মাজেদা খালা একটা হলুদ পাঞ্জাবী বানিয়ে দিয়েছে। পাঞ্জাবীতে একটা পকেটও আছে। পকেটের কাজ মাজেদা খালার দেওয়া মোবাইলটা সংরক্ষণ করা। মোবাইল যেহেতু একটা পকেটও একটা। পকেট আছে কিন্তু পকেটে কোন টাকা নেই। সকাল দশটা ত্রিশ মিনিট। কিন্তু সকালের নাস্তা হয়নি এখনো। আমার বাবা আমাকে মহাপুরুষ হওয়ার সকল প্রকারের শিক্ষাই দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষুদা দমনের কোন শিক্ষা কেন দিলেন না জানি না। আমি মনে মনে ভাবছি শুধু কাম নয়, ক্ষুধাও তো দমন করতে হবে। না হলে মহাপুরুষ হওয়া যাবে না। কথিত আছে মহাপুরুষরা দীর্ঘদিন ধরে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তখন কি তারা খানা-পিনা করতেন? বিষয়টা একটু খোজ নিয়ে জানতে হবে।
সামনের এই সুবৃহৎ অট্টালিকার নাম দক্ষিন হওয়া। এই বাড়িতে নাম করা এক লেখক থাকেন। নাম হুমায়ুন আহমেদ। রাসভারী লোক। সচরাচর তিনি তার ভক্তদের দেখা দেন না। কিন্তু ইদানীং দিচ্ছেন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে, বাংলালিংক নামের টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি একটা মেলার আয়োজন করেছে। নাম হিমু মেলা। এখানে নানা বয়সের নানা চেহারার হিমুরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে অংশ নেবে। বেটে হিমু, মোটা হিমু, সাস্থ্যবান হিমু, কাক কালো হিমু, দুধ ফর্সা হিমু, ছেলে হিমু, মেয়ে হিমু, ছাত্র হিমু, চাকরিজীবি হিমু সবাই যোগদান করতে পারবে। শুধু বিবাহিতরা বাদে। ঢাকার শহর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এই বিষয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন সময় বাংলালিংকের অফিসারা লেখকের বাসায় হানা দিচ্ছেন । বাংলালিংক থেকে ফর্মালি বলে দেওয়া হয়েছে, যারা লেখকের সাথে মিটিং করতে যাবেন অবশ্যই হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে যাবেন।
দক্ষিণ হওয়ার দারোয়ানটা দেখতে শুনতে মন্দ না। গোলগাল চেহারা, মুখ ভর্তি দাড়ি। ইয়া বড় এক ভূড়ি নিয়ে চেয়ারে বসে আছে। মাঝে মাঝে বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কারো বাড়ির সামনে এরকম ঘন্টা খানিক ধরে বসে থাকাটা সন্দেহজনক। সাধারণত কোন দাবী আদায় করার জন্য এমন ভঙ্গিমায় রাস্তায় বসে থাকা হয়। এই বসে থাকাকে বলা হয় অনসন। আমি অবশ্য রাস্তায় বসিনি। ফুটপাথে বসেছি। আমি মুখে একটু হাসি লেপ্টে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে গেলাম।
: ভাই, আসসালামু আলাইকুম।.....
:ওয়ালাইকুম, কি চাই?
: ভাই, আমার নাম হিমু। হুমায়ুন আহমেদের সাথে একটু দেখা করব।
: কোথা থেকে আসছেন?
: ভাই এটা বলা তো মুস্কিল। মানবজাতি কোথা থেকে এসেছে সে নিজেই জানে না।
: ফাজলামী করেন?
: ভাই, ফাজলামি করব কেন? আপনি কি জানেন আপনি কোথা থেকে আসছেন?
: এপাওয়েন্টমেন্ট আছে?
: কিসের?
: স্যারের সাথে যে দেখা করবেন সেই এপয়েন্টমেন্ট কি আছে?
: না।
: তাইলে ভিতরে যাইতে পারবেন না।
: ওনাকে একটা ফোন দিয়া বলেন। বলেন হিমু আসছে আপনার সাথে দেখা করতে।
: ফোন দেওয়া যাবে না। আপনার মত এমন হিমু প্রতিদিনই আসে। আজাইরা ঝামেলা কইরেন না তো। যান...
: ভাই, ঝামেলা তো করছি না। একটা ফোন দিয়ে আপনি বলেন, আমি আসছি। তিনি যদি চলে যেতে বলে চলে যাব।
: ফোন দেওয়া যাবে না। ইন্টারকমের ফোন নষ্ট।
: তার পরেও একবার চেক করেন। আমার মনে হয় এখন ভালো হয়ে গেছে।
: কি মিয়া উল্টাপাল্টা কথা কন। কইলাম না গত এক সপ্তাহ ধইরা নষ্ট।
: ভাই, শুনেন নাই, নিয়তেই বরকত। আপনি ফোন করার নিয়ত করে ফোন কানে লাগান দেখবেন ঠিক কাজ করবে।
: আজাইরা কথার জায়গা পান না? ভাঁওতাবাজি ছাড়েন। যান মিয়া!!
হটাত ইন্টারকমের টেলিফোনটা বেজে উঠলো। দারোয়ান এমন ভাবে চমকালেন যে দেখার মত বিনোদন। সে ছুটে গেল ফোনটা রিসিভ করতে। কথা শেষ করে এসে আবার আমার সামনে দাড়ালো। এক রাশ বিস্ময় নিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কিছুই হয়নি ভঙ্গিমায় আমি বললাম-
: ভাই যাই তাহলে। ঢুকতে যখন দিবেন না। দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।
দারোয়ানের বিস্ময় যেন আরো বেড়ে গেল।
: ভাই, যাওয়ার আগে আরেকটা কথা জানতে চাই। আপনার নাম কি?
: রহমাতুল্লাহ .....
: ভাই, আপনি তোুসলমান, আপনি কি বলতে পারবেন, নবীজি স: হেরা গুহায় ধ্যান করার সময় কিছু কি খাইছিলেন ?
: মানে?
: কিছু না। থাক, যাই ভাই। আসালামুয়ালায়কুম।......
আমি এসে আবার আগের জায়গায় বসলাম। দারোয়ান হতভম্ভো হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবটা এমন যে পৃথিবীর ৮ম আশ্চার্য দেখছে। (চলবে)
[লিখিবার সামান্য চেষ্টা করিলাম। ভুলচুক ক্ষমা করিবেন। ক্ষমা না করিতে পারিলেও গালি দিবেন না ভাই। কারো হুমায়ূন ভক্তি, হিমু ভক্তি বা কোন প্রকার অনুভূতিতে আঘাত মাগিলে লেখক দায়ী নহে]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪