পরিবারের লোকজন বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত—এমন অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটারের নিয়োগ বাতিল করেছে এনবিআর। নিয়োগ বাতিল হওয়া ওই কর্মচারীর নাম মনিরা আক্তার। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিয়োগ বাতিলের অফিস আদেশ প্রার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল সকাল থেকেই এনবিআরে ‘মনিরার বাবা বিএনপি করে তাই তার চাকরি গেছে’ এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চুপিসারে আলোচনা চললেও তারা কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, সরকারি চাকরি একবার হলে তা সহজে বাতিল হয় না, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই মেয়েটির (মনিরা আক্তার) চাকরি সবার অজান্তেই চলে গেল। মনিরা আক্তার প্রথম সচিব (মূসক) আহসানুল হকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ওই প্রথম সচিব বলেন, বাতিলের বিষয়টি আমি শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না। তবে অফিস বা কাজের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আমার বা আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই।
এনবিআর প্রথম সচিব (বোর্ড প্রশাসন) মো. সোলায়মান মণ্ডল স্বাক্ষরিত চিঠির অংশবিশেষ হুবহু তুলে ধরে হলো—
‘প্রার্থী পরিবারের লোকজন বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং বিএনপি’র সক্রিয় সদস্য। প্রার্থী নিজেও বিএনপি মনোভাবাপন্ন। প্রার্থীর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময় সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকেন। প্রার্থীর স্থানীয় রেকর্ড ভাল নয়। প্রার্থীর পরিবারের লোকজন সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় প্রার্থীকে উল্লিখিত পদে মনোনীত করা সমীচীন হবে না।’
গত ২৬ সেপ্টম্বর পাঠানো পুলিশের এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মনিরা আক্তারের নিয়োগ বাতিল করেছে এনবিআর।
ওই চিঠির সূত্রে জানা যায়, মনিরা আক্তার গত ২৮ মে সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পান। তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা থানায়। ওই চিঠিতে জানা যায়, নিয়োগপত্রের শর্ত-৩-এ উল্লেখ ছিল নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির পূর্ব কার্যকলাপ সম্পর্কে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ নিয়োগ সাময়িক বলে বিবেচিত হবে। পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের গরমিল প্রমাণিত হলে বা নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক দাখিল করা কোনো সনদ বা তথ্যে গরমিল প্রমাণিত হলে কোনোরূপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এ নিয়োগ বাতিল বলে গণ্য হবে।
তবে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ পাওয়া গেছে কি না, চিঠিতে তার কোনো উল্লেখ নেই—যদিও চিঠিতে লেখা আছে স্থানীয় ঠিকানা, দাখিল করা সনদ বা তথ্যে গরমিল দেখা গেলে বা পুলিশি প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে নিয়োগ বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে এটি স্পষ্ট, প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলেও পরিবারের লোকজন বিএনপির সদস্য—এজন্যই পুলিশি প্রতিবেদন সন্তোষজনক হয়নি। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কী কী তথ্য যাচাই করা হয়—এমন প্রশ্নে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সির (এনএসআই) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রার্থী রাজনীতি করে কি না, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ ছিল বা আছে কি না, প্রদত্ত ঠিকানা সত্য কি না, শিক্ষাগত যোগত্যসহ দেয়া অন্যান্য তথ্য সত্য কি না—এসব একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী সংগ্রহ করা হয়। তবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে চাকরি হবে না বা নিয়োগ বাতিল হবে—এমন কোনো নিয়ম নেই বলে তিনি জানান।
কিন্তু শুধু বিএনপি করে—এমন তথ্যের ভিত্তিতেই মনিরা আক্তারের নিয়োগ বাতিল করেছে এনবিআর। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশি প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য পাওয়ায় নিয়োগপত্রের শর্ত-৩ অনুযায়ী মনিরা আক্তার, পিতা-মুন্তাজ আলী, গ্রাম-চরভাবনা, পো.-নারায়ণখোলা, থানা-নকলা, জেলা- শেরপুর এর সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ এতদ্বারা বাতিল করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হলো এবং ইহা জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকালে মনিরা আক্তার এনবিআর চেয়ারম্যান ড. গোলাম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই নিয়োগ বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করে ফের চাকরি বহালের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন মনিরা আক্তার। চেয়ারম্যান বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা আপিল আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে মনিরা আক্তারের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সুত্র