করোনার বিস্তার প্রতিরোধে আমাদের রাজ্য সরকার গত সপ্তাহ থেকে বাসায় বসে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই নির্দেশ থাকলেও একটু আগে ইমেইল করে জানালো এপ্রিলের ২৪ তারিখ পর্যন্ত অফিসে যাওয়ার একান্তই দরকার না পড়লে বাসা থেকে কাজ করার জন্য। এক সপ্তাহ বাসা থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব অদ্ভুদ। নতুন এক জগতে পা রাখলাম যেন।
প্রথমেই বলে রাখি আমি আইটি প্রফেশনাল নই। লেখালেখিও আমার পেশা না। পুরোপুরি বাসায় থেকে সবকাজ আমার করা সম্ভব না। আমার পেশাগত কাজে ৫০ ভাগ সময় মাঠে কাটানোর দরকার পড়ে। বাকি সময় অফিসে বসে প্রয়োজনীয় কাজ করি। এখন সময়ের প্রয়োজনে বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে। বাসায় বসে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে বিরক্তি আসে, আবার মাঝে মাঝে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার খাওয়ার সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। ভাবি, যাহোক বউ আছে পাশে, ভালমন্দ খাবার তো অফিসে বসে খাওয়া যেত না।
সবচেয়ে বড় কথা চাকরি হারাইনি। যতই বিরক্তি লাগুক, কাজে মন না বসুক, কিংবা কাজের পরিবেশ না থাকুক, চাকরি টিকে আছে এর চেয়ে বড় কোন কথা হতে পারে না। টেনেসি রাজ্য সরকার এত আগে থেকে করোনার বিস্তার প্রতিহত করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা প্রশংসনীয়। অনেক বেসরকারি কোম্পানি এরকম ব্যবস্থা নিতে পারছে না তাদের কাজের ধরনের কারণে। সেসব কোম্পানিকে বাধ্য হয়ে কর্মী ছাটাই করা লাগছে। সাধারণ জনগণের জন্য এটা খুবই খারাপ একটা সময়। যারা করোনাতে আক্রান্ত তারা চিন্তায় আছে যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে। আর যারা এখনো এই রোগে আক্রান্ত হয়নি, তারা চিন্তায় আছে কখন চাকরিতে ফেরত যেতে পারবে সেটা নিয়ে। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। আজকে নিউইয়র্কে থাকা এক সহপাঠির সাথে কথা বললাম। তারা বাসাবন্দী দুই সপ্তাহ ধরে। কখন অবস্থা স্বাভাবিক হবে তার কোন পূর্ভাবাস দেয়া যাচ্ছে না, কখন চাকরিতে ফেরত যেতে পারবে তারও কোন ঠিকঠিকানা নাই। আমরা যারা এখানে নতুন কর্মজীবন শুরু করছি, আমাদের মত অভিবাসীদের জন্য চাকরিতে থাকা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ বেতনের জন্য, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভিসা স্ট্যাটাস রক্ষা করার জন্য। চাকরি হারানো সবার জন্যই খারাপ, অভিবাসন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটু বেশিই খারাপ।
আমেরিকার অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন একটা সময় যাচ্ছে এখন। মন্দা আসন্ন, এটা সবাই ধারণা করতে পারছে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক মন্দা কতটা ভয়াবহ হবে সেটা হয়ত এখনো পুরোটা বুঝে উঠা যাচ্ছে না। অর্থনীতির ছাত্র যেহেতু আমি নই, এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না। তবে, এই মন্দাটা হয়ত পুরো বিশ্বের জন্য অনেক খারাপ সংবাদ নিয়ে আসবে। খেটে খাওয়া মানুষরা তো কষ্ট পাবেই, কোটিপতি ব্যবসায়ীরা যে পথে বসবে না, সেটা বলা মুশকিল।
এইসব টেনশনের মধ্যে আছে দেশের চিন্তা। পরিবার-পরিজন, দেশবাসী সবার জন্যই খারাপ লাগে। প্রবাসীদের এই আরেকটা জ্বালা। দেশে নাই দেখে দেশ নিয়ে টেনশন, আবার বিদেশে আছি বলে বিদেশ নিয়েও টেনশন। টেনশনে টেনশনে জীবন শ্যাষ!
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৩:৫০