোন সময় বাঘ চলে আসতে পারে, তাই পাটাতন থেকে নামা যাবে না!!

কাঠের পাটাতন ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা সুন্দর বিশ্রাম ঘরের কাছে চলে আসলাম। এখানে বসলে ছোট ছোট অনেক খাল, নালা দেখা যায়। চমৎকার যায়গা, আমরা এখানে নাস্তা করলাম। এরপর একটু জিরিয়ে নিয়ে একটা মিনি চিড়িয়াখানা ঘুরে আসলাম। সেখানে বাঘ, কুমীর, বানর, হরিন খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। এরপর একটা উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম। এটা প্রায় ৪ তলা সমান উঁচু! এখান থেকে প্রায় পুরো সুন্দরবন দেখা যায়! দারুন দৃশ্য।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। সূর্য ডুবে গিয়েছে, আমারা সুন্দরবন থেকে ফেরার জন্য রওনা করলাম।

*লেখাটা যখনকার তখন রূপসা ব্রীজ তৈরী হয়নি, ফেরীতে করে রূপসা নদী পার হতে হতো।
*কোষ্ট গার্ডের ঘাঁটি সম্ভবত মংলায়। মংলা থেকে সুন্দরবন যাওয়ার ব্যাপারটাই মনে হয় লিখতে চেয়েছিলাম!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×