আজ কয়েকদিন ধরেই পকেটে ঘুমের ঔষধ নিয়ে ঘুরছি / সময় এবং সুযোগ এলেই এগুলোকে গলঃধারন করার ইচ্ছা /কারন খালি পেটে খেলে আবার বমি হবার সমুহ সম্ভাবনা / কিন্ত কিছুতেই বমি করা যাবে না / বমি করলে মরার শেষ সুযোগও শেষ / চার পাঁচ দিন ধরে পকেট গড়ের মাঠ /টিউশনির টাকা পাইতে্ এখনও আরও ছয়দিন বাকি// অবশ্য এর মধ্যে মারা গেলে তো আর কোনো কথাই নাই , এমনি এমনি সমস্যার সমাধান /
কিন্ত মৃত আমাকে নিয়ে বিপদে পড়ে যাবে যার কাছে এই যে বিপদে আপদে লাট্টুর মত লেগে থাকি সে /
এখন দুপুর / মধ্য দুপুর /এই রোদটাকে কি বলে ? ঝাঁ ঝাঁ রোদ , না কাঠ ফাঁটা রোদ! অবশ্য আমার চব্বিশ বছরের জীবনে কখনও রোদে কাঠ ফাঁটতে দেখিনি /তবে অন্য জিনিস ফাঁটতে দেখেছি - শিমুল তুলা ! কি আশ্চর্য সেই আওয়াজ ! মনে হয় ছোট খাটো কামান দাগছে কেউ/
মাথার মধ্যে তুলা ফাঁটার আওয়াজ নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় হাঁটছি অনেকক্ষন / রোদের সংগে সমান ভাবে রং ছড়াচ্ছে জারুল আর কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো /
এখন কতবেলা !! মনে হয় তিনটা /সকালবেলা শুধু চা আর মুড়ি খেয়ে নিরাময় মেস বাড়ি থেকে বের হয়েছি /এই ভরদুপুরে কোথায় যে মাগনা খাবার পাওয়া যাবে সেই চিন্তায় আছি /
ধানমন্ডির লেকের পাড়ের এই জায়গাটা এক আজব জায়গা / ব্যস্ত ঢাকাকে এখানে এক নজরে দেখা সম্ভব / বলতে গেলে বিনা পয়সায় ঢাকার প্রামান্য চিত্র দেখা যায় / কি না আছে এখানে ! ব্যবসা বানিজ্য , লেনাদেনা, পৌষপার্বন, জারিগান ডিসকো গান , এবং নানা রকমের ভালোবাসা /
ধুর্ পেটের মধ্যে খামচাখামচি শুরু হইছে /এখন আর হিমুর হন্টন নয় / গল্পের হিমু তো মহামানব , আমি তো না/ এই জায়গাটা মনে হয় একটু নিরাপদ এবং নিরিবিলি , বসা চলে /
বসা চলে কি ? ঘুমিয়েও পড়া যায় /
এ ভাবে বসা বা অম্বরমুখী হয়ে আমার শোয়া বসাটা নতুন কিছু না / এখানে যে ছেলেটা চা সিগারেট বিক্রি করে সে তো আমাকে দেখলে এক মাইল দুরে থাকে/ কারন আমিও হিমুর মত জোরজবরদস্তি করি, কিন্ত ওরাও জানে আমাকে বাকী দিয়ে কোনে ফলাফল নাই কারন আমি তো আর মহাপুরুষ না , ছ্যাচরা আমি/
এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম চায়ের এতবড় কেটলি আর সিগারেট হাতে সেই ছেলেটা এদিকেই আসতেছে /হইছে কাম! আজ আমার খবর আছে /
ছেলেটা কাছে এসে একটু দাড়ালো , তারপর পাশে বসে পড়লো / মনে হয় এও বুঝতে পেরেছে , আজ পাওনা আদায় না করতে পারলে সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে /আমিও কি পার্ট নেব তা ভাবতে ভাবতে ওর দিকে তাকাতেই ছেলেটা বলল,
ভাইজান ভ্যালা আছেন ?
ওমা কি বলে! সম্বোধনের এত উন্নতি !!
দুই তিন আগেও না আমারে বলছে ,
"ওই ব্যাডা আইজ পয়সা দেওনই লাগবো / "
হুম্ নিশ্চয় রহস্য আছে !
এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজলাম, আটকিয়ে রেখে মাস্তান দিয়ে মার খাওয়াবে নাতো ?
কথাটা ভাবতেই হাসি এসে গেল /
আমি না আত্মহত্যা করবো বলে পকেটে ঘুমের ঔষধ নিয়ে ঘুরছি - তো মাস্তানের মার কে ভয় পাইতেছি কেন?
এ তো সেই লোকের মত যে কি না গাছে ঝুলে মরার জন্য পথ ধরে যাচ্ছিলো / পথে এক লোকের সাথে দেখা /
" ও মেদ্দার পো এত রাইতে কই যাও? "
" গলায় দড়ি দিতে / "
" ভ্যালা কতা , তয় হাতে হারিকেন কেন??"
"পাগল নাহি , শিয়াল সাপ আহে যদি ......"
হা হা হা ....
ছেলেটির চোখ বড় বড় হয়ে গেল/
সে উঠে দৌড় দিবে কিনা এরকম কিছু ভাবার আগেই বললাম,
কি রে ভালো আছিস ?
একটু সময় নিল উত্তর দিতে /
তাপর বলল,
জ্বে না /
কেন ?
মুখটা আরো যেন কালো হয়ে গেল / টলমল করে উঠলো যেন চোখ / শোনা যায় না এমন কন্ঠে বললো ,
তিন দিন ধইরা আমার বড় বইনটার কোনো খোঁজ নাই /
আচ্ছা .. বাকী টাকা না , অন্য ব্যাপার /
তোর বড় বোন ?
সুখী ! হইযে ফর্সা মাইয়াটা বেন্চির উপরে সন্ধার পর বইয়া থাকে , আর দিনত বেলা ব্রিজের গোড়ার ঘুমাইয়া থাকে , হেয় /
পড়ি পড়ি করেও মনে পড়লো না সুখীর মুখটা/ আমিও পাগল একটা , কি ভাবে মনে পড়বে ,সুখী তো নায়িকা না ? বা এখানে ছাত্তি টানাইয়া কখনও মডেলিংও করে নাই / যাই হোক হবে কেউ একজন /
ভাইজান আপনি তো অনেক হাঁটাহাঁটি করেন , একটু বইনটারে খোজনের ব্যবস্থা কইরবেন ?
আরে কয় কি !! মরার আগে পূন্যের কাজ !
আমার তো স্বর্গে যাওয়ার কোনো চান্সই নাই /
ইহ্জন্মে ভালো কাজ করেছি বলে মনে পড়ে না / আর অপঘাতে বা আত্মহত্যা করলে তো নির্ঘাৎ নরকবাসী এবং কন্দকাটা ভুত হওয়ার সম্ভাবনা ১০০% সুযোগ যখন পাওয়া গেছে যাই একটা তো ভালো কাজ করি /আর যাই হোক চা সিগারেটের দাম হয়তো এই উছিলায় শোধ হবে /
ও ভাইজান ভাবতাছেন কি ? কন না কেমনে কইরা আমার বইনটার খোজ পাই /
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:০৭