অফিসের কাজের শেষে আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সময় কাটাতে বেছে নিলাম কাঠকুশলের কাজ। ১০ গ্যালন একুরিয়ামের জন্য একটা স্ট্যান্ড বানানোর কাজ অবশেষে শেষ করলাম আজকে। এই ব্লগপোস্টে বিস্তারিত লিখব স্ট্যান্ডের ডিজাইন ও বানানোর সম্পর্কিত বিভিন্ন দিকের কথা।
প্রথমেই আসি ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা। আমার একুরিয়ামের পরিমাপ হল ২৫.৫ সে.মি. X ৫১.০ সে.মি.। ইচ্ছা ছিল দৃষ্টিনন্দন একটা স্ট্যান্ড বানাবো। তবে বেশি ঝামেলা কিংবা খরচ কোনটাই করার ইচ্ছা ছিল না। সেজন্য সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস একটা ডিজাইন করার জন্য স্কেচআপ এ কিছুক্ষন আকাঁআকি করলাম। টানা এক সপ্তাহ চিন্তাভাবনা (!) করার পর আধাঘন্টার মধ্যেই একটা মডেল দাঁড় করিয়ে ফেলি গত সপ্তাহে। আঁধা ঘন্টার কাজ করতে কেন আমাকে এক সপ্তাহ চিন্তা করা লেগেছে, সেটা জিজ্ঞেস করে লজ্জায় ফেলবেন না, প্লীজ।
পোস্টের এই পর্যায়ে একটা ছবি দেয়া যুক্তিযুক্ত।
পরিকল্পনা হল, স্ট্যান্ডের উপরের দিকে একুরিয়ামটা বসার জন্য একটা গ্রুভ করব। তাহলে আলাদা করে আর কোন রেইলিং দেয়া লাগবে না। চারটা খুঁটি চারদিকে খাড়াভাবে দিলে ঝামেলা অনেক কম হত। কিন্তু, তাতে পুরো স্ট্যান্ডের দীর্ঘস্থায়িত্ব অনেক কমে যাবে বলেই ধারনা করলাম। পাশ থেকে আসা কোন ধাক্কা সামলানোর জন্য তেরছা বা কোনাকুনি পজিশন অনেক বেশি কার্যকরী। সেই চিন্তা থেকেই খুঁটি চারটা একটু কাত করে বসানোর জন্য মনস্থির করলাম। আন্দাজে একটা কোন ঠিক করলাম ২০ ডিগ্রী। এই কোন ঠিক করতে কোন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং অংক কষি নাই। ১৫ ডিগ্রী হলেও হত, ২৫ ডিগ্রী হলেও সমস্যা হত না। এরপরে মনে হল, দুইদিকে বিপরীতভাবে খুঁটিগুলো কাত করলে সরাসরি সামনে থেকে দেখতে X এর মত মনে হবে। অনেকটা এরকমঃ
এরকম X বানাতে আলাদা কোন ঝামেলা নাই, বানানোর সময় খুঁটিদুইটা উলটা করে লাগালেই হবে। মনে হল, দেখার চোখে একটু বেশি সুন্দর লাগতে পারে, সাথে সাথে স্ট্যান্ডের কাঠামোগত শক্তি কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ডিজাইন করা শেষ। এবার আসি কাঠামো বানানো নিয়ে। পাশের হার্ডওয়ারের দোকান থেকে দুইটা ২X৩ কাঠ নিয়ে আসলাম। ২X৩ লেখা হলেও আসলে এখানে আছে ১.৫"X২.৫"। মেপে মেপে চার টুকরা ৫০ সেমি, চার টুকরা ২৪.২ সেমি, আর চার টুকরা ৪৫ সেমি কাঠ কেটে নিলাম। শেষে চার টুকরা কাঠ ২০ ডিগ্রী কোন করে কাটতে হবে। আমার মাইটার স'তে ২০ ডিগ্রী কোন সেট করে নেওয়ার পর দেখলাম, কুনাকুনি কাঠ কাটা কোন ব্যাপারই না। মাইটার স'টা না থাকলে কষ্ট বেড়ে যেত। তারপর ছবিতে দেখানো স্টাইলে কাঠগুলোকে জোড়া দিয়ে দিলাম স্ক্রু আর আঁঠার সাহায্য নিয়ে।
এরকম চারকোনা কাঠামো লাগবে দুইটা; উপরে আর নিচের জন্য। জোড়া দেয়ার সময় পকেটহোল স্ক্রু করার জন্য একটা ড্রিল বিট ব্যবহার করেছি যাতে পরবর্তীতে স্ক্রুর গর্তগুলো ডাউয়েল দিয়ে ঢেকে দিতে পারি। জোড়ার মাঝে পর্যাপ্ত আঁঠা লাগিয়েছি যাতে পরবর্তীতে টানা হেচঁড়ার সময় স্ক্রুর উপর বেশি চাপ না পড়ে আঠাঁর উপরে পরে। আগে আমার ধারনা ছিল পেরেক কিংবা স্ক্রু সবচেয়ে শক্তিশালী জোড়া তৈরী করে। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পারলাম, বর্তমান বাজারে পাওয়া আঠাঁগুলো স্ক্রুর তুলনা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী।
যাহোক, উপরের আর নিচের কাঠামো তৈরী হয়ে গেলে জোড়াগুলো শুকানোর জন্য কিছুক্ষন সময় অপেক্ষা করলাম পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে। এই ধাপে একুরিয়াম বসানোর জন্য উপরের কাঠামোতে গ্রুভ করা লাগবে। এই কাজে আমার পিচ্চি রাউটারটা ব্যবহার করলাম। একটা বড় রাউটার থাকলে কম সময়ে এইকাজ করতে পারতাম, তবে ছোটটা দিয়ে তেমন বেশী কষ্ট হয়নি। পূর্বপরিকল্পনা মত ১ ইঞ্চি (২.৫ সেমি) একটা গ্রুভ করলাম উপরের কাঠামোর ভেতরের দিকের চারপাশে। তারপর, একুরিয়ামটা বসিয়ে নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিলাম গ্রুভ ঠিক আছে কিনা।
এর পরবর্তী ধাপ হলে কাত করা খুটিগুলো লাগানো। খুটি হিসেবে এর আগে কাটা ৪৫ সেমি দৈর্ঘ্যের কাঠগুলো ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এইগুলো একটু কাত করে লাগাতে হবে, একা এই কাজ করা একটু কষ্টসাধ্য ছিল। তবে অসম্ভব ছিল না। প্রথমে ঠিক করলাম নিচের কাঠামোতে ছবিতে দেখানো স্টাইলে দুইটা খুটি লাগাবো। এরপর একইভাবে উপরের কাঠামোতে দুইটা।
এই চারটা তেরছা খুটি লাগাতে ভালই সময় লাগছে আমার। পাইলট হোল করে নেওয়াতে একটু সুবিধা হয়েছে। নাহলে আরও অনেক বেশী কষ্ট করতে হত। যাইহোক, দুইটা অংশ রেডি হয়ে গেলে একটার উপর আরেকটা বসিয়ে নিয়ে বাকি স্ক্রুগুলো লাগিয়ে নিলাম সহজেই।
তেরী হয়ে গেল আমার সাধের স্ট্যান্ড। বানানোর কাজ শেষ। এখন সাজানোর কাজ শুরু। সাজাসাজির প্রথম ধাপ শিরীষ কাগজ দিয়ে একটু ঘষে নেওয়া। ৮০ গ্রিট শিরীষ কাগজ লাগিয়ে র্যান্ডম অরবিটাল স্যান্ডার দিয়ে শুরু করলাম ঘষাঘষির কাজ। প্রথম পর্যায়ে ঘষাঘষি শেষে মোটামুটি একটা আন্দাজ পাওয়া গেল কোথায় কোথায় পাট্টি লাগাতে হবে। বেশিরভাগ জোড়া আর মাঝে কয়েকটা জায়গায় পাট্টি লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম পাট্টিগুলো শুকানোর জন্য। এরপর আবার ৮০ গ্রিট পেপার দিয়ে স্যান্ডিং করলাম দ্বিতীয়বারের মত। এরপর ১২০ গ্রিট পেপার দিয়ে আবার স্যান্ডিং করলাম আগাগোড়া।
ইচ্ছা ছিল ২২০ গ্রিট পেপার দিয়ে পুরোটা স্যান্ডিং করার। কিন্তু ১২০ এর পরেই মনে হল যথেষ্ঠ মসৃণ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তাই আর ২২০ নাম্বার শিরীষ কাগজ দিয়ে আপাতত ঘষলাম না। বরং মেহগনি রঙ এর আবরণে দিয়ে পুরোটাই ডেকে দিলাম একটা সুতির কাপড় দিয়ে। তারপর স্বচ্ছ পলিইউরেথিনের আবরণ দিয়ে সেটা শুকানোর পর ২২০ নাম্বার শিরীষ কাগজ দিয়ে আরেকবার ঘষে দিলাম। যাও একটু আধটু অমসৃণতা হাতে লাগছিল, এইবারের ঘষাঘষির পর সেটাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
সবশেষে আরও দুবার পলিইউরেথিনের আবরন দিলাম স্ট্যান্ডটার উপরে। সবমিলিয়ে ৩ বার। ৩ বার না দিয়ে দুইবার দিলেই যথেষ্ঠ হত। কিন্তু পানির সংস্পর্ষে এসে কাঠে যাতে পচঁন না ধরে সে চিন্তা থেকেই ভাবলাম একবার বাড়তি দিয়েই দেই। কি আর এমন কষ্ট হতে তাতে। কষ্ট তো সব স্যান্ডিং করতেই হয়ে গেল। এত কষ্টের ফসলটা কেমন হল, আপনি নিজের চোখে দেখে নিন নিচের ছবিতে।
কালকে অফিসে নিয়ে যাব একুরিয়াম আর স্ট্যান্ড। সামনে সপ্তাহে একুরিয়ামের ভেতরের পরিবেশ সাজাব। এই কাজে সৃজনশীলতা লাগবে অনেক। আমার সৃজনশীলতা অনেক কম। ভাবছি একুস্কেপিং এর জন্য দোকানে পাওয়া কোন একটা প্যাকেজ কিনে নেব এই উইকএন্ডে। কাঠকুশলে আমার আগ্রহ বেশি। সে আগ্রহ থেকেই স্ট্যান্ডটা বানানো। একুস্কেপিং এর কাজ নিজে করার কোন ইচ্ছা নেই। সেজন্য আপাতত খালি একুরিয়ামের ছবি দিলাম নিজের হাতে বানানো স্ট্যান্ড এর উপর। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:৪৬