ইস্ নামের কি বাহার !! ক্যার্লিফোনিয়া ফ্রায়েড চিকেন !! ক্যার্লিফোনিয়া ভাজা মুরগী / ক্যার্লিফোনিয়া কেমনে ভাজা মুরগী হইলো ? যত্তসব !
কিছুক্ষন হল নিলি এখানে এসেছে / রামছাগল টা নাকি অনেকক্ষন আগেই এখানে এসে বসে আছে /নিলি আসার সাথেই বকর বকর শুরু হয়েছে / নিলি রাম ছাগলটার কথা গুলো মিউট করে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে / নিলির মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি বড় কোনো রাম ছাগল প্রচন্ড বেগে জাবর কেটে চলেছে/
সামনে আবছা ভাবে আবাহনী মাঠ দেখা যাচ্ছে / কি যেন ফুল ফুটে আছে ওই মাঠের পাশের বিশাল বিশাল গাছ গুলোর মাথায় / নিলি গাড়ি থেকে নেমে দেখেছিলো লাল ,হুলুদ ছোট ছোট ফুল গুলি / এখন এই আধো আধো অন্ধকারে বসে একেবারেই বোঝার উপায় নেই বাইরের প্রখর রোদে ফুলেরাও মজা পাচ্ছে /
এক গাদা খাবার টেবিলে রেখে গেল /
রাম ছাগলটা জাবরকাটা বন্ধ করে হা রে রে করে খাবারের উপর উপুর হয়ে পড়লো /
নিলিকে সে মনে হয় কিছুক্ষনের জন্য ভুলে গেল .... ভেবে মনে মনে স্বস্তি পায় নিলি/ নিলির একা থাকতে ভালো লাগে , নিলির একা ভাবতে ভালো লাগে /
কি ব্যাপার খাচ্ছো না কেন নিলি ?
আপনি খান প্লিজ / আমি খাবো না / মাথা ধরেছে আমার /
স্প্রীং এর মত চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠলো রাসেল / ধাক্কায় পিছনের চেয়ার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো / কোকের গ্লাস উল্টে গেল/ ইস্ এই আহম্মক টা কবে যে মানুষ হবে আল্লাহ জানে /
নিলি তোমার মাথা ব্যথা - তা আগে বলবা তো ! এতক্ষনে আমার ডাক্তার আংকেলের কাছে একটা আ্যপয়ন্টমেন্ট রাখা যেত / দেখি দেখি কোথায় ব্যথা ?
নিলি চট্ করে মাথা সরিয়ে নেয় /
অদৃশ্য স্পর্শ অনুভব করে ঘৃনায় গা রি রি করে উঠে নিলির/ মনে হল বমি পাবে এখুনি /ঘাড়ের পেছনে শীতল ঘাম বেয়ে পিঠে গড়িয়ে গেল/
নিলির এভাবে মাথা সরিয়ে নেয়াতে রাসেল একটুও অপমান বোধ করলো না /হাত গুটিয়ে নিয়ে নিজের খাবার শেষ করার কাজে লেগে গেল/
কয়টা বাজে এখন ! মনে হয় একটু একটু করে সামনের মাঠটা আরো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে /
নিলিও সেই অন্ধকারের মাঝে একটু একটু করে হারাতে শুরু করে /
বাড়ির নামটা ভারী সুন্দর / নীলাচল ! কিন্ত কি মজা এর রং সাদা / সবুজে ঢাকা পুরো সামনের অংশটা /বিকেলে লনে দাড়িয়ে মহিলা কমপ্লেক্সের সব কর্মকান্ড দেখা যায় /নিলির অলস বিকেলটা তখন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায় /
মাঝে মাঝে এমনও হয় যে সন্ধা যে কখন নামে বুঝতেই পারে না নিলি/
সেই বাড়িটার সন্ধা নামে অন্য ভাবে /সন্ধা নামার সাথে সাথে রাস্তায় জন্ডিসের মত আলো গুলো জ্বলে ওঠে / নিলি এই বাতিদের জ্বলে ওঠাকে বড় বিরক্তি নিয়ে দেখে / কি হয় না আলো থাকলে?
মাঝে মাঝে যখন ইলেকট্রিসিটি চলে যায় তখন মুহুর্তের মধ্যে মন ভালো হয়ে যায় নিলির/ইস্ আজকে যদি সব জেনারেটর নষ্ট হয়ে যেত ! সবার ফ্লাটের আই পি এস রা বিদ্রোহ করে বলতো , না জ্বলব না - তা হলে কি দারুন না হতো!
অন্ধকারের এক আলাদা মাদকতা / অন্ধকারেরেও আছে নিজের ভাষা, আছে অন্যরকম শব্দ / অন্ধকারে তারাদের দেখা যায় অনেক কাছে থেকে /দুর আকাশের ওই সব তারাদের তখন অনেক আপন মনে হয় / বিষন্ন হয়ে যায় তখন নিলির দুই চোখ/ ঝাঁপসা চোখে দেখে শহুরে জোনাকীর ওড়াওড়ি/ মনে আছে নিলির , ছোট বেলায় এই জোনাকীদের মনে হত আগুনমুখো ভূত !
এ্যাই নিলি এত কি ভাবতাছো ? খেলে তো না কিছুই , এত গুলো টাকার খাবার শুধু শুধু নষ্ট হলো !
নিলি চমকে উঠলো / ঘোর লাগা চোখে তাকালো / প্লেটে তখন আর কিছুই অবশিষ্ঠ নেই / মুরগীর হাড্ডিগুলোও নির্মম ভাবে ছিন্ন বিছিন্ন/ এর পরেও কি ভাবে খাবার নষ্ট হলো নিলি বুঝে না/
নিলি চল রাশেদ আমার বন্ধু দেখে আসি /
আমি যাবো ক্যান ? রাসেদ আপনার বন্ধু , আপনি দেখে আসেন গে /
খিক্ খিক্ করে হেসে উঠলো হাঁদারাম টা /
চোখ ট্যারা করে বলল, আরে মেয়ে এটা একটা সিনেমার নাম , জাফর ইকবাল স্যারের/পেপারে পড়েছি স্যার নিজেই নাকি এই ছবি দেখে কেঁদেছেন/ ভেবে দ্যাখো কি সাংঘাতিক ব্যাপার /চল আমরাও না হয় একটু কান্নাকাটি করে আসি গে /এ ব্যাপার টা আমার জন্য প্রথম/ কান্না ব্যাপারটা আমি ভুলেই গেছি /
চুপ শালা ! সারাক্ষন ভ্যারভ্যার করে/ ব্যাটা ন্যাকামি করে/কানতে জানে না !! প্রেমে ছ্যাকা খাইছোস ? পড় না শালা .. বুঝবি কান্দন কারে কয় !
নিলি এভাবেই নিজের মনের কথা গুলো মনে মনে বলে যায় / প্রায় সে এভাবে অনেক কিছু বলে / এতে করে তার মনের চাপও কমে যায় আবার যা সামনের মানুষকে বলা যাবে না বা বলা উচিত না , বলা হয়ে যায় তা তাকেও/ কি মজা না !!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯