রোজ সকালে উঠে পত্রিকা হাতে নিতে আমার ভয় করে। পত্রিকার দিকে তাকাতে বুক কাপে। না জানি কত ভয়ঙ্কর খবরে ঠাঁসা এ কাগজ।
ভারত স্পষ্ট হুঁশিয়ার দিয়েছে ৫ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে দিতে পারে। ভারতীয় সেনারা এখন শুধু মাত্র সরকারের দিকে তাকিয়ে। তার থেকেও ভয়ংকর খবর হল, সাধারণ ভারতীয়দের একটি সিংহভাগ পাকিস্তানকে সবক শেখানোর পক্ষে। ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে মোদী সরকারের উপরে যুদ্ধের অনুমতি চেয়ে রয়েছে তীব্র চাপ।
এদিকে পাকিস্তানও প্রস্তুত ভারতের সাথে যুদ্ধে যেতে। কিন্তু বৈশ্বিক সমিকরন থেকে এটা জানা যায় যে, সামরিক ক্ষেতে পাকিস্তান থেকে ভারতের অবস্থান এগিয়ে। ভারত কাশ্মীর সীমান্তে তার শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। অন্যদিকে চায়না, স্পষ্ট করেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। যেমন ভাবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় চীন, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল।
শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশও স্পষ্ট করে ভারতের পক্ষ নিয়েছে। আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে, জঙ্গি দমনে তারা ভারতের সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।
মোদী দাবী করেছে পাকিস্তান অধ্যুষিত বেলুচিস্থানের স্বাধীনতাকামীদের স্বাধীনতা পাওয়া উচিৎ। কিন্তু ভারত অধ্যুষিত জম্বু কাশ্মীরের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ভারত সব সময়ই নেতিবাচক। অন্যদিকে চীন অধ্যুষিত তিব্বতের স্বাধীনতাকামী সেনাদের দীর্ঘদিন ধরে ভারত তেলে জলে পুষে চলেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণ এবং বিজয় পাকিস্তান কখনো ভুলতে পারেনি। সম্ভবত পারবেও না। পূর্বপাকিস্তান খোয়ানোর সেই বদলা নিতেই পাকিস্তান দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে এসেছে। সম্ভবত সেই সুযোগটাও তারা পেয়ে গেছে এবার।
জম্বু কাশ্মীরের সাধারণ জনগন দীর্ঘ্য দিন স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। গত ৭০ বছরের এই সংগ্রামে পাকিস্তান নানা ভাবেই ঘি ঢেলেছে। পাকিস্তান নানা ভাবে কাশ্মেরী সৈন্যদের সামরিক সাহায্য, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে। যার ফলে এই সংগ্রাম যতোটা না কাশ্মীরের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়ে উঠেছে, তার থেকেও অধিক প্রকাশ পেয়েছে ভারত পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব।
গত ১৮ তারিখ রাতে কাশ্মীরি সেনাদের আক্রমণে ভারতীয় ১৮ সেনা নিহত হয়েছে। ভারত জুড়ে এখন শোকের মাতম। ভারতের দাবী এই হামলায় পাকিস্তানের মদত রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান ভারতের এই দাবীকে খারিজ করে দিয়েছে।
গত দুই মাসে কাশ্মীরে ঘটে গেছে অনেক কিছু। প্রায় সাত দিনের মত কাশ্মীরি অনেক প্রেস সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জোড় করে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে শোনা যায়। বেছে বেছে প্রেস থেকে মানুষ তুলে নিয়ে গিয়েছে ভারতীয় সন্যরা। পরিকল্পিত ভাবেই সত্য গোপনের এক ধরনের পায়তারা লক্ষণীয় এখানে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের প্রায় রাষ্ট্রীয় ভাবেই জঙ্গি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেভাবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের পাকিস্তানীরা জঙ্গি বলেছিল। অনুরুপ ভাবে, বেলুচিস্থানের স্বাধীনতাকামী, এবং তিব্বতের স্বাধীনতাকামীদেরও অধ্যুষিত দুই দেশই জঙ্গি বলেই ডাকে।
যত দিন যাচ্ছে দুটি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে। নিশ্চই তখন পৃথিবীর অন্য দেশগুলো তখন বসে থাকবে না। তারাও নানা ভাবে মেরুকরণের পথে এগিয়ে যাবে। যেটা কোন মতেই পৃথিবীর জন্য শুভকিছু বয়ে আনবে না।
পাকিস্তান থেকে আমার ভৌগলিক অবস্থান অনেক দূরেই। কিন্তু কাশ্মীরে আক্রমন হলে সেই উত্তাপ আমার শরীরেও লাগবে। বলা হয়ে থাকে পাকিস্থান খুব আনপ্রেডীক্টেবল কান্ট্রি। কখন কি করে বুঝে ওঠা খুব ভার। গত ৭০ বছরে পাকিস্থানের রাজনৈতিক অন্তসাড়শূন্য অগ্রগতি দেখলেই সেটা বোঝা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান অতর্কিত ভাবেই ভারতকে আক্রমণ করে বসে। এবারো যদি এমন কিছু হয় তবে নিশ্চই সেটা পাকিস্তানের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। ভারতের অর্থনীতি ক্ষতগ্রস্থ হলে বাংলাদেশও পার পাবে না। বাংলাদেশকেও মাশুল গুনতে হবে অর্থনৈতিক ভাবে। অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ঋণ শোধ করতে বন্ধু রাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধও করতে হতে পারে।
কাশ্মীর একটি নতুন পতাকা চায়। নতুন পতাকা চায় বেলুচিস্থান, তিব্বত। যেভাবে ১৯৭১ সালে আমরা চেয়েছিলাম। যুদ্ধ কোন সমাধানই নয়। একটি যুদ্ধ মানে কত শত প্রাণের বলী সেটা বাংলাদেশিদের থেকে ভালো করে দক্ষিন এশিয়ার আর কেউ জানে না। গত দুই মাসে ভারতীয় সেনাদের হাতে প্রায় ৯০ জন কাশ্মীরি নিহত হয়েছে। কাশ্মীর এখন রক্তাক্ত। সুতরাং বাংলাদেশের উচিৎ হবে হুট হাট করে ভারত বা পাকিস্থানের পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থেকে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের দাবীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া। সেটা সম্ভব না হলে, পাক-ভারত আলোচনার পথ অগ্রহর করা।
পাকি মরুক বা ভারতীয় মরুক অথবা কাশ্মীরি মরুক, আদতে তো মানুষই মরছে। আর কত এভাবে চলবে?? মানুষ হত্যা বন্ধ কর!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১