somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রুতির বক্তৃতা

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোশারফ চৌধুরী এবং নাইম খন্দকার আজ আনুষ্ঠানিকভাবে, বেয়াই হওয়ার বাগদান সম্পন্ন করছেন তাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে হীরার আংটি, সোনার হার ইত্যাদি অলংকারাদি আদান-প্রদানের মাধ্যমে। মোশারফ চৌধুরীর ছেলে অপু চৌধুরী এবং নাইম খন্দকার সাহেবের মেয়ে শ্রুতি রহমান যেমনটা আশঙ্কা করেছিল- তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই সব কিছু বেশ মসৃণ-ভাবে গড়িয়ে এতদূর। এর পেছনে অবশ্যই দৃঢ়-ভাবে কাজ করেছে উভয় পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অবস্থান এবং কঠিন জীবন একসাথে পাড়ি দেবার জন্য তাদের মধ্যকার ভালবাসার সত্যতা। এছাড়াও, এদের সম্পর্ক নিছক ক্ষণস্থায়ী মোহগ্রস্ততা কিনা, ইত্যাদি বুঝতে চৌধুরী ও খন্দকার সাহেবের নিটোল অনীহার অবদানও নেহায়েত কম নয়।

মিসেস মোশারফ চৌধুরী ও মিসেস নাইম খন্দকারেরও নিজেদের মধ্যে আত্মীয়তা স্থাপনে আপত্তি নেই বলেই ধ`রে নেয়া হয়েছে, যদিও তারা একে অপরকে খানিক শীতলতা-ই প্রদর্শন করে চলেছেন (বিভিন্ন প্রথা, রীতি এইসব পালন সংক্রান্ত উন্নাসিক অনমনীয়তা এবং অজানা শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবণতা থেকে যা উতসারিত)।

বেগম-দের মধ্যকার এই অস্পষ্ট শীতলতাকে সাহেব-দ্বয় উৎক্ষিপ্ত উত্তপ্ততার চেয়ে বহুলাংশে উত্তম ব`লে বিবেচনা করছেন। তাদের মতে, ``মহিলা-মানুষের`` কিছু অযৌক্তিক আপত্তি, অভিযোগ-অনুযোগ ইত্যাদি থাকবেই; বিষয়টি হচ্ছে কত কম সোরগোল তুলে, কিন্তু অসন্তোষের গভীর ইঙ্গিত রেখে (প্রয়োজনে পরে ব্যবহারের জন্য) ভদ্রমহিলাদের আপাতত শান্ত রাখা যায়।

যেমন, জনাব ও জনাবা খন্দকারের সমালোচনা-যোগ্য কিছু বিচ্ছিন্ন আচরণ ও অজ্ঞতায় ক্রোধান্মত্ত স্ত্রীকে ছেলের বাবা মোশারফ চৌধুরী এই ব`লে আশ্বস্ত করেছেন যে, `মেয়ে তো আর যাই হোক তাদের বাসাতেই আসছে`!

মেয়ে আর যাই হোক তাদের বাসাতেই আসছে, এই বাক্যের মাধ্যমে হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছেন- তারা অন্তত মেয়েটিকে ছেলের বউ হিসেবে পাচ্ছেন, যে কিনা শিক্ষিতা, সপ্রতিভ ও সুন্দরী। এবং এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথবা, মোশারফ সাহেব বোঝাতে চেয়েছেন যে, এখন এই নিয়ে স্বাবলম্বী ছেলের সাথে ঝামেলা ক`রে লোকের আলোচনার খোঁড়াক না হয়ে, সব রাগ, ক্ষোভ পরে বিয়ের জালে জড়িয়ে পড়া ঘরের বউয়ের উপর ঝেড়ে মনের ঝাল মিটানর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। নিজেকে প্রাণ-পণে প্রথমটি বুঝিয়ে প্রবোধ দিয়ে, তার স্ত্রী যে দ্বিতীয়টি ভেবে আশ্বস্ত হচ্ছেন তা জেনে গোপনে খুশী হওয়াও মোশারফ চৌধুরীর পক্ষে অসম্ভব কিছু ছিল না।

শুরুর দিকে চৌধুরী ও খন্দকার সাহেবের মধ্যেও এক আধটু ব্যক্তিত্বের সংঘাত দেখা দিয়েছিল। তবে সামাজিক, পেশাগত জীবনে স্ব স্ব অবস্থান সম্পর্কে উভয়ের সচেতনতা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অচিরেই তাদের মধ্যে জন্ম দিয়েছিল জরুরী বিনয় ও বন্ধুত্বের।

আজ এই শুভ দিনে- আংটি বিনিময় বাগদান অনুষ্ঠানে ছেলে-পক্ষ থেকে চৌধুরী যুগল ছাড়াও এসেছেন ছেলের (অর্থাৎ অপুর) বড় চাচা, মামা, বড় খালা এবং অপুর একমাত্র ছোট বোন মমতা।

অপুর বাবা অস্থির প্রকৃতির মানুষ। কোনো কিছুতে দেরি করা তার একেবারেই সহ্য হয় না। তাই বাংলাদেশী সন্ধ্যা বলতে মাগরিবের আজান থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত যেকোনো সময়কে নির্দেশ করলেও, সোয়া ছয়টার মধ্যেই তারা সদলবলে শ্রুতিদের বাসায় এসে হাজির। শ্রুতিরাও এতটা আশু আশা করেনি তাদের।

অপুর বড় চাচা, রহিম চৌধুরী একজন অবসর-প্রাপ্ত সরকারী চাকুরে। অন্তত ছফুট লম্বা ভদ্রলোক এই বয়সেও ছিপছিপে। খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলেও পেটের আশেপাশে কোথাও কোনধরনের ভুঁড়ি বা এই জাতীয় কিছু সনাক্ত করা যায় না। সোনালী, চিকণ ফ্রেমের চশমার পেছনে তার জ্বলজ্বলে চোখ দুটো অশান্ত। ঠোট চেপে, চোয়াল শক্ত করে রাখেন বলে মুখে একটা কপট গাম্ভীর্য ফুটে ওঠে। যেন যথেষ্ট সম্মানের অভাবে উৎকণ্ঠিত তিনি। বর্তমানে মূল শহর থেকে বেশ দূরে, নিজের একটি ছোট-খাটো একতলা বাড়িতে প্রায় একাই (স্ত্রী মারা গেছেন দু বছর হল) বসবাস করেন তিনি। ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকে। মাঝে মাঝে দেশে এসে তারা দেখে যায় তাদের বাবাকে। নিয়েও যেতে চায় নিজেদের কাছে, মৃদু কণ্ঠে; তবে তাদের ইচ্ছার চেয়ে ভদ্রলোকের অনীহার জোর অনেক প্রবল ব`লে তিনি এখনো দেশেই বসবাস করছেন।

ছোট ভাইয়ের মত একটা গাড়ি নেই বিধায় (ভীরুতার কারণে নেই) আগস্টের এই চটচটে গরমেও তাকে আজ এখানে আসতে হয়েছে আঁটসাঁট সিটের, ভিড়ভাট্টায় থিক থিক একটি নন-এসি বাসে চ`ড়ে। যদিও তিনি জানেন যে এত ব্যস্ততার মাঝে তার ভাইয়ের পক্ষে তাদের গাড়িটিকে এত দূর পাঠিয়ে তাকে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না; তথাপি তিনি তাদের ক্ষমা করতে পরেননি; যেমন পারেননি যাত্রী-লোভী, তেল চিটচিটে শার্ট পরা হেল্পার ছোকরাটিকে; তাকে প্রশ্রয় দেয়া বাসের চালক ও তার পাশের আসনে বসে কাঁধে ঘাম সরবরাহ করতে থাকা অপরিচিত যাত্রীটিকে। তাই অবধারিতভাবে- স্বভাবে অত্যন্ত খুঁত খুঁতে ও নিজের রাগকে ভালবাসা রহিম চৌধুরীর ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ না চাইতেও গিয়ে পড়ল মেয়ে পক্ষের ব্যস্ত, বর্তমানে অপ্রস্তুত এবং তাই কতক বিমনা লোকজনের উপর। ফলে এখন এখানে ছোট ভাইয়ের পাশে ব`সে, পরবর্তীকালে এই সম্বন্ধ নিয়ে যে তার আপত্তি আছে- এমন মনোভাব প্রকাশ করতে মেয়ে-পক্ষের গুরুতর কোনো খুঁত খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি। এবং তা মোটেও কঠিন কাজ ছিল না। তার নেতিবাচক মতামত উপেক্ষা না করা হলেও, বিয়ের অগ্রগতি বিবেচনায় তা যে আমলেও নেয়া হবে না এবং ফলে তিনি যে নিঃসন্দেহে গভীর অভিমান করার নিশ্চিত সুযোগ পাচ্ছেন, আপাতত সেই শক্তিশালী সম্ভাবনাটি তাকে এক অনাবিল সুখের প্রবাহে ভাসিয়ে দিল, যদিও তা তার ঘনায়মান ক্ষোভকে এতটুকু স্তিমিত করতে পারল না।

অপুর বড় খালা, একজন ধনী গৃহিণী; স্থূলকায়, অস্থির স্বভাবের, উন্নাসিক বয়স্ক ভদ্রমহিলা। তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী এবং ব্যবসার কাজে বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন বিধায় আজকের এই অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তাদের একমাত্র ছেলে- যে অপুর সমবয়সী- বর্তমানে দেশের একটি নামকরা ব্যাংকে ভাল চাকুরী করছে। এই শহরে থাকে না ব`লে সেও আজ উপস্থিত হতে পারেনি এই অনুষ্ঠানে। যদিও অপুর এই খালা তার বোনের ছেলেমেয়েদের প্রতি যথেষ্ট স্নেহ-প্রবণ এবং তাদের নৈকট্য-যোগাযোগ-প্রতীতিতে কোনো প্রকার কমতি-খামতি খালি চোখে সনাক্ত করা যায় না। তবু, নিজের ছেলের পূর্বে দৃশ্যত একটি সচ্ছল পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের সাথে বোনপোর গাঁটছড়া বাঁধার এই সুখকর আয়োজনে তিনি সুখী হতে পারেননি। এই ঈর্ষা এতই সহজাত যে, একে প্রতিহত করা ছিল, তার জন্য অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ; যদিও এই হীন বোধকে তিনি স্বীকার করতে চাচ্ছিলেন না। এবং সে কারণেই হয়ত, শ্রুতি-দের বাসায় ঢোকার পর থেকে তিনি অস্বাভাবিক অস্থির আচরণ করছিলেন। শ্রুতির জ্ঞাতি ভাই বোন- যারা মেহমানদের আপ্যায়ন শ্রেণীর কাজে অনভ্যস্ততার কারণে মূলত কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করছিল- তাদের দিকে তিনি তাকাচ্ছিলেন শীতল দৃষ্টিতে; তাছাড়া তাদের কারো সাথে কথা বলতে হলে, তিনি তা বলছিলেন ঠোটের কোণে এক চিলতে চেষ্টা-কৃত পরিহাসের হাসি ফুটিয়ে। `অনুষ্ঠান শুরু করতে দেরি ক`রে ফেলছে`, `মেয়ের মা কেন তাদের পাশে এসে বসছেন না`— ফিস ফিসে স্বরে বোনের কানে কানে ক্ষণে ক্ষণে এই সব মন্তব্য ক`রে, ইতিমধ্যেই যথেষ্ট অসন্তুষ্ট মিসেস চৌধুরীর মেজাজ আরও যেন খিঁচরে দিচ্ছিলেন এই ভদ্রমহিলা। এখন বরং মিসেস চৌধুরীই বোনের অবিরল সমালোচনার মৃদু প্রতিবাদ স্বরূপ মেয়ে পক্ষের হয়ে কিছুটা কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করছিলেন এক দুই কথায়; যদিও মেয়ের মা`র অগ্রহণযোগ্য সঙ্কোচ এবং ব্যতিব্যস্ত আত্মীয়স্বজনের অপ্রস্তুত কর্মকাণ্ড তাকে বিরক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছিল।

শ্রুতিদের ড্রয়িং রুমের কিছু আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলে, বেশি মানুষের বসার ব্যবস্থা করতে সোফার সাথে খুব সম্ভবত ভাড়া নেয়া লাল রঙা প্লাস্টিকের যে চেয়ারগুলো সাড়ি বদ্ধ-ভাবে বসানো হয়েছিল, তারই একটিতে, ঘরের কোণার দিকে ব`সে শ্রুতির আত্মীয়স্বজনদের ব্যস্ত চলাফেরা শান্ত ভঙ্গীতে লক্ষ্য করছিলেন রফিকুল ইসলাম সাহেব। ভদ্রলোক অপুর মামা হন। নির্বিরোধী সহজ সরল মানুষ। বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরিতে দীর্ঘকাল চাকরী ক`রে কিছু দিন হল তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। বিয়ে-সাদি করেননি এই জীবনে। অবসর নেয়ার পর, গ্রামের বাড়িটাকে ঠিকঠাক ক`রে ওখানেই, কিছুদিন হল , পাকাপাকিভাবে উঠে পড়েছেন। বাকি জীবনটা সেখানেই, শান্তিতে, নির্ঝঞ্ঝাট কাটাবেন ব`লে স্থির করেছেন। এত গুলো বছর শহরে বাস ক`রেও গ্রামে থাকতে তার এতটুকু অসুবিধা হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই এর কারণ গ্রামের বাড়ির সাথে তার সম্পর্ক সবসময়ই ছিল গভীর এবং নিরবচ্ছিন্ন। অবসর নেয়ার পর, এর মধ্যেই বাড়ির পুকুরটা পরিষ্কার ক`রে ঘাট বাঁধিয়েছেন, পুকুরপাড়ের আগাছা সাফ করে ঘাস বুনে শক্ত করেছেন মাটি; মাছও ছেড়েছেন কিছু। কয়েকদিন আগে দুটো গরু কিনে একটা ছাউনি তুলে দিয়ে তৈরি করেছেন ছোট একটা গোয়ালঘর। চার জোড়া বাজ্রিগার পাখি কিনে বড় একটা খাঁচা ঝুলিয়েছেন বারান্দার কোণায়, তার রুমের দরজার সামনে। বাড়ির পেছনে পেঁপে কলা এটা-সেটার চারাগাছ লাগিয়ে তৈরি করেছেন একটা ছোট বাগান। নিজেই নিয়মিত পরিচর্যা করেন সেটির। গত পাঁচ বছর যাবত যে ছেলেটাকে এই শূন্য বাড়িঘর দেখাশুনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সে-ই এখন রফিকুল ইসলাম সাহেবের দেখাশোনা করছে বাড়িতে। আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি গ্রাম থেকে চ`লে এসেছিলেন দুদিন আগে এবং এখন, রুমের অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী কোণে চুপচাপ বসে নিশ্চিন্তে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন বটে, কিন্তু মন-টা তার পড়ে আছে গ্রামে। এই প্রায় ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আসা শ্রুতিদের কিছু প্রতিবেশী ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলা তাদের পাশে এসে সঙ্কোচ ভ`রে বসছে দেখে অপুদের বাসার অন্য সকলে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও (তারা হয়ত আরও ঘরোয়া কিছু আশা করেছিলেন), রফিক সাহেব তাদের সাথে পরিচিত হচ্ছিলেন আগ বাড়িয়ে, যা অপুর দাম্ভিক মা এবং ঈর্ষালু খালাকে নীরবে বিরক্ত করে তুলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, অপুর বোন মমতার মন ভাল নেই। তার মন এতই খারাপ যে, শ্রুতিদের খালাত-চাচাত জাতীয় ভাইদের মধ্যে থেকে এক সুদর্শন নানান ভাবে তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত নানান কসরত করতে করতে প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেলেও, সেদিকে অন্তত একবার চেয়ে দেখারও ইচ্ছে হয়নি মমতার। মায়ের পাশের আসনে বসে সে চুপ এবং নিরাসক্ত। লিটন নামক একটি ছেলের সাথে তার প্রায় তিন বছর পুরনো গভীর ও প্রবল প্রণয়ের সম্পর্ক নিয়ে বর্তমানে সে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। যেহেতু লিটনও তার সাথেই, একই বর্ষে পড়ছে, তাই শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা যতই এগিয়ে আসছে, মমতার দুশ্চিন্তার মেঘ ততই ঘনীভূত হচ্ছে। মমতা তার মা-বাবাকে যতটা, যেভাবে জানে, তাতে এটা অনুমান করা তার জন্য কঠিন ছিল না যে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই, বিয়ের জন্য তার মা-বাবার বর্তমান পিড়াপিড়ি, অচিরেই প্রবল জোরজবরদস্তিতে রূপ নেবে। মমতা নিজেও হয়ত লিটনকে বিয়ে করার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত নয়। সে অবশ্যই লিটনকে ভালবাসে, কিন্তু লিটনকে বিয়ে করার ব্যাপারে নিজেকে এখনো প্রস্তুত করতে পারেনি মমতা। মূলত যেটা হচ্ছিল- মাবাবা কর্তৃক এরেঞ্জড-মেরেজ ঠ্যাকাতে লিটনের চেয়ে উত্তম আর কোনো বিকল্প, উপায়ন্তর নেই মমতার কাছে। মা-বাবার হঠকারিতার মোকাবেলায় লিটনকে গেলাতে মমতা এতই চিন্তিত হয়ে পড়েছিল যে, লিটন কি আদৌ সুবিস্তৃত দীর্ঘ জীবনে তার সঙ্গী হবাত উপযুক্ত কিনা, তা নিয়ে ভেবে দেখার অবকাশ ছিল না তার। বড় ভাইয়ের বিয়ে সংক্রান্ত এই আয়োজন তাই এক অসহনীয় উৎকণ্ঠার জন্ম দিল মমতার মনে; এবং তা এ সমস্ত বিষয়ে পুরাদস্তুর অজ্ঞ শ্রুতির হতভাগ্য জ্ঞাতি ভাইটির সন্ধ্যাটিকে ক`রে তুলল ব্যর্থ ও তেঁতো।

তপ্ত সন্ধ্যাটি দ্রুত গড়িয়ে ঘড়ির সাড়ে সাতে পৌঁছে যেতেই শ্রুতি-দের মুরুব্বী শ্রেণীর আত্মীয় স্বজনরা আসতে শুরু করলেন। শ্রুতির বাবা এবং এক অমিশুক চাচা, যারা মেহমানদের সাথে আলাপ জমাতে পুরাদস্তুর ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তারা যেন শ্রুতির এই আত্মীয়-স্বজনের অবশেষ আগমনে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু হোস্টদের বিলম্বিত আগমন অপুর মা, খালা, চাচার কাছে উদ্ধত ও তাচ্ছল্য-পূর্ণ ব`লে ম`নে হল। আক্ষরিক অর্থেই তারা তাদের আশা করেননি এসময়; নিজেদের আগমনের পর তো নয়ই! এরও একটি হেস্তনেস্ত করে নেয়া হবে ঠিক ক`রে অপুর মা প্রায় নিলীন হয়ে, সিল্কের পাঞ্জাবী পরে চুপচাপ ব`সে নার্ভাসনেস কাটাতে এদিক ওদিক সপ্রতিভ-ভাবে দেখতে থাকা অপুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। অপু পুরো বিষয়টি খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরে বরং, যেন খুশিই হয়ে উঠল। যেটি অস্বাভাবিক ছিল। এতে তার খুশী হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না!

তবে, সর্বশেষ অতিথিরা ঘরে ঢুকতেই যেন অনুষ্ঠান জ`মে উঠল। শ্রুতির বাবা তাদের বিলম্বিত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে, অপুর মা বাবা চাচা খালাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। শ্রুতির মামা, চাচা, বড় ভাইরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তাদের দেরীর জন্য ক্ষমা চেয়ে মুহূর্তের মধ্যে শুরু করলেন অনুষ্ঠান। খানিক পরেই শ্রুতির বড় ভাবি শ্রুতিকে গিয়ে নিয়ে এলেন ১৩ বাই ২০ ফুটের এই বড়সড় বসার ঘরটির ভেতর। শ্রুতির শাড়ির তীব্র খসখস, গলা, কান, সিঁথি ও হাতের কব্জির অলঙ্কার সামগ্রীর রিনিঝিনি শব্দে ভ`রে উঠল ঘরের তপ্ত বাতাস। ভাবী দ্বারা চালিত হয়ে বিয়ের কন্যা শ্রুতি রুমে এসে ঢুকতেই সবাই চুপ হয়ে তাকাল তাদের দিকে। ড্রয়িং কাম ডাইনিং কক্ষটির একপাশের দেয়াল ঘেঁষে রাখা যে সোফা-সেটটিকে ঘিরে ঘরের অন্যান্য আসনগুলোকে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছিল, তারই একটিতে বসেছিল অপু। শ্রুতিকে সেখানেই নিয়ে গিয়ে বসাটা ঠিক হবে কিনা, তা ভেবে শ্রুতির বাহুতে বড় ভাবীর আঙুলের আলতো বন্ধনটির সিদ্ধান্তহীনতায়, বউ সুলভ জড়তা উতরে `শ্রুতি` সোজা গিয়ে বসল অপুর পাশের আসনে। সাবলীল ভাবে। এতে ইতস্তত ক`রে, এবার বড় ভাবীই বরং শ্রুতিকে অনুসরণ করে গিয়ে বসলেন তার পাশে। এবং অপু সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেক হচ্ছে, এমন ভঙ্গীতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শ্রুতির অপর পাশে নড়েচড়ে বসল মৃদু হাসির সাথে।

শ্রুতি হয়ত ভুল ক`রে ফেলেছে এমনটা ধারনা করে সব জান্তা এবং মহা দায়িত্ববান একজন মামা শ্রুতিকে, `মা তুমি এইখানে বস`- জাতীয় কিছু একটা বলতে মুখ হা করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে শ্রুতি তার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে মৃদু হাসলে তিনি চমকে, চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু বুঝলেন না কিছুই। যারা বিষয়টি খেয়াল করেনি (যেমন মমতা এবং তাকে মুগ্ধ করতে ব্যস্ত জ্ঞাতি ভাইটি), তারা ছাড়া বাকী সকলের চোখ এখন বর ও কনের দিকে নিবদ্ধ। এ দুজনের অসঙ্কোচ এবং নিরুদ্বিগ্নতায় তারা সবাই নিজেদের অজ্ঞাতেই বুঝতে পারছিলেন যে তারা একসাথে কিছু একটা করতে চলেছে এবং এও যে, বাকী সকলেই এখন এই রহস্যময় আচরণ-কৃত যুবক যুবতির পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হয়ে পড়েছেন।

শ্রুতি সবার দিকে তাকাল একটি স্থির, নিশ্চিত এবং অমায়িক দৃষ্টিতে। শেষে পাশে ব`সে থাকা অপুর দিকেও। কাছে দাঁড়িয়ে থাকা মামার দিকে পুনরায় তাকাতেই, শ্রুতির মাথা থেকে ঘোমটাটি টান লেগে খসে পরল কাঁধে এবং ক্লিপ খুলে গিয়ে কিছু চুল তার গালের দুপাশে ছড়িয়ে পড়ল বাঁধভাঙ্গা, উচ্ছ্বসিত জলরাশির মত।

সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ এবং স্থির ক`রে দিয়ে, এই পর্যায়ে শ্রুতি কথা বলতে আরম্ভ করল কোনোরূপ ভূমিকা ছাড়াই এবং সকলেই তার কথায় এমনভাবে মনোযোগ দিল, যেন এমনটাই হওয়ার কথা ছিল আগে থেকেই।

`আমাদের দুজনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে, এই অনুষ্ঠানে আপনারা সকলে এসেছেন, সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ`

ধন্যবাদ ব`লে শ্রুতি একবার তার নিজের মা এবং তারপর অপুর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসল, মিষ্টি ক`রে। তাদের এই নাটকীয়তার বিষয়ে শ্রুতির মা সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকা স্বত্বেও, মন্ত্রমুগ্ধের মত মেয়েকে হাসি ফিরিয়ে দিলেন তিনি। উৎকণ্ঠিত হবার হাজারো কারণ থাকলেও মেয়ের আত্মবিশ্বাসী হাসি তাকে বরং আশ্বস্ত ও নিশ্চিন্ত করে তুলল।

সকলকে এরকম চমকে দিয়ে উদ্ধতের মত কথা বলতে শুরু করায় একে একটি স্ক্যান্ডেল হিসেবে ভাবতে শুরু করা, অপুর মা শ্রুতির সেই সাবলীল হাসিতে তাকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু একটা ভেবে ওঠার সাহস হারিয়ে ফেললেন। এবং নিজেকে গোপনে অবাক ক`রে দিয়ে শ্রুতির সেই হাসির জবাবে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৌজন্যের সাথে মাথা নাড়লেন।

শ্রুতি পুনরায় বলতে আরম্ভ করে,

`আপনারা হয়ত ভাবছেন, এবং ভেবে অবাক হচ্ছেন কেন আমি হঠাত সবাইকে চমকে দিয়ে এভাবে বলতে শুর করেছি। আসলে আমরা দুজনে মিলেই এটা পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা অবশ্যই চাই না আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে আপনারা ব্যথিত হন। তাই আমরা ভাবলাম, আমাদের উচিৎ আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করা এবং আমাদের ইচ্ছায় ও কাজে আপনাদেরও সম্পৃক্ত করা। বিয়ে-সাদির যত আচার-অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে আমাদের দেশে, ছেলে-পক্ষ ও মেয়ে-পক্ষ যেগুলো পালাক্রমে আয়োজন করে থাকে- আমরা মনে করি এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় কেবল খাওয়াদাওয়া, অযথা কেনাকাটা ইত্যাদির পেছনে। ভেবে দেখুন কেবল একবেলার একটি ভোজ কি পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে সক্ষম। যেখানে একইরকম একাধিক অনুষ্ঠানে কখনো একই অতিথি একাধিক-বার অংশগ্রহণ করেন। আমরা বুঝি যে এই লোকজ অনুষ্ঠানগুলো স্রেফ একটি খরুচে ভোজ নয়। এর মাধ্যমে নব দম্পতিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় একটি সমাজের সাথে। একটি দম্পতির বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সমাজের লোকজন তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বের শুরুতে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করেন, আশীর্বাদ করেন, শুভেচ্ছা জানান এবং স্বীকৃতি দেন। আমরা অবশ্যই এই চিরায়ত প্রয়োজনকে বুঝতে পারি। এবং স্বীকার করি। কিন্তু যা আমাদের জন্য মেনে নেয়া কঠিন, তা হচ্ছে, এই অনুষ্ঠানের অনাবশ্যক ব্যাপকতা ও একাধিক পর্বের বাহুল্য। কেন এই ভোজকে এত বিপুল বিশাল একাধিক পর্বের সমষ্টি হতে হয়? কেন এটিকে একটি সরল আকারের মধ্যে, একটি স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান, নির্দিষ্ট গণ্ডির আমন্ত্রিতদের ভেতর সীমাবদ্ধ করা যায় না? কেন এটা স্রেফ কাপড়চোপড়, অলংকারাদি কেনাকাটা, ভোজ কেন্দ্রিক উৎসব? আর যদি একটি নতুন সংসার, দম্পতির নতুন জীবনের শুরুটি উদযাপনের দাবী রাখে, তবে বিয়ের ব্যাপক সুদীর্ঘ আচার অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কেন কোনো জনহিতকর কাজে ব্যয় করা যায় না? সেটিও হতে পারে একটি অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে; একটি চমৎকার উৎসব। এটাও অবশ্যই হতে পারে নব জীবনের একটি দারুণ সূচনা। তাই আমরা আপনাদের কাছে এই প্রস্তাব দিতে চাচ্ছি যে- আমাদের বিয়ের জন্য আপনারা এবং আমরা যে অর্থ বরাদ্দ করে রেখেছি অথবা করব (এবং স্বাভাবিকভাবেই সেটি একটি বিশাল অংক) তা যেন কোনো জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হয়। হতে পারে তা আমাদেরই প্রতিবেশের শিশুদের জন্য। হতে পারে আমাদের স্বস্ব এলাকার অভাবী পরিবারগুলোর জন্য। হয়তো এলাকার কোনো উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত কাজ! আমাদের শিশুদের প্রয়োজন, প্রতিবেশী অনেক পরিবারের গোপন দীনতা, কিংবা এলাকার অবস্থা, অপরিচ্ছন্নতার তুলনায় আমাদের অনুদান খুব সামান্যই হবে। তবু একটি প্রচেষ্টা; এবং এর মাধ্যমে নতুন জীবনের শুরুতে একটি শুদ্ধ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও হবে।

সেক্ষেত্রে, আজকের এই বাগদানের অনুষ্ঠানটিকেই আমরা একটি পূর্নাঙ্গ বিয়ের অনুষ্ঠানে রূপ দিতে পারি। এবং কাল থেকেই আমরা বসতে পারি কিভাবে, আমাদের বিয়ে উপলক্ষে কোনো সেবামূলক কাজের আয়োজন করা যায়।`

যেহেতু পূর্ব থেকেই এই বক্তৃতা শ্রুতি ও অপু ঠিক করে রেখেছিল, তাই শ্রুতির নাটকীয় বক্তৃতা যে এখানেই শেষ হচ্ছে তা জেনে এই পর্যায়ে অপু ও শ্রুতি একসাথে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে একে একে লক্ষ্য করতে শুরু করল আগ্রহের সাথে এবং মুখের অভিব্যক্তি দেখে তারা বোঝার চেষ্টা করল তাদের মনোভাব।

তরুণ এই যুগল, এবং তারুণ্যের স্বভাবসুলভ মহৎ মহান চিন্তা প্রসূত তাদের এই প্রস্তাব অবশ্যই মুরুব্বীদের কাছে ছেলেমানুষে আচরণ হিসেবেই গৃহীত হল। যা স্পষ্ট হল, তাদের অধিকাংশের ঠোটে ফুটে ওঠা প্রশ্রয়দানকারী হাসি ও মাথার সম্মতিসূচক সপ্রশংস দুলুনিতে।

এরপর বিশেষ ক`রে পুরুষ মুরুব্বীগণ মশগুল হয়ে উঠলেন বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক আলোচনায়। তাদের একেকজন প্রমাণ করতে চাইলেন, বক্তৃতায় তারাও কারো চেয়ে কোনো অংশে কম যান না। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল এই যে, তাদের অধিকাংশই তরুণ যুগলের উত্থাপিত বিরল-আবেগি-নাটুকে, তথাপি সম্ভব একটি সদাশয় প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে নিজেদের বক্তব্য জানাচ্ছিলেন শ্রুতি ও অপুকে মুগ্ধ করার একটি গোপন প্রয়াস থেকে। তাদের সকলেই নিজ-নিজ মতামত জানাতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন এবং পুনঃপুনঃ তারা তাদের জ্বলজ্বলে চোখে, শ্রদ্ধার কামনা নিয়ে তাকাচ্ছিলেন তরুণ যুগলের দিকে; অনুসন্ধান করছিলেন তাদের মনোভাব ও সন্তুষ্টি।

ইত্যবসরে, যুগলের সদ্য পেশকৃত সাহসী প্রস্তাব বিবেচনায় আনা হবে কিনা, যুগপৎ-ভাবে উৎকণ্ঠার ও সুখকর সেই আলোচনার ডামাডোলে, অপুর বড় চাচা প্রাত্যহিক রাগ ভুলে বর ও কনের কাছে নিজেকে একজন সুবিবেচক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। শ্রুতির ঈর্ষালু খালার কাছে মেয়ে-পক্ষের দোষত্রুটিগুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ ব`লে মনে হতে থাকল এবং তাই কথা খুঁজে না পেয়ে তিনি চুপ ক`রে রইলেন। মিসেস চৌধুরী কনের ধৃষ্টতায় ও পণ্ডিতিতে অতিশয় বিরক্ত হলেন বটে, কিন্তু একই কারণে, এমন একটি সাহসী মেয়েকে বিয়ে করতে চলেছে বলে, আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ছেলের জন্য নিজেকে গর্বিত বোধ করলেন। অপুর মামা অকারনেই যেন নিজের সহজ গ্রাম্য জীবনের সরলতার অনুজ্জ্বলতা নিয়ে অহংকার বোধ করতে শুরু করলেন, এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যান্যদের সাথে আলোচনায় যোগ দিলেন ফুরফুরে চিত্তে। অপুর ছোটবোন মমতার কাছে তার প্রেমিক লিটন ও মা-বাবার ইচ্ছের সঙ্কট হঠাৎ করেই যেন তুচ্ছ হয়ে উঠল। এবং মা-বাবার অনুমোদনের চেয়েঅ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল লিটনের সাথে তার বর্তমান সম্পর্ক। চিন্তার জগতে একটা গুমট, বিভ্রান্ত, অস্পষ্ট ভাব দূর হয়ে, পুরো বিষয়টি তার কাছে অলৌকিকভাবে হয়ে উঠল রৌদ্রজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ।

এমনটি অল্পবিস্তর ঘটছিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য সকলের ক্ষেত্রেও। অপু ও শ্রুতির নাটকীয় প্রস্তাব আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় তা কতটুকু ছেলেমানুষে অথবা বিবেচনাযোগ্য এসব বিষয়ে ভেবে দেখার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল আরও বেশ কিছু, সাধারণত উপেক্ষিত বিষয়। যেমন বিয়ে-সাদি বিষয়ক সৌজন্য, সংস্কার, ব্যক্তির আচারআচরন, দেনাপাওনা ইত্যাদির প্রয়োজন মুহূর্তের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া- যা প্রত্যাসন্ন ক্রান্তিকালের কথা ভেবে চিন্তিত মমতাকে যেমন, ঠিক তেমনি উপস্থিত বাকী সকলকেই দিয়েছিল স্বচ্ছ ও সরল চিন্তার অবকাশ এবং নির্জলা সারল্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×