পাগল গাড়ি !
নুপুরের দেয়া এই নাম/ ডেথ রেসের অনুপ্রেরনায় অনুপ্রানিত হয়ে এরা গাড়িকে ছোটায়/রাস্তায় এদের হরহামেমাই দেখা যায /উত্তরা . গুলশান , বারিধারা , লালমাটিযা আর ধানমন্ডিতে এদের দৌড়ঝাঁপ/গাড়ি ভর্তি থাকে টিনএজাররা/এরা কখনও নিজেরাই প্রানপনে চিৎকার করে গলা ফাটায় আবার কখনও এদের পাগলা গাড়ি জোরে জোরে চেচিয়ে গান ধরে/
এই গাড়িগুলোর বিকট আওয়াজ নুপুরের বুকে ভয়ের কাঁপন ধরিয়ে দেয়/ এদের আওয়াজ কানে আসতেই নুপুর চিৎকার করতে থাকে ,
এই তাড়াতাড়ি সাইড দাও….এই ভাই পাশে সরো ..পাশে সরো…
ছোটবেলায় মেঘ একটা গাড়ি গেইম খেলতো/ মেঘের সেই গেইম টা নুপুর একদম পছন্দ করতো না/কারন ওই গেইম ছিলো নিয়মকে না মানার প্রথম এবং সর্বশেষ্ঠ হাতেখড়ি/বড়ই বিপদজনক ভাবে ড্রাইভার গাড়ি চালায়, আর সেই ড্রাইভার হলো মেঘ/
সেই গেইমের মত বিকট শব্দে পাগল গাড়ির ছুটে আসা দেখে নুপুরের মনে হয় সময় থেমে গেছে, কিছুতেই পিছনের গাড়িটা আর ব্রেক করতে পারবে না,সব উড়িয়ে গুড়িয়ে নিয়ে যাবে/
শেষ মুহুর্তে রাস্তায় বিশ্রী আওয়াজ তুলে যখন ব্রেক করে তখন চেপে রাখা শ্বাস ছাড়ে নুপুর/
কিন্তু দুর্ঘটনা যে ঘটে না তা না / দুই/তিন মাস আগে মেঘের স্কুলের দারোয়ান ভাই তমিজ মিয়ার পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিলো এই পাগল গাড়ি/
তাও রাস্তা ছেড়ে গাড়ি উঠে পড়েছিলো ফুটপাতে / দারোয়ান ভাই এখনও নাকি হাসপাতালে/
কয়েকদিন আগে পেপারে দেখেছে , সিগনালে ট্রাফিক পুলিশকে চাপা দিয়েছে এই পাগল গাড়ি/নুপুরের কাছে পাগল গাড়ি মানে চলন্ত যম/
নুপুর বোঝে না ভালোবেসে বাবা মা কেন যে এই পাগলগাড়ি বাচ্চাদের কাছে চালতে চেড়ে দেয়? আসলে গাড়ি তো প্রথমে পাগল থাকে না , নানা কারিগরী করে পাগল বানানো হয় /তারপর পাগলরা নিজেদের পাগলামী করে/ তারমানে যারা চালায় তারা পাগল/
জায়গামত রিক্সা এসে থেমে যায়/নুপুরের চিন্তার জালও ছিড়ে যায়/কিছু একটা শুরু হয়/বুকের ভেতর হঠাৎই ঢিব্ ঢিব্ শব্দটা বেড়ে যায়/ কেন জানে না নুপুর , এই গলির মাথায় আসার সাথে সাথে এরকম হয় নুপুরের/ মনে হয় পা দুটো অসশ্ভব ভারী হয়ে গেছে –হাঁটতেই পারবে না আর / কিন্তু কি এক সম্মোহনে সে আনমনে হেঁটে চলে/
মেঘ আছে এখানে/কোচিং পড়ছে/তো যাওয়া তো লাগবেই/
অন্য জায়গায়ও তো মেঘ কোচিং পড়ে , সেখানে তো এরকম কোনো কিছু হয না , এখানেই কেন এমন লাগে?এখানেই যেন সময় আর ফুরোয় না, নিজেরে কেমন কেমন লাগে/ নুপুর মনে মনে খুব লজ্জা পেতে থাকে/মনে হয় ওর মনের অবস্থা সবাই বুঝে ফেলছে/
হয়তো অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সবাই/ ভাবছে, ‘ আন্টি !..... ওমা তাই কি করে হয়?”
গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বামপাশের নারিকেল আর তালগাছের দিকে তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে নুপুর/ হঠাৎই সামনের থেমে থাকা গাড়িটা বাধা সৃষ্টি করলে নুপুর মাথা নিচু করে মেঘের কোচিং রুমের বারান্দায় উঠে আসে/
বসে থাকা বেশ ক’জন মহিলা এক সংগে নুপুরের দিকে তাকায়/লজ্জ্বায় কুকড়ে যায় নুপুর আরও/ ওরাও বোধহয় ওর সমস্যাটা ধরে ফেলেছে , বুঝে ফেলছে সবকিছু/
ইসরে কোথাও বসার জায়গা খালি নেই/ বসতে হলে কোচিং রুমের একদম দরজা ঘেষে বসতে হবে / আর তারপর! কেন যে এরকম হয়? সব নুপুরের সাথেই কেন? শুধু নুপুরের সাথেই?
একটুক্ষন দাড়িয়ে থেকে আর ভালো লাগে না দাড়িয়ে থাকতে নুপুরের/দরজা ঘেষেই বসে পড়ে নুপুর/বেশী তো আর বাকী নেই / বিশ পচিঁশ মিনিট বাকী/তারপরে এখানে মেঘের ক্লাশ শেষ/
বাদ সব কিছু/ তার চেয়ে বরং এ সময়টুকু ভাবীদের নানা গসিপ শোনা যেতে পারে , আবার কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গানও শোনা যায়/
আজকে পরচর্চা বা পরনিন্দা শুনবে বলেই নুপুর ঠিক করলো /
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৫