(শেষ কিস্তি) কিন্তু কিছুসংখ্যা মানুষ, যারা সত্য আবিষ্কার করতে চান এবং জানতে চান যে আসলেই কী ঘটেছিলো, তারা গবেষণা করেছেন, অনুসন্ধান করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে ৬০ লাখ নয়, বরং অসউইচসহ বিভিন্ন বন্দিশিবির ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে নিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার লোক মারা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যান্য ধর্ম সমেত ইহুদীরাও ছিলো। গ্যাস চেম্বার-টেম্বার কিছু নয়, নয় গণহত্যা বা পরিকল্পিত নিধনও-- বরং এরা মারা যায় অনাহারে, রোগ-ব্যাধিতে। যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসউইচসহ অন্যান্য জার্মান বন্দিশিবিরে এ ধরনের মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু ছিলো না। কিন্তু তাতে কী যায় আসে? প্রোপাগান্ড ও অপরাজনীতির দাবার চালে এ তথ্যই গড়ে দিলো জায়নবাদী রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি। সে রাষ্ট্রটি পৃথিবীতে এখন ক্ষুদ্র, কিন্তু মরণাস্ত্র সজ্জিত বড় শক্তি। কুমড়োর ফালির মতো এক চিলতে মানচিত্রে পা রেখে গোটা মধ্যপ্রাচ্য তথা পৃথিবীর নাভিমূলে নৃশংসতা, গণহত্যা ও প্রলয়তান্ডবের ‘স্বগীয় পতাকা' উড়াচ্ছে। এই স্বর্গরাজ্যটার ধরণ এমনই যে সে লোকদের ঠের পাইয়ে দিচ্ছে নরক যন্ত্রণা কারে কয়? কিন্তু আধুনিক এই প্রোপাগান্ডার পৃথিবীতে যুদ্ধের অপর নাম যেখানে শান্তি, ধ্বংসের অপর নাম যেখানে সৃষ্টি এবং মুক্তিযুদ্ধের অপর নাম যেখানে সন্ত্রাস, সেখানে নরকের স্বাদ পাইয়ে দেয়া জায়নবাদী রাষ্ট্রটিকে স্বর্গ নামে আখ্যায়িত করাটা হচ্ছে প্রচলিত অর্থে প্রগতিশীলতা। এই প্রগতিশীলতার ডামাডোলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঐতিহাসিক আর্নো মেয়ার হলোকাস্ট সংক্রান্ত মিথ্যাচার নিয়ে কথা না বলে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- হু ডিড হেভেন্স নট ডার্কেন? মানে হলো স্বর্গ কেন অন্ধকার হয়নি? এ বইয়ে তিনি খোলাখুলিই উল্লেখ করেছেন যে, গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনী সঠিক নয়। অসউইচ ও অন্যান্য শ্রম শিবিরে মৃতদের অধিকাংশই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই কথা দেখা যায় গ্যাস চেম্বার বিশেষজ্ঞ ফ্রেড এ লিউচটার প্রণীত রিপোর্টে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তার রিপোর্টে বলা হয় যে- অসউইচে এ যাবত গ্যাস চেম্বার হিসেবে যা প্রদর্শন করা হয়েছে, এ ধরনের গ্যাস চেম্বার কখনো সেখানে ছিল না। এবং এ ধরনের গ্যাস চেম্বার ব্যবহারের কোনো আলামতও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সবচে তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করেছেন মার্কিন ঐতিহাসিক ও গবেষক রিচার্ড হার্ডটন। তিনি সমকালীন বই-পুস্তক, ঐতিহাসিক প্রমাণ, পত্র পত্রিকার রিপোর্ট ও নুরেমবার্গ আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রভৃতির ভিত্তিতে একটি বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- ‘ডিড সিক্স মিলিয়ন রিয়েলি ডি?' সত্যিই কী ৬০ লাখ নিহত হয়েছিলো? ১৯৯১ সালে একটি ওয়েবসাইটে (জুন্ডেলসাইট জাগ্রাম) তার বইটির খোলাসা প্রকাশিত হলে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত তিনি এই উপসংহারে উপনীত হয়েছেন যে ‘হিটলার কোনো ইহুদী হত্যার নির্দেশ দেননি কখনো এবং গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনীটা একটা আজগুবি গল্পমাত্র।' মা যেভাবে বাচ্চাকে গল্প শুনায়- এক ছিলো দৈত্য। কুলার মতো কান। মুলার মতো দাঁত। সকাল বিকাল হাজার লোকের কল্লা দিয়ে সে নাস্তা করতো..... বলাবাহুল্য, এই সত্যকে আবিষ্কারের জন্যে রিচার্ড হার্ডটনসহ প্রত্যেককেই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তাদের চরিত্র হনন করেছে। কিন্তু তারপরও সত্য তার নিজের মতো করে স্বীয় পথ করে নিচ্ছে। দ্রুতগতিতে খসে পড়ছে মিথ্যার পলেস্তরা। একে একে উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তির সবগুলো আবরণ। হলোকাস্টওয়ালারা দাবি করেন যে শাওয়ার বা গোসলখানায় পানি ছাড়ার কলের ছদ্মাবরণে গ্যাস চেম্বারে ইহুদী গণহত্যা পরিচালনা করা হয়। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান বন্দিশিবিরে নাৎসীর বন্দিদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছে, এর প্রত্যক্ষসাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক রেডক্রস তিন ভলিউমের এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে তৃতীয় ভলিউমের ৫৯৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘রেডক্রস প্রতিনিধিরা শুধু কাপড়-চোপড় ধোয়ার জায়গা নয়, সকল গোসলখানা ও শাওয়ার পরিদর্শন করেছেন। কোথাও নোংরা কিংবা অপরিচ্ছন্নতা দেখতে পেলে প্রতিনিধিরা সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তারা কর্তৃপক্ষকে এগুলো সম্প্রসারণ ও মেরামতের নির্দেশ দিতেন। রেডক্রসের পরিদর্শক টিম প্রায়ই সেখানে পরিদর্শন করতেন। বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে একান্তে কথা বলতেন। বন্দীদের খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ পরীক্ষা করতেন। রেডক্রসের রিপোর্টে দেখা যায়, বন্দিরা যুদ্ধকালীন সময়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে চিঠিপত্র দিতো। বাইরে থেকেও চিঠিপত্র আসতো। রেডক্রস তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি পালন করে। সেখানে বন্দীদের শিশুজন্মের নিবন্ধের ব্যবস্থা ছিলো। মৃত্যুনিবন্ধনের ব্যবস্থাও ছিলো। কেউ অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলো। রেডক্রসের রিপোর্টে জানা যায়, যুদ্ধের এক পর্যায় বন্দিশিবিরের ইহুদী ডাক্তারদের পূর্ব রণাঙ্গনে জ্বরের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে মহামারির মতো জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অসউইচ ও অন্যান্য বন্দি শিবিরেও জ্বর ছড়িয়ে পড়ল। ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে গেল। মিত্রবাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে জার্মানির রেল ও পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ল। এ সময় বন্দিশিবির রোগাক্রান্ত হয়ে বহু লোক মারা যায়। রেডক্রসের বক্তব্য অনুযায়ী এই হচ্ছে অসউইচ, মাউথাউসেন ও অন্যান্য শ্রমশিবিরে বন্দি মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা। হলোকাস্টওয়ালারা যাকে গণহত্যা বলে প্রচার করেছে। এই প্রচারটা এতই গুছানো যে, তারা ৬০ লাখ সংখ্যাটাকে ঠিক রাখবার জন্যে প্রচার করেছে যে, যাকলোন-বি নামক কীটনাশক ওষুধ খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন শ্রমশিবিরে কয়েক হাজার ইহুদী হত্যা করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে নুরেমবার্গ আদালতে ‘যাকলোন-বি' নাৎসীদের হাতে সরবরাহের অভিযোগে ড. ব্রুনোটেসকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। অথচ অধুনা অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, যাকলোন-বি আসলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং বন্দিশিবিরে বন্দি ও কর্মচারীদের উকুনমুক্ত রাখতে, তাদের কাপড়-চোপড় ও শয্যাস্থান ধোয়া-মোছা করতে এর ব্যবহার করা হতো। অথচ ড. ব্রুনোকে হত্যা করা হলো নিষ্ঠুরভাবে মিথ্যাচারকে পুঁজি করে। এভাবে মিথ্যাচারকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, প্রতিপক্ষ হত্যা এমনকি ব্যাপক নরমেধযজ্ঞ সাধন জায়নবাদ ও তার দুসরদের জন্যে নতুন নয়। কিন্তু হলোকাস্ট বিষয়ক মিথ্যাচার এতোই স্থূল যে, ৬০ লাখ ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করলেও সেই সময় জার্মান অধিকৃত পোল্যান্ডে সর্বসাকুল্যে বসবাসকারী ইহুদীদের সংখ্যা ৬০ লাখের অর্ধেকও ছিল না। যাদের অনেকেই আবার যুদ্ধকালে বিভিন্ন দেশে সরে গিয়েছিল। হলোকাস্টওয়ালারা বলে যে, অসউইচে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিল ২০ লাখ ইহুদী। অথচ ১৯৮৯ সালে অসউইচ ও অন্যান্য শ্রমশিবির সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিসের যে গোপন দলিলটি রেডক্রসের হাতে আসে, তাতে দেখা যায়, অসউইচে মারা যায় ১ লাখ ৩৫ হাজার বন্দি। এদের মধ্যে মৃত্যুর সার্টিফিকেট আছে ৬৯ হাজার জনের। যাদের মধ্যে ইহুদীদের সংখ্যা মাত্র ৩০ হাজার। আর জার্মানির মূল ভূখন্ডসহ অন্যান্য শ্রমশিবিরে মারা যায় সর্বসাকুল্যে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ লোক। কিন্তু এই মৃত্যুগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংঘটিত হয় মিত্রবাহিনীর হামলার প্রেক্ষাপটে। যুদ্ধের শেষ মাসগুলোতে ব্রিটিশ ও আমেরিকান বাহিনীর বোমা হামলায় সারা জার্মানি এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। প্রতিটি শহর ও জনপদ ধ্বংসস্তূপের আকার ধারণ করে। জার্মানির পরিবহন, চিকিৎসা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি ভেঙে পড়ে। এদিকে পূর্বদিক থেকে সোভিয়েত বাহিনী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ধেয়ে আসতে থাকে। তাদের অগ্রাভিযানে লাখ লাখ শরণার্থী জার্মানির দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। এই পালিয়ে আসা বন্দিতেই জার্মান নিয়ন্ত্রিত বন্দিশিবির ও শ্রমশিবিরগুলো বোঝাই হয়ে যায়। ১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে এসব শিবিরে বন্দিদের পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। মহামারি আকারে জ্বর, টাইফয়েড, আমাশয় ও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই মানবিক দুর্যোগে মারা গেলো জায়নবাদী ক্যামেরাওয়ালা তাদের লোমহর্ষক ছবিসমূহ তুলে নিচে লেখলেন যে, এরা ইহুদী। এদেরকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়েছে। তারপর সেই ছবি সারাবিশ্ব দেখেছে। এ থেকে চিত্রনাট্য হয়েছে। উপন্যাস হয়েছে। কবিতা হয়েছে, মানুষ হিটলারকে গাল পেড়েছে। ইহুদীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। এই ছবিগুলো অসাধারণ। এগুলো মহোত্তম ছবি। মানুষের দুর্যোগ ও বিপন্নদশা নিয়ে এই ছবিগুলো দিয়ে জায়নবাদীর স্বার্থে মিথ্যাচার করা হলেও এগুলো ঐতিহাসিক স্মারক। মিথ্যাচারের বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় তা আরো বেশি গুরুত্ব অর্জন করবে। টুইনটাওয়ার ধ্বংসের ছবির নিচে, বেনজিরের লাশের ছবির নিচে বিবরণ লেখতে বহু ক্যামেরাওয়ালার জন্যে এই ঘটনা হয়ে উঠবে প্রেরণার উৎস। এই প্রেরণা প্রাণিত করবে বহুজনকে। আর তাদের প্রণোদনার আড়ালে ক্রন্দন করতে থাকবে প্রকৃত সত্য। কিন্তু সত্যের ক্রন্দনে কারইবা কী আসে যায়? মিথ্যার ডিম ফাটিয়ে আস্ত একটা স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যখন সম্ভব, তখন কেই বা তাকাবে সত্যের কান্নাকাটির প্রতি? কিন্তু আসল কথাটা হলো মিথ্যার ডিম ফেটে বেরিয়ে আসা স্বর্গরাজ্যটা জ্বরাগ্রস্ত না হয়ে পারে না। অন্ধকার না হয়ে পারে না। অনুবাদ : মুসা আল হাকিম
সোর্চঃদৈনিক সংগ্রাম
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬