গত কয়েকদিন ধরে এই প্রশ্নটি আমাকে বেশ কয়েকবার করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে- "সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পরিবার গল্প চুরির জন্য মুরাদ পারভেজের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইতে যাবে কি না" ?
এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা থাকার কথা না। কারণ আমি লেখকের পরিবারের কেউ না। এই সিদ্ধান্ত লেখকের পরিবারকেই নিতে হবে। তবে আইনি লড়াইটা মুখের কথা না। এটা ঢাকা- নারায়নগঞ্জ দুই জেলার মাঝে অমীমাংসিত বিবাদ না। এটা একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। তবে দুই দেশের মাঝে আইনি লড়াইটা অস্বাভাবিক না বা অসম্ভব না। এটা খুবই সম্ভবপর একটি কাজ। কিন্তু এর জন্য দরকার বাংলাদেশীদের সহযোগীতা। আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় এই দায় আমরা এড়িয়ে যাব কি না। মুরাদের এই চরিত্র কিন্তু নতুন না। এর আগেও ২০১২ তে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘মানবজমিন’ উপন্যাস নিয়ে দীর্ঘ একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের টাকা পাননি বলে অভিযোগ তুলেন পরিচালক মুরাদ পারভেজের বিরুদ্ধে।[লিংক: Click This Link সেবারও কিছু হয়নি। তবে লেখকের পরিবার আইনি লড়াইয়ে যাবে কি না জানি না, আমি যাব। সেরকমই প্লান।
আমার লেখালেখি যে কিছুটা কাজে দিয়েছে সেটা বুঝতে পারছি। ইতমদ্ধ্যে বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রায় অনেক পরিচালকের সাথেই আমার কথা হয়েছে। কেউই মুরাদের এই জঘণ্য কাজটি মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু অদ্ভুত হল তারাও নিরব। ঐ যে কথায় আছে- "ভাশুরের নাম মুখে নিতে হয় না"। আজ নিজ উদ্যোগে সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা আমার সাথে আলাপে বসতে চায়। ইতোমধ্যে বিষয়টা টালিগঞ্জ সিনেমার ডিরেক্টর ফোরামে আলাপ হয়েছে। শোনা যাচ্ছে তারা আনুষ্ঠানিক ভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে এটা জানাবে। হয়ত ক্ষতিপূরণও দাবী করবে। এদিকে টালিগঞ্জ সিনেমার সাথে জড়িত বেশ কিছু শিল্পী ও কলাকুশলীর সাথে আমার আলাপ হয়েছে। তারাও এটা নিয়ে ধিক্কার জানিয়েছে। জানিয়েছে খুব সিগ্রোহী তারাও নিজ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন করে পরিচালক মুরাদ পারভেজের কাছে জবাব চাইবে। ঋতু পর্ণ ঘোষের লেখা গান, ঋতু পর্ণ ঘোষ ট্রাস্টের অনুমতি ছাড়া কেন ব্যবহার করা হল তারও জন্য আইনি লড়াই হবার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে আমি নিজ উদ্যোগেই ঋতুপর্ণ চলচ্চিত্র সংসদের সাথে আলাপ করেছি।
একটা বিষয় ভুলে যাবেন না। লেখকের পরিবার বা ভারতবাসী কেউ কিন্তু একবারের জন্যও বলেনি যে, "মুরাদ পারভেজ চোর"। বারবারই বলা হয়েছে "বাংলাদেশীরা চোর"। ভুলে যাবেন না যে আন্তর্জাতিক মহলে এটা আমার দেশের সম্মানের প্রসঙ্গ। তাই একজন বাংলাদেশী হিসেবে এটা আমার দায় যে, নিজের সাধ্য সামর্থের মাঝে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। বলুন তো আর কত কাল অপমান মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াব?? আর কত দিন বিদেশের মাটিতে ছোট হয়ে থাকব আমরা??
চাইলেই মিথ্যা ও মেকি দেশ প্রেমের দোহায় দিয়ে আমরা এটা চেপে যেতে পারতাম। তাতে কি হত?? তাতে উপরন্তু আমাদের আত্মসম্মান আর চলচ্চিত্রকেই ছোট করা হত। বাংলাদেশী চলচ্চিত্র আরো ক্ষতির সম্মুখীন হত। আশা করি এই ঘটনার পর থেকে কেউকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়ার আগে অন্তত আরো সতর্কতার সাথে বিচার বিশ্লেষণ করা হবে।
বেঁচে থাকতে সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ কখনোই বাংলাদেশে সম্মান পায়নি। নিঃসন্দেহে তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ সম। একটা সুযোগ তো এবার এসেছে তাকে সম্মান জানানোর। তার সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার। এটা কি আমরা সবাই মিলে করতে পারি না?? আমাদের হাতে পত্রিকা নাই, টেলিভিশন নাই। গুলি নাই, বন্দুক নাই। কিন্তু এই ফেসবুকের ওয়ালটা তো আছে। তাই সকল বন্ধুদের অনুরোধ করব, প্লিজ অন্তত প্রতিবাদ জানিয়ে আপনার ওয়ালে দুকলম লিখুন। একটু আওয়াজ তুলুন। চুপ করে আর কত কাল??
***** দাবী একটাই- এই গল্প যদি সত্যিই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হয়ে থাকে, তবে সেই পুরস্কারের দাবীদার সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ। অন্যথায় কোন মতেই এই পুরস্কার মুরাদের হাতে উঠতে পারবে না। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান নীতিমালার (২১)*** ভঙ্গের দায়ে নীতিমালা (২৪)*** অনুসারে মুরাদের পানিসমেন্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০১