মনে হচ্ছিলো আজও এই রোদের মধ্যে বুঝি হেঁটেই যেতে হবে/আগে হাঁটতে অনেক ভালো লাগতো/ছোট্ট মেঘের ব্যাগটা কাধেঁ নিয়ে অনেক দুর পর্যন্ত হাঁটতে পারতো/একটুও ক্লান্তি লাগতো না নুপুরের/রোদে মুখ টকটকে লাল হয়ে উঠতো/তবুও মজা লাগতো-মেঘও মজা পেত/
রাস্তায় দাড়িয়ে ঝালমুড়ি , আইসক্রিম খাওয়া চলতো/কখনও বা কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকানে ঢুকে যেত/মেঘ কিনতো নানা ডিজাইনের রাবার ,কার্টার,রং বেরঙের পেনছিল . খেলনা গাড়ি আর পোকেমন র্কাড/
নুপুর মেঘের ছোটো খাটো বায়না গুলো খুশী মনে পুরন করে নিজেই মনে মনে ভীষন খুশি হয়ে উঠতো/ সময় বয়ে যেত এলোমেলো ভাবে/নুপুর জানতে চাইতো না কতটা সময় কেটে গেল এলোমেলো ভাবে/ তাই ঘড়ি দেখতো না সে/
বাসায় জবাবদেহী আর কি ! সেই তো একই/দেরীর কারন রাস্তায় জ্যাম, রিক্সা পাওয়া যাচ্ছিল না ইত্যাদি / এসব তো আর মিথ্যা না, সত্যি সত্যি / এসব বলে প্রতিদিনই পার পেয়ে যেত নুপুর/আর ওর এই যে দেরী করে বাসায় ফেরা এসব নিয়ে কারো তেমন মাথা ব্যথাও যে নেই তা জানে নুপুর/ওর জন্য যে কেউ চিন্তায় অস্থির থাকবে না তাও জানে/ তাই কিছুটা সময় নিজেকে দিত/মেঘের ছোট্ট হাত ধরে বেড়ানোটা তার দারুন লাগতো/মনে হত না আর শেষ হোক এই পুড়ে যাওযা সময়টুকু/নুপুর মনে মনে চাইতো মেঘ আরো বায়না ধরুক, এটা সেটা আবদার করুক/
যখন অনেক বেশী দুপুর হতো তখন ঘেমে নেয়ে লাল টুকটুকে মেঘ আর নুপুর ১৭/৫ এর তিন তলার কলিংবেলে হাত রাখতো/
নুপুরের ঐ বাসাটাকে কেন যেন মধ্যযুগের নির্যাতনের সেল মনে হয়/ সকাল হতে না হতেই এক বজ্রকন্ঠের আওয়াজধারিনীর গলার আওয়াজের শব্দে ভাড়াটিয়া আর আশেপাশের ঘুমন্ত অন্যসব বাড়ির লোকজনের ঘুম ভাংগে/ নুপুর মনে মনে ওনাকে আনওয়ান্টেড আ্যার্লাম ডাকে/
’সব মুনাফিক, কাফের ,নামাজ নাই কিছু নাই শুধু শুইয়া থাকে/”
এই সবরা হচ্ছে নুপুর আর সুরমা/ মেজ বউ আর ছোট বউয়ের জন্য সবচেয়ে বড় এবং ভালো যে জাহান্নাম তা নাকি দাউ দাউ করে জ্বলছে/
প্রতিদিন শ্বাশুড়ির সাথে একই কথা বিড়বিড় করে বলতে বলতে বিছানা ছাড়ে নুপুর/নামাজের জায়নামাজে দাড়িয়ে মেঘের জন্য দোয়া করে নুপুর/
তারপর শুরু হয় নুপুরের সারাদিনের নাচ/
ঝমঝম শব্দে থালাবাসনের সাথে চলে নুপুরের মুদ্রা শেখা/
শ্বশুর শ্বাশুড়ির সকালের নাস্তা শেষ হয় সকাল আটটার মধ্যে/তখনও সুরমা আর নুপুরের শোবার ঘরের দরজা ভেজানো থাকে/স্বপন আর কবির তখনও ঘুমায় কোন এক বেহেস্তের সুখ স্বপ্নে/
ছোট্ট মেঘ যখন পটিতে বসে বসে হাগু দিতে দিতে কার্টুন দেখে তখনও ঘুম ভাংগে না কবিরের/ঘুমের বেলায় কবির অনেক সচেতন/হাজার আওয়াজেও তার সকালের ঘুম নষ্ট হয় না/
সব কাজ গুছিয়ে মেঘের ছোট্ট হাত ধরে নুপুর যখন ঘর থেকে বের হত শ্বাশুড়ি আম্মা পেছন থেকে বলে উঠতেন, ‘আইজকা যেন আবার জামে পইড়ো না- কাম কাইজ সব পইড়া আছে, তোমার শ্বশুরকে একটার মধ্যে খাওন দেয়া লাগবো/’
নুপুর মাথা নাড়ে কি নাড়ে না বোঝা না গেলেও শ্বাশুড়ি আম্মা আর কিছু বলেন না/ নুপুরও আর কোনো কথা না বলে পা বাড়ায/
মেঘ কোলে উঠার বায়না ধরলে –ওকে কোলে নিয়ে নেমে যায় নুপুর/খোলা আর তাজা সকালের বাতাস নুপুরের মনটাকে হঠাৎই সুন্দর করে দেয়/
সকালের রাস্তায় রিক্সা না পেয়ে মন খারাপ হয় না নুপুরের/বরং মনে মনে খুশী হয়/দেরী হয়ে গেলে বেশী বেশী মিথ্যা কথা বলা লাগবে না/এমনিতেই জন্মগত ভাবে জাহান্নামের বাসিন্দা , তারপর যদি প্রতিদিন মিথ্যা কথা বলতে হয় তা হলে তো সর্বনাশ/শ্বাশুড়িআম্মার কথা মত জাহান্নামেও জায়গা হবে না/
প্রচন্ড শব্দে গাড়ির ছুটে আসার শব্দে আতঁকে উঠে নুপুর/
একটা বিকট আওয়াজ আশেপাশের সব আওয়াজের গলা চেপে ধরলো/
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৯