সারা দেশে চলছে শোকের মাতম। সরকার থেকে আজ ২৭/১১/২০১২ ইং তারিখ শোক দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে (ভবিষ্যতে আমরা এমন শোক পালন করতে চাই না)।
সাম্প্রতিক আশুলিয়ায় গার্মেন্ট্স দুর্দঘটনায় ঝরে পড়েছে এদেশের খেটে খাওয়া ১২৪ জন শ্রমিকের প্রান। যারা দেশের রপ্তানি খাতে অর্থ্ উপার্জনে ৮০% দায়িত্ব পালন করে থাকে।
শত লাঞ্চনা, বঞ্চনা, শোষন নিপীড়নকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যারা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জ্বালানি হিসাবে নিজের শরীরের ঘাম দিয়ে যাচ্ছে অবিরত। বর্তমানে রক্তও দিতে হচ্ছে তাদের
এহেন মর্মান্তিক দুর্দঘটনার দায়ভার গ্রহন করে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন মন্ত্রী পদত্যাগ করে নাই ইহা বড় দুঃখ জনক।
ঘটনার পরপরই শ্রম মন্ত্রী এবং শিল্প মন্ত্রীর পদত্যাগ করা অবশ্যই উচিত ছিল । দুঃখ হয় তাদের নৈতিকতা বোধ দেখে।
মনে হয় তাদের ক্ষমতার লোভ এতটাই প্রখর যে এরকম হাজার হাজার মানুষের প্রানহানিও তাদরে নৈতিকতা বোধ, লজ্জাবোধ, দায়িত্ববোধ ফিরিয়ে আনতে পারবে না। ক্ষমতার মোহে মন্ত্রীরা এতটাই অন্ধ এবং কালা হয়ে গেছে যে এতগুলো বাবা মায়ের ছেলে/মেয়ে হারানোর কষ্ট, ছোট ছোট ছেলে মেয়ের বাবা, মা হারানোর বেদনা, স্বামী স্ত্রী কে খুজে না পাওয়ার অথবা স্ত্রী স্বামীর লাশ খুজে না পাওয়ার কষ্ট এবং নিহত মানুষদের আত্নীয়-স্বজনের বুক ফাটা আর্তনাত, হাহাকার তারা দেখতে পাচ্ছে বা শুনতে পাচ্ছে বলে মনে হয় না।
এদেশেই আমরা দেখেছি
১) চট্রগ্রামে ফুটবল খেলা দেখে ট্রাকে করে ফিরে আসার সময় অনেক গুলোর ছোট শিশুর (২৯ জন) প্রানহানি ঘটার পরও তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী পদত্যাগ না করে নির্লজ্জ ভাবে দায়িত্বেই ছিলেন।
২) দেখেছি পাহাড় ধ্বসে অনেকগুলো লাশ, কিন্তু দেখেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগ।
৩) শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, এবং সোনালী ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনার পরেও অর্থমন্ত্রী নির্বিকার ভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তার নৈতিকতার পারদ এতটাই তলানীতে এসে ঠেকেছে যা চোখেই পড়েনা।
৪) রেল কেলেংকারীর ঘটনায় মন্ত্রীর এ.পি.এস ৪ কোটি ৭০ লক্ষ ঘুষের টাকা মন্ত্রীর বাসায় পৌঁছে দেয়ার সময় বি.জি.বি নিকট হাতে নাতে ধরা পড়ার পরও উক্ত মন্ত্রী এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসাবে আছেন। কত খানি নির্লজ্জ হলে দায়িত্বে থাকা সম্ভব???????
সব শেষে দেখলাম, আশুলিয়ায় লাশের মিছিলের পরও শ্রম মন্ত্রী এবং শিল্প মন্ত্রী এখনও দায়ভার কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ না করে দায়িত্বেই আছেন। কি আজব এদেশ????????? কি আজব এদেশের মন্ত্রীগন।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
অথচ,
আমরা পাশাপাশি দেশের কিছু ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহন করতে পারি যেমন-
১) ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাষ্ত্রী ছোট একটা রেল দুর্দঘটনার দায়ভার স্বীকার করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর আপত্তি থাকা সত্বেও পদত্যাগ করেছিলেন।
২) সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদের মুখে ভারতের রেল মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
৩) ইংলান্ড এবং পোলান্ডের একটি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফুটবল ম্যাচ নির্দিষ্ট দিনে বৃষ্টির কারনে মাঠে পানি জমে যাওয়ায় অনুষ্ঠিত হতে পারে নাই বলে পোলান্ডের ক্রীড়া মন্ত্রী জোনানা মুচা গত ১৬/১০/২০১২ ইং তারিখে প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগ পত্র প্রেরন করেছেন।
৪) সাম্প্রতিক মিশরে একটি স্কুল বাসের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে ৪৫ জন শিশু প্রান হারানোর ঘটনায় সেদেশের সড়ক ও রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন।
এরকম হাজারো উদাহরণ আমরা পেশ করতে পারি এ দেশের রাজনীতিবিদদের জন্য। কিন্ত্র প্রশ্ন তারা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহন করবেন কি?????????????