ভূমিকা এবং আমার অবস্থান
শাহবাগ আন্দোলোনের সাথে একত্মতা ঘোষণা করেছে দেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত আমার সকল বন্ধু বান্ধবেরা। এটা নিয়ে আমি গর্বিত।
সিলেট থেকে সজীব এসেছে জাফর স্যারকে নিয়ে; আমি স্যারের ছাত্র ছিলাম। আমার ক্যাডেট কলেজের সিনিয়ার , জুনিয়ার, ব্যাচম্যাটরা শাহবাগে যতটুকু সম্ভব সময় দিচ্ছে। ভার্সিটির বন্ধুরা যোগ দিয়েছে। আইবিএ তে এমবিএ র ব্যাচম্যাটরা যোগ দিয়েছে। আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উৎসাহিত করছে সবসময়। বাসা থেকে দিগন্ত চ্যানেল বদ্ধ করে দিয়েছি বাবার সাথে কথা বলে। ফেসবুক এবং টুইটারে পোস্ট দিচ্ছি সবসময়। দিনে ২ ঘন্টার জন্য হলেও শাহবাগে অংশগ্রহন করার চেষ্টা করছি।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন থেকে সৈকত, শায়লা, স্বাক্ষর ৪৫০ জন লোক জোগার করে একত্রিত হয়ে শাহবাগের সমর্থনে শ্লোগান দিয়েছে, কানাডায় ক্যালগেরিতে নাশাদ, পিউরা রা্যলি করেছে। ইটালিতে হাসনাত নিপারা মুভমেন্ট করছে। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তাপস চিৎকার করে হংুকার করছে যুদ্ধ অপরাধীদের ফাসির দাবিতে। পুরো বা্যাপারটায় আমি রিতীমতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেছি।
মূল প্রসংগ:
কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে আমি কোনোভাবেই একমত হতে পারছি না। এবং সেটা নিয়েই আমার লিখতে বসা। আমার কিছু দেশি এবং প্রবাসে অবস্থানরত বন্ধুরা একটা পিটিশন খুলেছে বারাক ওবামা এবং হোয়াইট হাউস বরাবর আন্দোলোনের সাথে সংহতি দেখানোর জন্য। প্রসংগত উল্লেখ্য মাসাবা আদনিন একটা সার্বজনীন পিটিশন খুলেছিলো এবং আমি সেটাতে সাইন করছি এবং যথা সম্ভব সবাইকে বলেছি সাইন করার জন্য।
কিন্তু আমি ওবামাকে উদ্দেশ্য করে খোলা পিটিশন এর ব্যাপারে একমত হ্তে পারছি না নিম্নোক্ত কারনে
১। ২য় বিশ্বযুদ্ধ: জাপান এবং সাউথ কোরিয়ার নিজস্ব সামরিক বাহিনী নাই। মার্কিন সামরিক স্থাপনা সেখানে দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। অনেকেই মনে করে দেশগুলোর সরকার মার্কিন সামরিক বাহিনী কতৃক নিয়ন্ত্রিত। জাপানে ২য় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিনিরাই হিরোশিমা নাগাসাকিতে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার একটা ঐতিহাসিক কলংক জনক অধ্যায়। মার্কিনি সরকার এ ব্যাপারে এখনো অনুতপ্ত নয়।
২। সাউথ আমেরিকা: মার্কিন চিত্রপরিচালক মাইকেল মুর তার বোলিং কলম্বাইন ডকুমেন্টারি তে প্রমাণ দিয়েছেন সাউথ আমেরিকার রাস্ট্রনায়কদের আ্যসাসিনেশন এ মার্কিন সরকারের ভূমিকা এবং মার্কিন সমর্থিত স্বৈরশাসকদেরকে ক্ষমতায় বসানো সহ অনেক বিতর্কিত ভূমিকা। মোদ্দাকথা মার্কিন সরকার সার্বজনীনভাবে গ্রহনযোগ্য নয়।
৩। ১৯৭১ এর ভূমিকা: ১৯৭১ সালে মার্কিন সরকার পািকস্তান সরকারের পক্ষে সমর্থন দিয়েছিলো এবং বাংলাদেশের অভু্যদয়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। এ বা্যাপারে তথ্য এবং উপাত্ত অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। ্উইকিলিকসেও এ নিয়ে প্রতিবেদন এসেছে।
৪। সমসাময়িক মধ্যপ্রাচ্যে যে সংকট তৈরি হয়েছে এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং সার্বজনীনভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। এ ধরনের পিটিশন মার্কিন সরকার মধ্যপ্রাচ্যের মত ভিন্নখাতে ব্যবহারের আশংকা ফেলে দেবার মতো নয়।
৫। বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক স্থাপনার প্রস্তাবনা এসেছে ইতিপূর্বে এবং বাংলাদেশ সরকার তা সম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ধরনের পিটিশনকে মার্কিন সরকার বাংলাদেশে "গণতন্ত্রকে প্রতিস্্ঠিত নয়" এর প্রমাণ বলে আখ্যা দিয়ে ভিন্ন উদ্দ্যেশে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি তৈরি করতে পারে। সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে মার্কিন স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।
৬। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাস্ট্র। এর জনগন, সরকার এবং সংবিধান, আইন ব্যবস্থা এর নিজের। এ ব্যাপারে বিেদশী সরকারের বা সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত অসম্মানজনক।
৭। শাহবাগ একটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এখানে কোনো রাজনৈতিক নেতাদেরকে বক্তৃতা দিতে দেয়া হয়নি। বরং চেস্টা করলে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসিনা বা ওবামা এনারা সবাই আমাদের মত আম জনতার দ্বারা তৈরি সরকার প্রধান। হাসিনা বা ওবামা শাহবাগ তৈরি করেনি, আমরা করেছি। মার্কিন সরকার প্রধানও হাসিনার মতই একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আসেন আমরা হাসিনা বা ওবামাকে বেশি বড় করে না দেখি। খারাপভাবে বলি, নিজেদেরকে বেিশ ছোট না করি।
৮। পিটিশন সাবমিট করলে বাংলাদেশের রাস্ট্রপতি বরাবর করা উচিৎ। আন্তর্জাতিকভাবে রূপ দিতে চাইলে জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর করুন। ওবামা বরাবর নয়।
গনতান্ত্রিক চর্চাতে কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করাটা অনৈতিক কিছূূু নয়। তাই জনরোষের ভয় নিয়ে হলেও আমি আমার দ্বিমত পোষন করলাম।
কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব, যুদ্ধপরাধীদের ফাসির দাবি এবং শাহবাগ আন্দোলোনের বিষয়ে আমি আপনাদের সাথে সবসময় একাত্ম থাকবো।
দেখা হবে শাহবাগে।