somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেঁচে থাকাটা জরুরী হয়ে উঠেছে

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসের ব্যস্ত সময় পার ক’রে রাস্তার জ্যাম ভিড়ভাট্টা ঠেলে ঘরে ফিরে বিদ্যুতের দয়াদাক্ষিণ্যে কয়েক দফায় টিভি দেখা, ভাত খাওয়া, হালকা গল্পগুজব, অনলাইনে ঘোরাঘুরি, লাইক আদানপ্রদান, আর তারপর অফলাইনে মশারী টাঙ্গিয়ে ঘুম। প্রায় বৈচিত্র্য-হীন এইসব কর্মময় অশেষ ব্যস্ত দিনগুলোর শেষে, গুটিসুটি, ক্ষীণজন্মা ছুটির দিনটির আগের রাতটা জেগে ইউ টরেন্টে ডাউন-লোড করা সিনেমা, পর দিন দেরি করে বিছানা থেকে ওঠা, হতবিহবল অবস্থায় কিন্তু বিজ্ঞের মত চেহারা ক’রে বাজার করা, দুপুরে একটা গড়াগড়ি আর বিকেলের দিকে কাছে-ধারের কোনো মার্কেটে গিয়ে জরুরী কেনা-কাটা। রুটিন মাফিক কর্মকাণ্ডের মিলাদে, গোলাপজলের ফোটার মত হয়ত কোনো দিন বন্ধু-দের সাথে দেখা হতে পারে, হয়ত ফ্যামিলি নিয়ে ভাল একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে কোনো সন্ধ্যা কাটানো হয়, এলোমেলো বাসাবাড়ি- দালানকোঠা-দোকানপাট আর এসবকে কেন্দ্র করে পাক খাওয়া মানুষে, বাঁক খাওয়া বাহনে বিপন্ন প্রায় কোনো মাঠে ইতস্তত হন্টন ও হতে পারে। ক্লান্তিকর অবিরল হেক্টিক দিনগুলোতে, খাবি খাওয়া এই সমস্ত ফুরসৎ বড় বিরল ঠেকে! পেশাগত কারণে দূরে স’রে যাওয়া বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাওয়াটা এত বেশি আয়োজনের হয়ে পড়ে যে দুর্লভ আড্ডাগুলো সুরেলা হলেও, সময়ের কারণে, ঘরে ফেরার পথে ভিড়ভাড়, চ্যাঁচামেচির দাঁতাল ইঁদুর কেটে দেয় সুর। ‘মনোরঞ্জন’ ক'রে ঘরে ফেরার পথেই যানজটের তার্পিনে সব সাদাকালো!

দিনের পর দিন ধুলা-ময়লার ভেতর এইভাবে জীবন যাপন করেও কেন যে তবু ঠিক অভ্যস্ত হতে পারি না আমরা, তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়! গা সওয়া হয়ে গেলেই ভাল হত। কিন্তু তা হয় না! প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহায় মানুষ, প্রতিদিনই আফসোস, হাহাকার করে! নিজেই গাড়ি চালান যারা, তারাও যে নিরাপদে কোথাও গাড়িটা পার্ক করে অন্যত্রে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করবেন তার সুযোগ নেই বললেই চলে (মানে পার্ক ক'রে রাখা যায়, কিন্তু গাড়িটা দূরে ফেলে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করাটা হয়ে উঠে না)। ড্রাইভারকে বসিয়ে রেখে অফিস করা যায়, জরুরী কাজ করা যায়; কখনো এক আধ বার দূরে কোথাও ঘুরতেই না হয় যাওয়া হল- কিন্তু নিয়মিত দেরি করা যায় না নিশ্চয়ই যদি বিবেক নামক একটা জিনিসের অস্তিত্ব থেকে থাকে মানব মনের কোথাও।

পাখির মত নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে ঘুরে বেড়াবার জন্য দরকার সুবিধাজনক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, বাস, প্রাপ্তিসাধ্য ট্যাক্সি অথবা অন্য কোনো যাতায়াতের মাধ্যম। রাস্তায় বাসের কমতি নেই ঠিক, কিন্তু ওঠারও যেন কোনো নিরাপদ উপায় নেই! তবু যদি ওঠার উপায় হয়ই, ঝুলে থাকা ছাড়া, কিংবা বসে থেকে ঝুলে থাকা যাত্রীদের ক্লিষ্ট মুখগুলো দেখা ছাড়া কোনো গতি নাই। ট্যাক্সিও দেখা যায় রাস্তায়, ছুটে চলে চঞ্চল বেঙাচির মত, ইতস্তত দাঁড়ায়ও কখনো হুট করে, হাত দেখালে, কিন্তু যেদিকেই যেতে চাওয়া হোক না কেন, তাদের জবাব অবধারিত ভাবে হয় ‘না’। এইভাবে কাজ তো করা হয় প্রতিদিনই। ঘোরাফেরা হয় কি?

তো, এই হল আমাদের জীবন। এরকম অবস্থার কোণে যারা ঠাসা, তারা যে ঘরকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে, টেলিভিশন, ফেসবুককে ভাববে মুক্ত নীলাম্বর- এটাই তো স্বাভাবিক! অবশ্য সেখানেও টুটি চেপে ধ’রে গেলান হয় নষ্ট রাজনীতি। এটাই যেন একমাত্র সহজসাধ্য বিনোদন। হ্যাঁ, রাজনীতি নিয়ে মানুষ চিন্তা করবে, প্রত্যেকটি মানুষের রাজনৈতিক দর্শন থাকেবে। অতএব সকাল বিকাল রাজনীতি গিলতে হবে? সকালের নাস্তা করতে হবে মন্ত্রীর বিয়ের খবর পড়ে, অফিসে আলাপ হবে এমপিদের দৌরাত্ম্যর মাত্রা জেনে, উত্তেজনা বলতে রাজনৈতিক খুন, লুটতরাজ, আনন্দ বলতে কোনো আমলার দুর্নীতির খবর ফাঁস, সন্ধ্যায় পাঁচ-মিশালি বাংলা চ্যানেলগুলোতে দেখতে হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অতঃপর ফেসবুকে জ্বালাময়ী রাজনৈতিক স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টে যুদ্ধ ক’রে দেশ উদ্ধার! আহ, হালকা বিষয় নিয়ে যারা কথা কয়, স্ট্যাটাস দেয়, তারা যে কেন বেঁচে থাকে?

আমরা কেন বেঁচে থাকা বন্ধ করে দিলাম?

ছুটির কথা, সখের কথা, ঘুরে বেড়ানোর কথা, পাখপাখালি কবুতরের কথা, মাছমাছালি গোল্ড-ফিসের কথা, মৎস্য ধরার কথা, হাস্য করার কথা, তাঁবুর কথা, তটের কথা, আরামের কথা, অরণ্যের কথা- চিন্তা করা, পড়তে চাওয়া ও বলতে চাওয়া মউজ-ফুর্তি বিলাসিতা নয়। এ এখন প্রয়োজন। চাহিদা। জানতে চাই কোথায় মাছ ধরতে যাওয়া যায়, কোথায় সাইকেল চালাতে যাওয়া যায়, কোথায় দৌড়ালে ফুরফুরে লাগে, কোথায় সাঁতরালে ক্লান্ত লাগে না, কোথায় তাবু টাঙিয়ে থাকা যায়, কোথায় মাচা বানিয়ে থাকতে হয়, পড়ন্ত বিকেলের সোনালী শান্ত জলে ভেসে থাকা অলস কোনো নৌকার পাটাতনে নিশ্চিন্তে এলিয়ে দেয়া যায় শরীর– বুঝতে চাই অস্তোন্মুখ সূর্যের আঁকা জলরঙের খেয়ালী চিত্রের গভীরতা। কোথায় পাই প্রবীণ বটের ঠাণ্ডা ছায়া, রোদের ঘ্রাণ ভরা ঘাসে শ্রান্ত গড়াগড়ি, হয়ত একটা সাদাসিধে দুপুর, অপস্রিয়মাণ আলোয় ম্রিয়মাণ অপার সন্ধ্যা, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে মুখর গহীন রাতের নিস্তব্ধতা? চাই পাড়ার মোড়ে মোড়ে চমৎকার সব লাইব্রেরী, প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজন অন্তত একটি থিয়েটার, দরকার হাটার জন্য কিছু ভাল ফুটপাথ, গাছ এবং উদ্যান।

এসব সুস্থতা প্রভৃতিকে চাওয়ার জন্যও দরকার গোছান মন। এবং মনগুলোকে গোছানোর জন্য দরকার ঝরঝরে তথ্য। এক্সোটিক স্টোরিজ। হয়তো অসুস্থতার চর্চা শেষ হবে সুস্থতাকে অর্জন করার, আনন্দ অবকাশকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছার মধ্য দিয়ে। হয়তো শুধু সমস্যায় হাঁটু গেড়ে পড়ে থাকলেই সমস্যা লাঘব হয় না, হয়তো সঙ্কটের Destruction'এর জন্য দরকার যথার্থ Distraction।

সেই শুদ্ধ শুভ সুন্দর Distraction কামনা করি http://www.notun-din.com এর কাছ থেকে। নতুন ক'রে শুরু করা নতুন দিনের জন্য রইল শুভ কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×