রাত এখন কয়টা কে জানে ? থানায় এসেছি অনেকক্ষন /সন্ধা পেরিয়ে এখন যুবক রাত / আর যাই হোক একটা জিনিস ভেবে ভালো লাগছে যে ,কোনো এক উছিলায় থানা দেখা হইলো/
যে রুমটায় আমাকে রাখা হইছে তা বেশী বড় না / তবে একদম মুরগীর খোয়ার যাকে বলে তার চেয়ে রুমটা একটু বড়/ আরও কয়েকজন আছে এখানে আরো আগে থেকেই/ডানদিকের কোনাটায় এক বুড়া চাচা প্রচন্ড বেগে কাশতেছে/ সে তার আশে পাশে ছোট একটা পুকুর বানিয়ে অনবরত খকখক করেই যাচ্ছে/ এবার মনে হয় বড় বাথরুমও হয়ে যাবে/ এমনিতেই তীক্ষ্ন একটা ঝাঝাঁলো গন্ধ চারপাশে তীব্র থেকে তীব্রতরও হচ্ছে/ বড় জনের আকস্মিক আগমনে কি যে হবে কে জানে ! তবে সে সম্ভাবনা এখন প্রবল খেকে প্রবলতর হচ্ছে/ বুড়ো মানুষটা কুজো হয়ে মাঝে মাঝে লোহার গরাদের কাছে যাচ্ছে , ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলার চেষ্টা করছে-
বাবা গো আমারে পায়খানায় যাইবার দাও/ পরিস্কার অমু/নাপাক শরীরে নামাজ অয় না /
অফিসার তার কথা শুনছে বলে মনে হয় না/ সে অনবরত ফোনে কথা বলছে /কখনও সদ্য প্রেমে পড়ুয়াদের মত , কখনও অভিমানী প্রেমিকের মত / বুঝাই যায় স্ত্রীর সাথে না , বান্ধবী হবে/
আচ্ছা দেখাই যাক না , বান্ধবী না ষ্ত্রী ! কোনটা ঠিক !
এই যে শুনছেন স্যার, শুনছেন, এই চাচা আপনাকে কিছু বলছে /
বেশ জোরেই বললাম/ অফিসার চমকে তাকাল/ আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থেকেই ওপাশের জন কে বলল ,
রাগ করো না গো , একটু পরেই তোমাকে ফোন করছি /
ঠাস্ করে রিসিভার নামিয়ে রেখে গরাদের কাছে উঠে এল সে/
কি সমস্যা ?
সমস্যা আমার না, এই চাচার /
তাতে আপনার কি ?
আমি মনে মনে একটু জয়ের আনন্দ উপভোগ করলাম / আমার হাসি , আমার চেহারা সুরুত তাকে আপনি বলে সম্মোধন করতে বাধ্য করেছে এবং ভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে/
আমার আবার কি ? আমার কিছু না /সমস্যা একটা অন্যের প্রস্রাবে বেশীক্ষন দাড়িয়ে বা শুয়ে থাকা যায় না/ নিজে প্রস্রাব করে সারারাত বড় আরামে ঘুমিয়ে থাকা যায়/ স্যার আপনার বা ভাবীর কি এই রোগ আছে নাকি ?
আরো অপ্রস্তুত হয়ে গেল সে / আমি আরো উল্লাসে মেনে মনে নেচে উঠলাম/ ওনাকে আরেকটু নাড়া দেয়ার জন্য বললাম,
ওনাকে পায়খানায় না যেতে দিলে আপনার বান্ধবী একটু পর পায়খানার গন্ধ টেলিফোনে পাবে/
বলে নিজেই হো হো করে হেসে উঠলাম/ কনফিউজিং ! কনফিউজিং !
অফিসার চোখ সুরু করে একটু তাকিয়ে থেকে বলল ,
বেশী স্মার্ট ? অপেক্ষা করো , ডলা মাষ্টার আইলেই বুঝবা থানা কিতা জিনিস !
একজনকে ডেকে বলল বুড়া চাচাকে নিয়ে যাবার জন্য/
অফিসার যেয়ে নিজের চেয়ারে বসে বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো/
ডলা মাষ্টার কি পদ্ধতিতে আমাকে ডলা দিবে মনে হয় তারই বায়স্কোপ দেখছে মনে মনে/হঠাৎ হেসে ফেললাম/ আমার হাসি দেখে তার চোয়াল অনেকখানি ঝুলে পড়লো/ কিন্ত বড়ই বিরক্ত এবং ছানাবড়া র্ধৈয্শীল চোখে তাকিয়ে রইলেন/
সে এখন ও কোনো গালিগালাজ করেনি/ আমার চেহারার জন্য যে আমার সাথেই করেনি তা না , কারো সাথেই করেনি/
তবে ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না/ কারন আমার জানা মতে পুলিশ ভাইয়েরা প্রথমে গালি গালাজের উপর প্রশিক্ষন নেন, তারপর চড় থাপ্পর , লাথ্থি গুতা এসবের উপর প্রশিক্ষন নেন/ এ ছাড়াও আরো কত বিষয়ের উপর বিশেষ ডিগ্রী নেন তা যদি বলা শুরু করি তো আমার হাসি মোহময় হাসি আর কোনো কাজে আসবে না/
পুলিশ অফিসার তখনও আমাকে দেখছে , তার চাহনী আমাকে ডলা মাষ্টারের ব্যাপারটা সিরিয়াসলি ভাবনায় ফেলে দিলো/
আমি নিজের মত করে চারপাশটাকে বদলাতে চাইলাম/
ট্রান্সফার করলাম নিজের চিন্তাকে /
কেমন আছে মা?
জানি হাসপাতালে সে / জ্ঞান কি ফিরেছে ? মায়ের এই অচেতন থাকা আর হঠাৎ জ্ঞান ফেরাটা একদম অন্য রকম একটা সময় / মা তখন আজব আজব কান্ড করে/ জ্ঞান ফিরেই সে অন্য অলকা দেবী হয়ে যায়/ কখনও সে তার ছোট বেলায় ফিরে যায় , কখনও সুর করে আগডুম বাগডুম পড়ে, কখনও মৃত মাকে খোজে আবার বিচিত্র সব খাবারের বায়না ধরে ঘ্যান ঘ্যান করে কান্না করে/ একবার তো র্নাসকে ডেকে বলল কাঁঠালের বিঁচির সাথে চ্যাপা শুটকির ভর্তা করে দিতে /
মোর্শেদা বেশী করে রসুন পেয়াজ আর শুকনা মরিচ দিয়া বানাবি , কাজির ভাত যেন গরমই থাকে /
নতুন নাম আর দায়িত্ব পাওয়া র্নাস কে ভ্যবচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও রাগ করে মা/
যা ... খাম্মার মত দাড়াইয়া আছস কেন? জ্ঞান ফিরে মা কখনও নিজেকে মতির মা, কখনও রাহেলা বুয়া, কখনও পিঠা ভাজুনি সদরুন বিবি ভাবে নিজেকে/ অভির কথা তার কখনই মনে পড়ে না /
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৪