গাড়ির হর্নের শব্দে নিলি চমকে উঠে/ গ্রিল ধরে আরেকটু ঝুঁকে নীচে দ্যাখে/
বাবার গাড়ি/
সারা পৃথিবীতে নিলির ভালো লাগা মানুষের সংখ্যা মাত্র কয়েকজন/ ক্যালকুলেটর লাগে না , হাতে গুনেই বলে দেয়া যায় / তাও তিন বা চার দাগের বেশী হবে না / আর প্রথম যে দাগ সেখানে আছেন মা/এই ব্যাপারটা মাও জানে না/
কিছু কিছু ভালোবাসার কথা বলতে হয় না / জানাতে হয় না/ সব সময় অবহেলা করার মত ভাব দেখাতে হয় / তাতে করে অনেক অতিরিক্ত পেরেশানি থেকে রেহাই পাওয়া যায় /আর মা তো সারাক্ষনই নিলির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে / নিলি একটা হাচিঁ দিল তো অমনি রোজা রাখতে শুরু করবে/ রাত জেগে নামাজে পর নামাজ করবে/ আর তারপরই ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ে/ হাসপাতাল -বাসা দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়/
ভালোবাসার মানুষদের কষ্ট সহ্য করা যায় না/ আর তাই ভালোবাসার মানুষের এত কাছেও যেতে হয় না / নিজেকে আটকে রাখতে হয় বন্ধ কামরায়/ নিলি তাই করে /
নিলি – এই নিলি দরজা খোল , কি করছো ?
বাবা!
এই যে অস্থির মানুষটা এও সেই দাগের মধ্যে বসবাস করে / তবে এখন যে কত নাম্বারে তা নিয়ে নিলি কনফিউজড/ গুগুল যেমন অনেক দিন নিজেকে আপডেট করছে না .. নিলিও করছে না /ভালোবাসার মাপামাপি বড্ড কনফিউজিং কাজ/
তবে এক সময় বাবাকে দারুন ভালোবাসতো নিলি/
এখন কি বাসে না ?
নাহ্ / বাসে তো /
কিছু কিছু ভালোবাসা নিরবে থাকে/
বাবা তো বাবাই / সে তার কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক/
ভেতরে ঢুকেই উনি প্রথমে বারান্দায় গেলেন/ লাইট জ্বালালেন /আতিঁপাতিঁ করে এখানে সেখানে খুজলেন /তারপর রুমে ফিরে এলেন/
নিলি চুপচাপ বাবার কাজকর্ম দেখছিলো / একগাদা কাগজ তার হাতে/ নিলির দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
সই করো/
কি এ গুলো?
পড়ে দেখো /
না আমার এত কিছু পড়ার সময় নাই/যা বলার দয়া করে তুমিই বল/
বাইরে যাচ্ছো তুমি / পড়তে/ সব কাজ শেষ /শুধু সইটা বাকী/ আর আগামী পনের দিনের মধ্যে রাসেলের সাথে বিয়েটাও সেরে ফেলবো /
বাবা ... আমি কোথাও যাচ্ছিনে/ আর এতকিছু ডিসিশন নিয়েছো আমি কিছু জানলাম না ?
থাপড়াঁইয়া তোর দাতঁ ফালাইয়া দিমু/বেয়াদব মাইয়া কোথাকার /
নিলির হাসি পায় /প্রানপনে দম বন্ধ করে হাসি চেপে রাখে/
মনে মনে হাসে / হি হি হি /
বাবা যখন রেগে যায় তখন তার পজিশন , তার ষ্টাটাস সব ভুলে যায়/
এমনিতেও বাংলাদেশে খুব কম মন্ত্রী আছে যারা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে/নিলির বাবা তেমন না হলেও যখন রেগে যায় তখন এক কাতারে এসে দাড়িয়ে যায়/
বৃহত্তর বরিশালের সাধারন এক কৃষক পরিবারের ছেলে ছিলো নিলির বাবা/দাদু –দিদা যখন বেচেঁ ছিলেন তখন নিলিরা প্রতি ঈদেই বরিশালে যেত/নদীর শব্দ. পাখির ওড়াওড়ি. বিস্তীর্ন মাঠের গম্ভীরতা আর রহস্যময় বাশঁঝাড় ভালো লাগতো নিলির/ নিলি অবাক হয়ে নদী দেখতো /রাত কেটে যেত লন্চের শব্দ শুনে শুনে/বাবার কোল ঘেষে শুয়ে থাকতো সারা রাত /একবার রাতের বেলা ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাতও খেয়েছিলো/তাজা ইলিশ / বাবা বলেছিলো/আর ভোরের নদী কি যে শান্ত দেখাতো যে নিলির মন খারাপ হতো /
বরিশালের লোকদের কথা শুনে নিলি হেসেই খুন হতো /বাবাও তখন যেন মন খুলে কথা বলতো /লুংগিটাকে গুটিয়ে বাবা যখন ঝাপটাঁঝাঁপটি করে মাছ ধরতো নিলির তখন আনন্দে চোখে পানি আসতো/ কারন নিলি সাঁতার জানে না যে/একটা মাছ জালে উঠলেই হাত তালি দিয়ে লাফাতে শুরু করতো/ জলের মাছ মাটিতে পড়ে আঁকুপাকু করতো/ তখন মজা লাগলেও পড়ে মন খারাপ হতো নিলির/ জলের গভীরে কি স্বাধীন ছিলো ওরা ! না জানি ওই মাছ গুলো কার বন্ধু ছিলো/ আচ্ছা ওই মাছটার কি মা বাবা আছে ? কিংবা কোনো ছোট ভাই?? আরো এলেবেলে ভাবনা / বেশি মন খারাপ হলে মা যেন কেমন করে টের পেত/ কাছে টেনে নিতেন/আদর করতো অনেকটা সময় ধরে/ এতে আরো মন খারাপ হয়ে যেত/ কিছু কিছু আদর একদম মনের সবচেয়ে গোপন জায়গাটা ছুঁয়ে দেয়/
এ্যাই চুপ কইরা আছস ক্যান ? সই কর/
বাবা তুমি জানো আমি একবার যা না বলি তা আর হ্যা হয় না / সুতরাং তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও/
যামু ক্যান ? তুই কইলেই আমি যামু? বাপ কে ? তুই না আমি ?
তুমিই / কিন্তু এখন তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না –তাই দয়া করে যাও /
মন্ত্রীমহোদয় কটমট করে নিলির দিকে তাকিয়ে রইলেন/ কার্টুন চরিত্র হলে নিলি এতক্ষনে পুড়েই যেত/ ভাগ্য ভালো তা না/
নিলির তুচ্ছ চাহনী দেখে মন্ত্রী সাহেব দুপদাপ করে বের হয়ে গেলেন/কাগজগুলো পড়ে রইলো বিছানার উপর/
হঠাৎ রাগ ধরলো নিলির/ প্রচন্ড আক্রোশে কাগজগুলো ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিতে লাগলো অন্ধকারে /
আমি কোথাও যাবো না / কোথাও না/
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮