মিথ্যা একটি প্রশ্নকে আমি রচনার শিরোনামে আনলাম। প্রশ্নটি আসলে সোনার পাথুরে বাটির মতো। যে বাটি পাথুরে, সেটা সোনার হতেই পারে না। অনুরূপ স্বর্গ যখন আসে, তখন অন্ধকারের প্রশ্নই উঠে না। কেউ যখন দুটিকে একত্র দেখাবার চেষ্টা করবেন, সেটা হবে নির্ঘাত স্ববিরোধিতা। স্ববিরোধিতা পরিত্যাজ্য হলেও শব্দটা চর্চায় এসে গেলে কিছুটা গা সওয়া হয়ে যায় এবং জীবনচক্রের নানা বাঁকে নিজের একটা জায়গা করে নিতে চায়। আধুনিক বিশ্বে প্রোপাগান্ডার জাদুকরি যেখানে প্রতি প্রত্যুষে অজস্র সামরিক বাছুর তৈরি করতে সক্ষম, সেখানে দু'চারটা কেন, দু চার হাজারটা সোনার পাথুরে সত্য উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের জীবনচক্রে এসে জুড়ে বসাটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা সত্যের আদল পেতে বসেছে বলেই তো ফরাসী কবি বোদলেয়ারের ‘ক্লেদজ কুসুম' মানসিকতা সারাবিশ্বেই আধুনিক ক্রিয়েটিভিটির সাথে পরম সৌহার্দ্যে বাসর যাপন করছে। অতএব কুসুম যদি ক্লেদজ হতে পারে, তাহলে স্বর্গে কেন অন্ধকার থাকতে পারবে না? আর স্বর্গে যদি অন্ধকার থাকতে পারে, তাহলে জায়নবাদের সান্ত্রী-সেপাইরা কেন পারবেন না মিথ্যার অন্ধকারকে ভিত্তি করে জায়নবাদী স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে? তার মানে আমি উদ্দিষ্ট জায়গাটায় চলে আসতে পেরেছি। সেটা হচ্ছে জায়নবাদী রাষ্ট্রের ভিত্তি তথা হলোকাষ্টের প্রসঙ্গ। ঐতিহাসিক রবার্ট বি গোল্ডম্যান লিখেছেন- ‘হলোকাস্ট ছাড়া জায়নবাদী রাষ্ট্র গঠন সম্ভবই ছিলো না।' এখন চিন্তা করুন সেই হলোকাস্ট যদি মিথ্যা হয়, তাহলে জায়নবাদী স্বর্গটার ভিতর কতোটা অন্ধকার? আমরা আসলে জায়নবাদী স্বর্গের ওপর হাত বুলাতে চাই না। স্বর্গটা যারা গড়েছে, তাদেরই থাক। কারুনও স্বর্গ গড়েছিলো। সেটা তারই থেকেছে। যদিও সে তার স্বর্গসহ অন্ধকারের অতল গহবরে বিরামহীনভাবে ধাবমান। জায়নবাদীরাও যদি মহাকালের অমোঘ প্রত্যাঘাতে তাদের স্বর্গসহ অন্ধকারের অতল সিজ্জিনে যাত্রা করে, তাহলে তাদেরকে আটকাবার সাধ্য তো আমাদের নেইই, সেটা হয়তো আমাদের কাজও নয়। আমরা ইতিহাসের মানুষ, ইতিহাস নিয়েই কথা বলবো। ইতিহাস কথা বলবে হলোকাস্ট নিয়ে। যার সারাসার ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে বিবৃত। তাদের ধর্মগ্রন্থে বলা আছে যে, ইহুদীরা যখন রাজ্যহারা হয়ে যাবে, তখন ৬০ লাখ ইহুদীকে আত্মবিসর্জন দিতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে ইহুদীদের নিজস্ব রাষ্ট্র, নিজেদের একটা রাষ্ট্রের জন্য ৬০ লক্ষ প্রাণদান ইহুদীদের পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি, যদিও তাদের বড় বেশি প্রয়োজন ছিল রাষ্ট্র অর্জনের। কেননা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত দেশে দেশে তারা উদ্বাস্তুরূপে অপদস্থ জীবনের গ্লানি নিয়ে নানারূপ উৎপীড়নের শিকার হয়ে জীবন যাপন করছিল। হিটলারের নাজিজম যখন জার্মানিতে উস্কে উঠলো, তখন সেখানকার ইহুদীদের পীঠটা একেবারে দেয়াল ঠেকে যায়। পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে যে কোন জাতির জন্যই অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা না একটা প্রতিবিধান হয়ে যায়। এটা অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মই। ইহুদীদের জন্যও হলো। উপলক্ষ সৃষ্টি করে দিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তারা তখন চাইলো হলোকাষ্টের কর্তব্যটার একটা রাহা করা যায় কী-না? হলোকাস্ট কথাটার সরল তর্জমা হলো আত্মবিসর্জন বা কোরবানী। আগেকার রোমান ও গ্রীকদের ধর্মীয় রীতিতে দেবতাদের খুশি রাখতে অন্ধকার রাতে কালো রঙের পশুকে পুরোটা ঝলসিয়ে উপঢৌকন হিসেবে পাহাড়ে রেখে আসা হতো। এটাকে তারা বলতো হলোকাস্টন তথা পুরোপুরি ঝলসানো উপঢৌকন। পরে ইংরেজিতে সেটা হলোকাস্ট হয়েছে। গ্রীকদের পদ্ধতিতে কিছুটা বিকৃতি বাদ দিলে এটা আসলে পূর্বতন নবীদের যামানায়ও চর্চিত হতো। পশুকে পাহাড়ে বা প্রান্তরে রেখে দেয়া হতো। আকাশ থেকে আগুন এসে সেটাকে ঝলসিয়ে দিলে বুঝা যেত কোরবানী কবুল হয়েছে। মুসা (আ.) ইহুদীদেরকে পশুদানের জন্য নয়, প্রাণদানের জন্য বললেন। এ ব্যাপারটিতে তারা ছিলো খুবই অনীহা। ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই এই অনীহা তাদের থেকে দূর হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দূর হয়ে গেলো? দূর যদিও হয়ে যায়নি। কিন্তু জয় তাদের হয়ে গেলো। সেটা হলো বৃহৎ শক্তিগুলোর ধূর্ততা ও ইহুদী লবির পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতে। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে হঠাৎ করে ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলে বসলো হলোকাস্ট সংঘটিত হয়ে গেছে। ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করেছে হিটলার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্টালিন, যিনি নিজে একজন ইহুদী ছিলেন, ঘোষণা দিলেন নাৎসীরা বিভিন্ন শ্রমশিবিরে ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করেছে। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তোলার মোক্ষম একটি হাতিয়ার হিসেবে এটাকে লুফে নিলো মিত্রজোট। ফ্রান্স বলতে শুরু করলো। আমেরিকা বলতে শুরু করলো। বৃটেন বলতে শুরু করলো। ব্যাপারটা চাউর হয়ে গেলো গোটা বিশ্বে। তারপর বিশ্বযুদ্ধ এক সময় শেষ হবে। হলোকাস্টের জন্য জার্মানিকে দায়ী করে ইহুদীদের জন্য ৬ হাজার ৮শ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যার ওপর ভর করে ফিলিস্তিনী ভূখন্ডে ইহুদীরা রাষ্ট্র গঠন করবে। হলোকাস্ট রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ থেকে নিস্ক্রান্তি পেতে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইহুদী রাষ্ট্রের অভিভাবক হয়ে যাবে। এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই যুদ্ধপরবর্তী কয়েক দশকে ইহুদীদেরকে ৩ লাখ কোটি ডলার অর্থ সাহায্য প্রদান করবে। হলোকাস্ট হয়ে উঠবে বিশ্বরাজনীতির বাক বদলে প্রধান প্রভাবক। এবং এর ফলে বিশ্ব পরিস্থিতিতে কর্তৃত্বের লাগামটা ধীরে ধীরে জায়নবাদী রাখাল ও তাকে ছায়া দানকারীদের হাতে চলে যাবে। কেউ যদি এই ঘটনাকে সন্দেহ করে, তাহলে তাকে হিটলারের দালাল আখ্যায়িত করা হবে। সন্দেহকারী কারো কারো ওপর ইহুদী জঙ্গিবাদীরা হামলা করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে সন্দেহ পোষণের কারণে হার্ভার্ড ভার্সিটিতে সামনাসামনি মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা হবে। অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের মাথার উপর ঝুলতে থাকবে অপবাদ, একঘরে হবার ভীতি এমনকি মৃত্যুআশংকার খড়গ। কিন্তু সত্যি সত্যিই কি হলোকাস্ট ঘটেছিল? ৬০ লাখ ইহুদী নিহত হয়েছিল? হলোকাস্টের প্রবক্তারা শুধু শুধু ইহুদীদের মৃত্যুর কথা বলেই ক্ষান্ত নন, বরং তারা বলেন যে, জার্মানিরা ইহুদীদের হত্যা করে মৃতদেহ দিয়ে স্যুপ তৈরি করেছিল। পোল্যান্ডের অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদীকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়েছিল। বুচেনওয়াল্ড, বারজেন বেলসেন, মাউথাউসেন, ডাকাউ এবং জার্মানির মূল ভূখন্ডের অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিল ২০ লক্ষ ইহুদী। ব্যাপারটা খুবই সাংঘাতিক। এটা যদি আংশিকও সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই মর্মান্তিক। কিন্তু ইহুদীদের দেহ দিয়ে স্যুপ তৈরির বিষয়টিকে ইহুদী ঐতিহাসিকরাই মিথ্যা ও গুজব সাব্যস্ত করেছেন। আর যে অসউইচে ৪০ লক্ষ ইহুদী হত্যার কথা জোর দিয়ে বলা হয়, এ সম্পর্কে অসউইচ বারকেনিউ জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর ও রাষ্ট্রীয় মুহাফিজখানার পরিচালক ড. ফ্রান্সিসজেক পাইপারের মন্তব্য হলো- ‘এটা একটা ডাহা প্রতারণা।' ২০০৫ সালের ২১ জানুয়ারি ভিডিওতে ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর হাজার হাজার লোককে অসউইচ শ্রমশিবিরে ‘ক্রেমাওয়াল' নামে নরহত্যার যে গ্যাস চেম্বার দেখানো হয়, সেটি নকল এবং জোসেফ স্টালিনের সরাসরি নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।' ইহুদী সাংবাদিক ডেভিড কোল মি. পাইপারের এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তিনি জন্মের পর থেকে শুনে আসছিলেন ৪০ লাখ ইহুদী হত্যার কথা এরপরে একটি সরকারি রিপোর্টে পড়লেন ১১ লাখ ইহুদী হত্যার কথা। এবং লিউচটার রিপোর্টে দেখলেন যে গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনী পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আসলে যুদ্ধকালে অসউইচ নিয়ে একটি রহস্যজনক আচরণ করা হয়েছিল। সেই রহস্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠে অসউইচে মিত্রবাহিনী তথা রুশ-মার্কিন অক্ষের কোনো হামলা না করার মধ্য দিয়ে। সেখানকার শ্রমশিবিরে বন্দি ছিলো ইহুদীসহ মিত্রবাহিনীর বহু সৈন্য। উচিত ছিলো তাদেরকে যে কোন উপায়ে মুক্ত করা। অসউইচে ছিলো হিটলার বাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জাম উৎপাদনের কারখানা। মিত্রবাহিনীর উচিত ছিলো হামলা করে তা ধ্বংস করা। অসউইচে ছিলো নাৎসী বাহিনীর ৪০টি বৃহৎ ও অত্যাধুনিক শিল্পকারখানা। নাৎসীদের মেরুদন্ড ভেঙে দিতে মিত্রবাহিনীর জন্যে যুদ্ধের স্বাভাবিক কৌশল অনুযায়ী উচিত ছিল সেখানে হামলা করা। অসউইচ শ্রমশিবিরের আশপাশে ছিলো উন্নতমানের সিনথেটিক রাবার ও ওষুধ নির্মাণের কারখানা। সাধারণ অভ্যাস অনুযায়ী মিত্রবাহিনী পারতো সেখানে হামলা করতে। অসউইচে ছিলো নাৎসী বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ও বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র। মিত্রবাহিনীর সেখানে তো হামলা করার কথা। কিন্তু দেখা গেলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরো সময়ে মিত্রবাহিনী সেখানে ১টি বারও বোমা হামলা করলো না। বৃটিশ যুদ্ধবিমান একবার সেখানে কয়েকটা বোমা ফেলেছিল। এর ফলে তারা আমেরিকা-রাশিয়া তথা মিত্রবর্গের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলো। এটাকে একটা দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করলো। অথচ জার্মানির প্রতিটি শহর ও লোকালয়ে শত শত মার্কিন ও বৃটিশ যুদ্ধবিমান বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করেছে। বেসামরিক লোকালয়ে শত শত টন বোমা নিক্ষেপ করেছে। একটি ছোট্ট শহরও বাদ পড়েনি, অসউইচের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে জঙ্গিবিমানগুলো সেই সব গুরুত্বহীন জায়গাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলতো। অসউইচকে কেন অক্ষত রাখা হলো? সে কী বিশেষ কোনো সুফল প্রসব করবে বলে আগ থেকেই কথা ছিলো? কথা থাক বা নাই থাক, অসউইচে গ্যাস চেম্বারের নাম করে ঠিকই বের করে আনা হলো একটি সুফল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার কয়েক দিন পূর্বে ১৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস কোনো সূত্র বা উৎসের উল্লেখ ছাড়াই শিরোনাম ছাপালো যে অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর আর যান কোথা? যুদ্ধশেষেই বিজয়ী মিত্রশক্তি নুরেমবার্গ আদালতে তুফান শুরু করলো যে অসউইচে ৪০ লাখ ইহুদী হত্যার বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। সোভিয়েত সরকারও এ সময়ে একটা রিপোর্ট ছাপালো যে অসউইচে ইহুদী গণহত্যা হয়েছে। এবং নিহতের সংখ্যা ৪০ লক্ষই। এরপর অনেকের কাছে এটা বেদবাক্য হয়ে গেলো। সর্বত্র ধ্বনিত হতে লাগলো ৪০ লাখ! ৬০ লাখ! (চলবে)
অনুবাদ : মুসা আল হাফিজ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯