১.
জামাল সাহেব মৃত্যু শয্যায় রইয়াছেন। জীবনের এই অন্তিম মুহূর্তে তিনি তার একমাত্র গুণধর পুত্র রুস্তমকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন“বাবা রুস্তম আমার তো প্রায় সময় শেষ হইয়া আসিয়াছে বাবা, আমি তো তোর জন্য কিছুই রাখিয়া যাইতে পারিলাম না। তোকে আমি আমার ফেসবুক আইডি আর আমার পিটবুলের ফ্যান পেইজটা দিয়া যাইতেছি, তুই এর মর্যাদা রাখিস বাবা” একথা বলিয়া জামাল সাহেব কো কো করিতে করিতে মরিয়া গেলেন।
পুত্র রুস্তম দৃঢ় শপথ লইলো- সে কিছুতেই তাহার পিতার ফ্যান পেইজের কোন রূপ অমর্যাদা হইতে দিবে না।
২.
তিন হপ্তাহ পরের ঘটনা।
রুস্তম তাহার চ্যালাবেলা লইয়া ক্যাম্পাসে বসিয়ারইয়াছে। এসময় সদ্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া এক যুবক সামনে দিয়ে যাইতেছিলো। আর যায় কোথায় তাহাকে ডাকিয়া রুস্তমের চ্যালারা একটা ল্যাপটপ ধরাইয়া বলিল ভাইকে ফ্রেইন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও, আর ভাইয়ের পিটবুলের ফ্যান পেইজে লাইক কমেন্ট করিতে থাক। বেচারা আর কি করে নিরুপায় হইয়া তাহাই করিলো।
কিছুক্ষন পর ল্যাপটপ ফেরত লইয়া রুস্তমের চ্যালারা কহিল হতচ্ছাড়া এ কি করিয়াছিস “বস লিখিয়াছে বাথরুমের স্যান্ডেল ছিড়িয়া গিয়াছে, মনটা বড়ই খারাপ” আর তুই তাহাতে লাইক দিয়া একটা স্মাইলি দিয়াছিস!?
যুবক আসলে দুঃখের ইমো দিতে গিয়া ব্রাকেট উলটাইয়া স্মাইলি দিয়া ফেলিয়াছিলো। যা হউক ইহাতে তাহার শাস্তির মাত্রা বাড়িয়া গেলো। তাহাকে পাঠানো হইলো অদূরে বসিয়া থাকা এক কপোত-কপোতীর কাছে। উদ্দেশ্য কপোতীর ফেবু পাসওয়ার্ড জানিয়া আসা। ইহাতে যুবকের কপালে যে দারুন বিপর্যয় ঘটিয়াছিলো তা বলাই বাহুল্য।
এমনি করিয়া রুস্তম বেশ লাইক কামাইয়া লইতেছিলো আর ক্যাম্পাসময় “লাইক রুস্তম” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলো।
৩.
একদিনের কথা। রুস্তম পিটবুলের গান আওড়াইতে আওড়াইতে ভার্সিটির সরু গলি পার হইতেছিলো। এসময় ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী ললনাময়নার সহিতধাক্কা খাইয়া মাটিতে আছড়াইয়া পড়িল। রুস্তম মাটি থেকে উঠিয়া কহিল “ দেখিয়া চলিতে পারো না, ঘরে কি বাপ ভাই নাই?” ললনা কহিল আমিতো হেড ফোনে পিটবুলের গান শুনিতে ব্যাস্ত ছিলাম, আপনার মন কোথায় ছিলো? দেখিয়া চলিতে পারেন না?
মেয়েটি পিটবুলের ভক্ত জানিয়া রুস্তম কিছুটা নরম হইলো, সুযোগ বুঝিয়া মেয়েটিকে জানাইয়া দিলো পিটবুলের জনপ্রিয় ফ্যান পেইজটির মালিক স্বয়ং তাহার সামনে। ব্যাস দুজনের প্রেম হইয়া গেলো!
৪.
রুস্তম তাহার গার্লফ্রেইন্ড ময়নার বাসায় আসিয়াছে তাহার হবু শ্বশুরকে সাক্ষাৎ দিতে। ময়নার পিতা রুস্তমকে কহিলো তা বাবা রুস্তম তোমার বৃত্তান্ত খুলিয়া কহ। রুস্তম কহিল- জি আমি স্টুডেন্ট, ফেসবুকে আমার একটি পিটবুলের ফ্যান পেইজ রইয়াছে, তাহাতে ৭ হাজারের মত লাইকও রইয়াছে। আর মা গত হইয়াছেন অনেক আগেই, বাবা কিছুদিন হইলো দুনিয়া ছাড়িয়াছেন। এখন এক চাচাই আমাকে দেখিয়া রাখিতেছেন।
বৃত্তান্ত শুনিয়া ময়নার পিতা কহিল “দেখ তুমি বামন হইয়া চাঁদের দিকে হাত বাড়াইতেছো, আমার মেয়েকে বিবাহ করিয়া আমার ৭০ হাজার লাইক পাওয়া ফ্যান পেইজ হাতাইয়া লওইয়ার কথা ভুলিয়া যাও” রুস্তম ক্ষেপিয়া কহিল “চৌধুরী সাহেব ফেসবুকের লাইকের দিক হইতে আমি গরীব হইতে পারি, কিন্তু মনের দিক হইতে নয়!” আজ যে অপমান আপনি আমাকে করিলেন তাহার জবাব আপনাকে আমি ঠিকই দিবো। এ কথা বলিয়া রুস্তম ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলো।
এসময় ময়না রুস্তমের পিছু লইতেছিলো। তাহাকে থামাইইয়া রুমে আটক করিয়া চৌধুরী সাহেব বলিলেন “আজ হইতে তোমার রুমের বাহিরে যাওয়া বন্ধ” এক হপ্তার মধ্যে তোমার বিবাহ ঠিক হইতেছে।
৫.
চৌধুরী সাহেব তাহার বন্ধুর বাড়ী আসিয়াছেন মেয়ের বিবাহের পাকা কথা দিতে। এসময় দরজায় দাড়ায়া শুনিলেন বন্ধুর ছেলে রকেট বলিতেছে “বিল্টু মামা চৌধুরীর মেয়েকে বিবাহ করিতে পারিলে তাহার ৭০ হাজার লাইক পাওয়া ফ্যান পেজটি আমার হইয়া যাইবে হা হা হা” এসময় অকস্যাৎ চৌধুরী সাহেব রুমে ঢুকিয়া কহিল “হারামজাদা তোর এই সাধ কোন দিনও পূর্ন হইবে না” -চৌধুরী সাহেব আটক হইলেন।
ওদিকে ময়না আর রুস্তম রিকশায় করিয়া কাজী অফিসে ভাগিয়া যাইতেছে। খবর পাইয়া তাহাদিগকে রকেট তাহার গ্যাং লইয়া ভ্যানে ধাওয়া করিল। ধাওয়া খাইতে খাইতে রুস্তম ও ময়না এক চা-সিগারেটের দোকানে আসিয়া লুকাইলো। তখন রুস্তম কহিল “ময়না আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই, আমারা পালাইতেছি এ স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে পারিতেছি না। তুমি একটু বসো, আমি আসিতেছি”। এই সুযোগে রকেট ময়নাকে আটক করিয়া তাহার আস্তানায় লইয়া গেলো।
৬.
রকেটের আস্তানায় ময়নাকে বাধিয়া রাখিয়া তার পিতার কাছ থেকে তাহার ফ্যান পেইজ আদায় করা হইতেছে। এসময় রকেট বলিল “চৌধুরী সাহেব আপনার ফেবু পাসওয়ার্ডটি আমাকে দিয়া দিন, তা না হইলে আপনার মেয়ের জান কিন্তু আর রাখিবো না” চৌধুরী সাহেব পাসওয়ার্ড দিতে উদ্যত হইলে ময়না কাকুতি মিনতি করিতে থাকে।
এসময় ঝড়ের বেগে রুস্তম আসিয়া পড়ে। হুঙ্কার দিয়া রকেট গ্যাং কে পিটাইতে শুরু করে। তাহাকে কেউ থামাইতে পারে না। সকলকে বেধড়ক মাইর দিয়া রুস্তম ময়নাকে উদ্ধার করে। অতঃপর রকেটকে আবার মারিতে মারিতে কহে “ এবার তোর ফেবু পাসওয়ার্ড আমাকে দে”। পাসওয়ার্ড চাইতে চাইতে রুস্তম রকেটকে বেদম মার মারিতে থাকে।
এসময় ডিবি পুলিশ আসিয়া“পাসওয়ার্ড নিজের হাতে তুলিয়া লইবেন না!” কয়ে রকেটকে রুস্তমের হাত হইতে উদ্ধার করে।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াইয়া যায়। অতঃপর আদালতে রুস্তম বেকশুর খালাস লাভ করে। পক্ষান্তরে রকেট দোষী সাব্যস্ত হইয়া তাহার ফেবু আইডিটি বন্ধ করিতে বাধ্য হয়। ময়নার বাবা তাহার ভুল বুঝিতে পারিয়া মেয়েকে রুস্তমের হাতে তুলিয়া দেয়।
হয়তো চলবে.......।
*এই গল্পটা নিয়ে বন্ধুরা মিলে ইয়ার্কি মেরে একটা পূর্নদৈর্ঘ্য (১১ মিঃ) ছিঃনেমা বানিয়েছিলাম। চাইলে কেউ এটা দেখতে পারেন-
ইউটিউবে দেখুন বাংলা সিনেমা - লাইক রুস্তম
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০৩