বড্ড সাদা এই রুমটায়/ সবই সাদা / এত সাদা মাঝে মাঝে বড়ই অসহ্য লাগে/
মাঝে মাঝে মনে হয় বেচেঁ নেই সে /যখন হাত পা একটু নড়াচড়া করে তখন মনে হয় বেচেঁ আছে সে/ এভাবেই সে পড়ে আছে গত কয়েকদিন যাবত /
ডাক্তারদের মতে তার অবস্থা যখন তখন/
কিন্তু শংকর বোস জানেন কথাটা ঠিক না /
ছেলের গায়ের গন্ধ পেলেই উঠে বসবে অলকা/
আর এটাও জানেন এই মুহুর্তে কোথায় আছে অভি/ অভির প্রতি মুহুর্তের নড়াচড়া সম্পর্কে জানেন তিনি/ কিন্তু জানাচ্ছেন না কিছুই অলকাকে /
প্রচন্ড এক জেদী পুরুষ তিনি/ কিছুতেই তিনি অভির এ ব্যাপারটাকে মেনে নিবেন না/ সমস্যা হয়েছে অভিও হয়েছে তার মত একরোখা আর জেদি/ কিন্তু তিনি যে অভির বাবা এ কথা ভুলে কি করে ?অলকার বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসার কারনেই অভির এই অধঃপতন /
যতটুকু সম্ভব সব প্রিয় আর ভালোলাগা জিনিসগুলো তিনি অভিকে পাইয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন /কিন্তু এ অসম্ভব চাওয়া চাওয়ার সাহস সে পেল কোথায় ? ভালোবাসা মানুষকে এতখানি বোধহীন আর অন্ধ করতে পারে তা তিনি ভাবতেও পারেন নি/
ব্যাপারটা অলকা বেশ হাসি খুশি আর আনন্দের সাথেই মেনে নিয়েছে , যেন ছোট বেলার পুতুল পুতুল খেলা /
অথচ মন্ত্রীর সেই গা জ্বালানো হাসি আর অপমান এখনও দগদগ করছে /নতুন করে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে সব কিছু/
বিয়াল্লিশ বছর !
এখনও প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখেন তিনি/
সারা দেশের আন্দোলনের জোয়ার তাদের ছোট্ট শহরটাকে সবে মাত্র নাড়া দিতে শুরু করেছে/
সেই রাতগুলিতে শংকর প্রায মাঝরাতে বাবা -মা, জেঠা-জেঠি,দিদা-দাদুর ফিসফিস কথা বলার আওয়াজ পেতেন /রিদিমা দিদির তখন বিয়ের কথা বার্তা চলছিলো/ দাদু বারবার তাগিদ দিতেন বিয়েটা দিয়ে দেয়ার জন্য/দাদু বলতেন, যুদ্ধের বাজারে তাড়াতাড়ি সোমত্ত মেয়ের বিয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ/
তাই হয়তো বিয়ের তোড়জোড় চলছে, এ সব ভাবতে ভাবতে আবার চৌদ্দ বছরের শংকর আবার ঘুমিয়ে পড়তো/
একরাতে সারা বাড়িতে হইচই পড়ে গেল/
ডাকাত !
সবাইকে বেধে ফেললো এক নিমিষে/ ৫০/৬০ জনের একটা দল মানুষ সারারাত তছনছ করে ফেললো সমস্ত বাড়িঘর / সবারই মুখ ঢাকা চাঁদরে/ কিন্তু এদের অনেকেরই গলার আওয়াজ সেদিন চিনেছিলো শংকর/রফিক ভাই, এনামুল চাচা আরও অনেকের/অবাক ব্যথায় নির্বাক হয়ে গিয়েছিলো শংকর/
ভোর হওয়ার আগেই ডাকাত দল চলে গিয়েছিলো/ পুব আকাশের রোদ যখন সবুজ মাঠে একটু একটু করে আলো ছড়াচ্ছিলো তারও অনেক পরে কাজের ঝি আর পুব পাড়ার রাখাল এসে ওদের বাধন মুক্ত করেছিলো/
সারা পাড়ায় সেদিন কবরের নিস্তব্ধতা ছিলো/ কেউ এসে ব্যপার কি এটাও জানতে চায়নি/
দুপুরের অনেক পরে রিদিমা দিদিকে বাড়ির পিছনে শ্যাওলা আর কুচুরিপানায় ভরা পুকুর পাড়ে পাওয়া গিয়েছিলো/
গায়ে শেষ দুপুরের রোদ মেখে শুয়ে ছিলো / বিশাল মেঘহীন আকাশ ছায়া দিচ্ছিলো/ সেই রোদ রাঙ্গা শাড়িতে কেমন যেন অন্যরকম লাগছিলো দিদিকে /শংকর আর সহ্য করতে পারছিলো না – ছুটে যেয়ে নিজের শরীর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলো রিদিমাকে /
দাদাও নির্বাক হয়ে গেলেন নিমিষে/ আর কেন যেন চোখই খুললেন না/
দুই চিতার আগুন নেবার আগেই বাবা সবাইকে নিয়ে সেই ছোট্ট শহরটি ছাড়লেন /
বিভীষিকা হয়ে রইলো সেই ছোট্ট শহর আর ছবির মত সেই বিশাল বাড়িটি/
তারপর অনেক সংগ্রাম আর কষ্টের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে শংকর বোস /
অভির কারনে তার এত দিনের গড়া শক্ত অবস্থান ভেঙ্গে যাওয়ার পথে/তার একটু অঙ্গুলি হেলানে নিমিষেই বড় বড় কাজ হয়/অথচ পুটিঁ মাছ মন্ত্রী ব্যাটা তাকে ধমক দিয়ে কথা বলে, চোখ রাঙ্গায় ??
হাফসাফ লাগে বন্ধ কেবিনে/ ছোট্ট ব্যলকনিতে এসে দাড়ান তিনি/ এখনকার হাসপাতাল
গুলো পাচঁতারা হোটেলের মত/ মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভাবতে ইচ্ছে করে না /
ব্যলকনির নাম না জানা ফুলের গন্ধ কিছুক্ষনের জন্য শকংর বোসকে ভুলিয়ে দিল অতীত/
সেলফোন বেজে উঠলো/
অভির কোনো নতুন খবর বোধহয় /
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৮